এক্সক্লুসিভ

লকডাউনে ‘বিস্মিত’ সিলেটের ব্যবসায়ীরা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

৬ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:১২ অপরাহ্ন

সকাল ১০ টার জিন্দাবাজারের শুকরিয়া, লন্ডন ম্যানশন, ব্লুওয়াটার সহ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা লকডাউনের মধ্যেও ছুটে এসেছিলেন মার্কেটের সামনে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে তাদের এই আসা। কিন্তু মার্কেটের সামনে এলে তারা দোকান খোলেননি। শুকরিয়া মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানালেন- যে লকডাউন চলছে সেটি দেখে মনে হচ্ছে; লকডাউন কেবল মার্কেট কিংবা বিপনি বিতানের জন্য করা হয়েছে। অন্যসব খোলা। রাস্তায় চলছে যানবাহন। অফিস-আদালতও চলছে। ব্যাংকেও হচ্ছে লেনদেন। শুধুমাত্র মার্কেট বন্ধ। এই লকডাউন দেখে তারা হতাশ হয়েছেন। সিলেটের লকডাউন নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই শুকরিয়া মার্কেটের মতো আরো কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের। সামনে রমজান। এরপর ঈদ। বছরঘুরে আসে একটি ঈদ। এই ঈদের প্রস্তুতি ব্যবসায়ী সারেন রমজানের আগেই। কিন্তু লকডাউনের কারণে ঈদের প্রস্তুতি সারতে পারছেন না। গতবারও একইভাবে কেটেছে ব্যবসায়ীদের। লকডাউনের কারণে এই সময়েও ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিতে পারেননি। রমজানে খুলতে পারেননি দোকান। এ কারণে এবারের লকডাউনের আগে সিলেটের ব্যবসায়ীরা সরব হয়েছিলেন। লকডাউন না দিতে তারা সভা করে দাবি জানিয়েছিলেন। চিঠি দিয়েছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসককে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উল্টো সিলেট চেম্বার  নেতৃবৃন্দ ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকে নিয়ে লকডাউনে দোকান বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে। এতে রাজি হয়েছিলেন সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু গতকালের লকডাউন দেখে তারা হতাশ হয়েছেন। সিলেট জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ মকন মিয়া মানবজমিনকে জানিয়েছেন- অনেক ব্যবসায়ী এই লকডাউন মানতে চাচ্ছেন না। এ নিয়ে তারা ব্যবসায়ী নেতাদের চাপের মধ্যে  রেখেছেন। আর সিলেটের লকডাউনের ধরন দেখে ব্যবসায়ীরা বিস্মিত হয়েছেন। গতবার ছিল সত্যি সত্যি লকডাউন। এবারের লকডাউন মনে হচ্ছে শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের জন্যই। তিনি জানান- অনেক ব্যবসায়ী লকডাউন মানতে চাচ্ছেন না। তারা যদি আজ থেকে মার্কেটে বসেন তাহলে জরিমানা করা হবে। এতে পরিস্থিতি জটিল হবে। বিষয়টি নিয়ে সিলেটের ব্যবসায়ী নেতারা গভীরভাবে চিন্তিত বলে জানান তিনি। সিলেট হচ্ছে মার্কেটের শহর। নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার পুরোটাই মার্কেট। এরপর রয়েছে পূর্ব, পশ্চিম জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেলরোড, কুমারপাড়া রোড, নয়াসড়ক এলাকা, বন্দরবাজার এলাকার পুরোটাই হচ্ছে মার্কেট। এসব মার্কেটে রয়েছে অর্ধলাখের মতো ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন- লকডাউন ঘোষণার পর সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতারা সভা করে লকডাউন না দেয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এরপর সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব রোববার সিলেট চেম্বারে ব্যবসায়ী নেতাদের ডেকে নেন। এ সময় তিনি সহ চেম্বার নেতারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব দোকান-পাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ও যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করার আহ্বান জানান। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ আরো বলেন- পবিত্র রমজান মাস ও ঈদুল ফিতর আসন্ন- এ সময়টা ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর ধরে সিলেটের ব্যবসায়ীরা এ সময়ের অপেক্ষায় থাকেন। তাই লকডাউন যেন এক সপ্তাহের বেশি বৃদ্ধি করা না হয়  সেজন্য তারা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। আর যদি অনিবার্য কারণে বৃদ্ধি করা হয় তাহলে জেলাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা এবং ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দোকান-পাট খোলা রাখার অনুরোধ জানান। কিন্তু গতকালের লকডাউনের ধরন দেখে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এই লকডাউন ব্যতিক্রমী। এখানে কেবল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত এক বছরে সিলেটের ব্যবসায়ীরা করোনায় লকডাউন সহ নানা কারণে কোটি কোটি টাকার লোকসান করেছেন। অনেকেই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত। করোনাকালীন সময়ে প্রণোদনা পাননি ব্যবসায়ীরা। এবার অনেক কষ্টে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। এরই মধ্যে লকডাউন আবার ব্যবসায়ীদের পথে নামিয়ে দিচ্ছে। তিনি জানান- লকডাউনের সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা আগামীকাল জরুরি সভার আহ্বান করেছেন। ওই সভা থেকে সিদ্ধান্ত  নেবে সিলেটের ব্যবসায়ীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status