শেষের পাতা

সিলেটে এক বছরের লড়াইয়ে মৃত্যু ২৯২

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:২২ অপরাহ্ন

সিলেটের এক বছরের করোনা যুদ্ধ। কোনো সুখবর নেই। বরং এক বছরের মাথায় এসে ফের ছোবল বসালো মহামারি করোনা। হাসপাতাল ঠাসা রোগীতে। আইসিইউতে চলছে জীবন-মৃত্যুর লড়াই। চারদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কোথায় যাচ্ছে সিলেট। জীবিকা       
 নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। জীবন নিয়েও শঙ্কায় মানুষ। এরই মধ্যে চলছে লকডাউন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন- গত দু’দিনে সিলেটের করোনা পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা ভালো। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে পারে। ২০২০ সালের ৫ই জুলাই। দেশজুড়ে করোনা নিয়ে উৎকণ্ঠা। সিলেটের পরিস্থিতি ভালো। কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি। এরই মধ্যে এদিনই এলো দুঃসংবাদ। সিলেটে মিললো রোগী। তিনি ডা. মঈন উদ্দিন। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক। এরপর একে একে মিললো রোগীর সংখ্যা। হাসপাতালে শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল। আর এই মিছিলে প্রথম শরিক হলেন সিলেটের গরিবের ডাক্তার বলে পরিচিত ডা. মঈন উদ্দিন নিজেই। এরপরে ঘটনাগুলো আঁতকে ওঠার মতো। হাসপাতালে ঠাঁই হচ্ছিলো না রোগীর। অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছিলো মানুষ। মৃত্যুর এই মিছিলে এসে শরিক হলেন সিলেটের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক, সিলেট-৩ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস সহ আরো অনেকেই। এক বছরে সিলেটেই করোনায় মারা গেলেন ২৯২ জন। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সিলেটে করোনায় মৃত্যুর মিছিল চলেছে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিলেটের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তিতে ছিলেন সবাই। কিন্তু করোনার নতুন ধরন ফের ভাবিয়ে তুললো সিলেটবাসীকে। মার্চের শেষ সপ্তাহে এসে নতুন ধরনের করোনায় কাবু হলো সিলেট। রোগী বাড়তে থাকলো। হাসপাতালে বেড়েছে চাপ। গত দুই সপ্তাহে সিলেটে করোনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। তিনদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০ জন। সবমিলিয়ে এক বছরে সিলেটের করোনা পরিস্থিতির একটুও পরিবর্তন হয়নি। বরং নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে- সিলেট বিভাগে গত এক বছরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৭৯৬ জন। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৩০ জন। এক বছরে মারা গেছেন ২৯২ জন। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি। সিলেটে আক্রান্তের মধ্যে সিলেট জেলায় ১১ হাজার ৪৩ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬৯ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ১৬ জন ও  মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৮৩ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৬৬ জন। এদিকে, সিলেটে আইসিইউতে ঠাঁই নেই। ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা বেশি। এ কারণে জীবন বাঁচাতে আইসিইউতে লড়াই করতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। প্রতিনিয়ত চলছে এ লড়াই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, চলমান ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই বয়স্ক রোগী হলে আইসিইউ সাপোর্ট লাগছে। আর আইসিইউতে নিয়ে গেলে রোগীর অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরানো যায় না। এ কারণে অন্য রোগীদের দ্রুত আইসিইউতে নেয়া সম্ভব হয় না। সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন- করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সব সময় করোনা রোগীদের চাপ থাকে। এখন নতুন করে চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড রয়েছে। সব সময় মুমূর্ষু রোগী থাকে আইসিইউতে। তার হাসপাতালে চিকিৎসকদের মূল লড়াই হচ্ছে আইসিইউকেন্দ্রিক। এদিকে- সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হলেও সেটি ছিল পুরনো হাসপাতাল। ফলে রোগীদের সর্বোচ্চ  সেবা দেয়ার মতো কোনো সুযোগ ছিল না। পরে প্রবাসীদের অর্থায়নে এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থার সংযোগ করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নির্দেশে হাসপাতালে ১৪টি আইসিইউ বেড স্থাপন করা হয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন, সিলেটের চিকিৎসকরা গত এক বছরে করোনার সঙ্গে যে লড়াই করেছেন সেটি প্রশংসনীয়। প্রথমে স্বল্প সুযোগ-সুবিধা থাকলেও চিকিৎসকরা করোনার লড়াইয়ে পিছু হটেননি। বরং চিকিৎসকরা যে শ্রম দিয়েছেন সেটি অতুলনীয়। তিনি জানান, করোনা ব্যবস্থাপনার জন্য সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের একার তরফ থেকে একা করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কিন্তু সমন্বিত উদ্যোগে ঘাটতি ছিল। এই ঘাটতিগুলো শুধরে নিয়ে আগামীতে চললে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা আরো সহজ হবে। তবে- এক বছরের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল। তিনি জানিয়েছেন, যেটুকু করা হয়েছে সেটি নিয়ে আমরা সবাই সন্তুষ্ট। আরো ভালো করতে পারলে ভালো হতো বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status