শেষের পাতা

চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই তরুণ

নূরে আলম জিকু

৫ এপ্রিল ২০২১, সোমবার, ৯:৫১ অপরাহ্ন

কয়েকদিন ধরে গায়ে জ্বর। কখনো বাড়ে, কখনো কমে। ওষুধ খেয়েও সুস্থ হইনি। ৩/৪ দিন ধরে গলাব্যথা আর কাঁশি। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে করোনা টেস্ট করাতে হাসপাতালে এসেছি। নমুনা দেয়ার জন্য লাইনে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম। হাত পা কাঁপছে। তাই গেটে এসে বসলাম। এখন লাইনে আমার মেয়ে অপেক্ষা করছে। শত শত মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছে। আজ নমুনা দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। নাকি টেস্টের আগেই বিদায় নিতে হয় জানা নেই। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের প্রবেশ মুখে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেছিলেন ৩৫ বছর বয়সী আমিন উদ্দিন। কথা হলে তিনি জানান, ভোর ৬টার দিকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালের গেটে দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকিট মিলে। টিকিট নিয়ে করোনা টেস্টের টাকা জমা দিয়ে নমুনা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করেছেন। হাসপাতালে রোগীদের উপস্থিতি অনেক বেশি। তাই নমুনা পরীক্ষায় এসে সবাইকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।
গতকাল সকালে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, করোনা টেস্ট করতে ভিড় করছেন রোগীরা। নমুনা টেস্ট নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। নমুনা দিতে দেরি হওয়ায় বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরা। এতে তারা সংক্রমিত হওয়ার ভয় পাচ্ছেন।
হাসপাতালে টেস্টের জন্য আসা অর্ধেকের বেশি তরুণ। করোনা হাসপাতালে প্রতিদিন শত শত রোগী আসা-যাওয়া করায় সংক্রমিত হওয়ার ভয় কাজ করছে স্বজনদের মধ্যে। তবে করোনার নমুনা টেস্টের ভোগান্তি দেখে অনেকেই ফিরে গেছেন। এদিকে, হাসপাতালের প্রবেশ মুখে অপেক্ষা করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। কেউ হাসপাতালে ঢুকছেন, অনেকেই বাহিরে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের প্রবেশ মুখ থেকে ফিরে যাচ্ছেন।
আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার লক্ষণ নিয়ে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করে অনেকের রেজাল্ট নেগেটিভ আসছে। কেউ কেউ নমুনা দেয়ার ১/২ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো মেসেজ পাননি। তাই রেজাল্ট জানতে হাসপাতালে ভিড় করছেন।
রাজধানীর বনশ্রী থেকে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সালাউদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, তার শরীরে জ্বর ছাড়া করোনার কোনো লক্ষণ নেই। কয়েকদিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন। এরপর ২ দিন পর তার এক বন্ধুর করোনা পজেটিভ আসে। সেই ভয় থেকে করোনা টেস্টের জন্য মুগদা হাসপাতালে আসছেন তিনি। তিনি বলেন, এখানে এসে দেখি টেস্টের জন্য আরো অনেকে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের বেশির ভাগই যুবক। রোজিনা নামের এক নারী বলেন, তিনি শুক্রবার হাসপাতালে নমুনা টেস্টের জন্য আসেন। তবে সেদিন লোকসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় টেস্ট করাতে সক্ষম হননি। আজ তার দুই ছেলেসহ নমুনা দিবেন। তার মতো ছেলের শরীরেও করোনার উপসর্গ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালে আসা বেশির ভাগই তরুণ। এতে বয়স্করা ঠিকমতো নমুনা দিতে পারছেন না।
রিপন নামের এক তরুণ জানান, সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা টেস্টের জন্য গেছেন। সেখানে করোনা টেস্ট করতে না পেরে দুপুরে মুগদা হাসপাতালে আসছেন। এখানে এসে করোনা টেস্ট করাতে পারছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানিয়েছে, সোমবার সকালে আসার জন্য। নাঈমুল ইসলাম নামের একজন বলেন, কয়েকদিন ধরে দেশে করোনার সংক্রমণ বেশি। তাই অনেকের মধ্যে ভয় কাজ করছে। হাসপাতালের গেটে বহির্বিভাগের টিকিট প্রত্যাশীদের বেশির ভাগই তরুণ। তাদের অনেকেই একাকী করোনা টেস্ট করাতে আসছেন। আবার অনেক রোগী গুরুতর অসুস্থ থাকায় স্বজনরা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। করোনা টেস্টের জন্য ভোর রাত থেকে লাইনে অপেক্ষা করছেন তারা। টেস্টের জন্য এখন যেভাবে হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে, কয়েকদিন আগেও মানুষের এমন উপস্থিতি ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাগ বলেন, হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করতে আসা সব বয়সী রোগীর উপস্থিতি রয়েছে। আমরা দৈনিক ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারি। সরকার আশেপাশে আরো কয়েকটি নমুনা টেস্টের সেন্টার বাড়ালে চাপ অনেকটা কমে আসতো। জনগণ কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়া নমুনা দিতে পারতো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status