বই থেকে নেয়া

মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৩)

‘নিজেকে খাঁচায় বন্দি অসহায় জীবের মতো মনে হচ্ছিল’

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

অবশ্য শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার এড়ানো সম্ভব হয়নি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পায়ে হেঁটে দীর্ঘ রাস্তা অতিক্রম করে প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে এলাম। সেখান থেকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে গেলাম। এই হলটি তখন ছিল ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয় ছাত্রদের প্রাণকেন্দ্র। পুলিশ যাতে হলের ছাদে উঠে উত্তোলিত কালো পতাকা নামিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত ছাত্র হলের প্রবেশপথে শুয়ে পড়ে পুলিশকে বাধা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরো ছাত্ররা চারদিক থেকে দলে দলে এসে হলের ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিলে সেখানে উত্তেজনা বাড়তে থাকে ।
সবাই ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে পরিবেশকে মুখরিত করে তুলছিল এবং হলের প্রবেশপথে শুয়েপড়া ছাত্রদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হলের জনপ্রিয় প্রভোস্ট ড. ওসমান গনি ছাত্রদের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেন এবং পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্টকে হলে ঢুকতে নিষেধ করে দেন। ছাত্ররা এ সিদ্ধান্তকে নিজেদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে ধরে নিয়ে আরো উৎসাহিত হয় এবং নিজেদের সংঘবদ্ধ করে। এরপর প্রত্যেকটি ছাত্র সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের আমতলায় জড়ো হয় ও একত্রে পাঁচজনের বেশি সমাবেশের ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই মিছিল শুরু হওয়ামাত্র পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ বাধে। এই প্রক্রিয়ায় ১১০ জন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভ্যানে করে পাঠিয়ে দেয় প্রথমে লালবাগ থানায়, তারপর কেন্দ্রীয় কারাগারে। এদের মধ্যে বোধহয় সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলাম আমি নিজে। প্রায় একমাস আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলাম।
১৯৫২ সালের একই দিনের আরেকটি রক্তাক্ত স্মৃতির কথা আমার মনে পড়ে। সেদিন আমার শার্ট রঞ্জিত করেছিলাম বরকতের রক্তে। পুলিশের গুলিতে বরকত নিহত হন আমারই চোখের সামনে। সেদিন আমি ছিলাম নবম শ্রেণির একজন তরুণ স্কুলছাত্র। আন্দোলনে যোগ দিতে আমি গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে, ঠিক যেখানে আজ নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে আবার বাস্তবে ফিরে আসতে হলো।
আমি তখন প্রচ-ভাবে ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত। অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে পুরু ইস্পাতে মোড়া দরজা বন্ধ অবস্থায় কারো সঙ্গে যোগাযোগের কোনো উপায় ছিল না। কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি বেশ কয়েকবার দরজায় আঘাত করেও ব্যর্থ হলাম। এভাবে অপেক্ষা করতে করতে বিকাল ৫টা বেজে গেল। ইতিমধ্যে ঘরের কোণে রাখা মগটাতে আমি দু’-একবার প্রস্রাব করেছিলাম। একবার ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মোরারজী দেশাইর মতো কথিত প্রস্রাব পানের মাধ্যমে তৃষ্ণা নিবারণের চিন্তাও আমার মাথায় আসে, যদিও দেশাইবাবু তা করেছিলেন চিকিৎসাগত কারণে। এ কথা মনে করেই আমার বমির উদ্রেক হলো, কিন্তু পেটে কিছু না থাকায় শেষ পর্যন্ত আর বমি হয়নি। প্রস্রাবের কটুগন্ধ ছোট্ট ঘরটাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পর জানালার কয়েকটি ছিদ্র দিয়ে বাইরের এক ঝলক আলো প্রবেশ করাতে আমি ছোট ঘরটাকে একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেলাম। মানুষের ঘর না বলে বোধহয় এই ঘরটাকে বইয়ে পড়া কোনো এক মেষপালকের ঘরই বলা যেতে পারে। এ সময় দরজা খোলার আওয়াজ হলো এবং দু’জন লোক ভেতরে ঢুকলো। একজনের এক হাতে অ্যালুমিনিয়ামের একটা বাটিতে সামান্য ভাত, ডাল ও ভাজি; অন্য হাতে একটা টিনের গ্লাসে পানি। আরেকজনের সঙ্গে ছিল সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমার সঙ্গে আনা ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের একটা ব্যাগ। জিনিসগুলো মেঝেতে রাখার সময় নিচুস্বরে বললো, “এরা সব হারামজাদা। আটকে রাখা মানুষের উপর এরা যে অবর্ণনীয় অত্যাচার করছে। মহান আল্লাহ্ এই অত্যাচারের জন্য তাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না। এ বিল্ডিংয়ে আপনার মতো আরো নয়জনকে রাখা হয়েছে এবং সবার উপরে অমানুষিক নির্যাতন চলছে। এরা পশুর চেয়েও অধম। মানুষকে না মেরে ফেলে তারা কেবল অত্যাচার করছে যাতে করে মৃত্যুর চেয়েও তারা বেশি যন্ত্রণা পায়।” অন্যজন অভিযোগ করলো, “রাজনীতিবিদেরা অনর্থক ছোট্ট এই দেশে এই বিশাল সেনাবাহিনীর ভরণ-পোষণের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ থাকে অনাহারে আর বিনা চিকিৎসায়, সেখানে অযথাই এই বিশাল অর্থব্যয়।” সে আমাকে মনোবল ঠিক রাখার পরামর্শ দিলো এবং ভবিষ্যদ্বাণী করলো যে, এদের শাসনকাল অতিদ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। স্পষ্টভাবেই এরা ছিল অসামরিক কর্মচারী এবং তাদের কথাতে আবেগ ছিল। এদের নাম ছিল লিয়াকত ও কবির; নিজেরাই পরিচয় দিলো।
ওরা চলে গেলে খাবারের দিকে তাকালাম। খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য। মেঝেতে রাখা টিনের মগে পানি মনে হলো দেখারও অযোগ্য। ভাবলাম এ পানি খেয়ে অসুস্থ হবো, নাকি তৃষ্ণায় মারা যাবো, এর কোনটা করবো? শেষ পর্যন্ত তেলাপোকারা খাবারটা খেয়ে ফেলার আগেই সেটা খেয়ে ফেলতে মনস্থির করলাম। সবগুলো খাবার খেয়ে চোখ বন্ধ করে শেষ পর্যন্ত পানিটুকুও খেয়ে নিলাম। তেলাপোকাগুলো হাল ছেড়ে দেয়নি। ঘরের এককোণে বাটিটা রাখামাত্র তারা সেটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খাবারের শেষাংশটুকুর স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এ সময় আবার দরজা খোলার শব্দ পেলাম। লিয়াকত আর কবির এলো। লিয়াকত খাবারের বাটি ও টিনের গ্লাসটা নিয়ে গেল, কিন্তু প্রস্রাবের মগটা পরিষ্কার করলো না। সেটা নাকি পরে মেথর এসে পরিষ্কার করবে। আর কবির বললো তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে। অফিসাররা এসেছে এবং ওরা আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। সাথে সাথে সে অকথ্য ভাষায় কিছুক্ষণ সেই অফিসারদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ করতে থাকলো। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম । কিন্তু সে ছিল ভাবলেশহীন।
আবার কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে দেওয়া হলো আমার দু’চোখ। তারপর ঘর থেকে বের করে আবার সেই একচিলতে গলিপথ পার হয়ে একটা রুমে এনে আমাকে একটা টুলের ওপর বসানো হলো। পূর্বকথিত সেই একই প্রশ্ন, একই ধমকি, ধমক-ধামক এবং রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে একই রকমের বিষোদগার। আমার ধারণা, তারা ছিল কমপক্ষে তিনজন এবং সম্ভবত আগের সেই একই টিম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে, বন্দিদের অত্যাচার করার জন্য ব্যবহৃত উচ্চ পাওয়ারের লাইটবাল্ব দিয়ে ঘরটিকে তাতিয়ে রাখা হয়েছে। বারবার আশঙ্কা হচ্ছিল যে, প্রশ্ন করার মাঝখানে একসময় হয়তো আমার চোখের বাঁধন খুলে বাতির সেই উজ্জ্বল আলোয় আমার দু’চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়া হবে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তা করলো না। আগের মতোই তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলো। “আপনি রাজনীতি করেন কেন?” হঠাৎ তাদের একজন প্রশ্ন করে। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল, পাল্টা জবাব দেই-আপনি কেন সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন? কিন্তু নিজেকে সংযত রাখলাম। আমার ভয় হচ্ছিল, এমন প্রশ্ন করলে ক্ষেপে গিয়ে আমাকে তারা মারধর শুরু করতে পারে। ভাবছিলাম তাদের প্রশ্নের উত্তরে কী বলা যায়? কিন্তু প্রশ্নকারী ইতিমধ্যে অধৈর্য হয়ে উঠে চড়াগলায় আবারও একই প্রশ্ন করলো। গভীরভাবে চিন্তা না করেই আমি বললাম, “রাজনীতি হলো এক ধরনের ভাবাবেগ, অন্তর থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উঠে আসা এক ধরনের অভিব্যক্তি, অন্যের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হতে উদ্বেলিত হওয়ার এক ধরনের চালিকাশক্তি। রাজনীতি হলো আমাদের চারপাশে বিরাজমান পরিস্থিতি, চারপাশের জনগণকে নিয়ে চিন্তা করার সহজাত প্রবণতা, জনগণের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে এমন সব সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করার এক নৈর্ব্যক্তিক আত্মচিন্তা। রাজনীতি হলো আত্মজিজ্ঞাসার এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা-ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের এক অনন্য সাধারণ পুঞ্জীভূত সংমিশ্রণ।”
কিন্তু ওরা আমার বক্তব্যে খুশি হলো না। একজন বললো, “রাজনীতিবিদদের সবাই চোর। শুধু টাকার জন্য তারা রাজনীতি করে।” এক ধরনের ভয় পেলাম, তারপরও জবাব দিলাম, “না, এটা সবার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয়। খাঁটি রাজনীতিবিদেরা টাকার কথা চিন্তা করে না বরং অনেক ধরনের স্বার্থত্যাগই করে থাকেন।” আমার জবাব শুনে তারা সবাই একসঙ্গে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তখন আমার নিজেকে খাঁচায় বন্দি একটি অসহায় জীবের মতো মনে হচ্ছিল।”
“আপনার কাছে কত টাকা আছে?” একজন জিজ্ঞেস করলো। “আপনি অনেকবার প্রশাসনে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ও ভাইস-প্রেসিডেন্টের মতো উচ্চপদে আসীন ছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি অজস্র টাকা কামিয়েছেন।” একবার মনে হচ্ছিল সামনা-সামনি ওদের মুখে একটা জুতার বাড়ি মেরে দেই। কিন্তু সে পরিস্থিতিতে আমি ছিলাম একেবারেই নিরুপায়। “আপনারা আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সিল করে দিয়েছেন, সমস্ত কাগজপত্র জব্দ করেছেন। কাজেই আমার কতো টাকা-পয়সা আছে তার সব হিসাবই তো আপনাদের কাছে রয়েছে।” খুব সাধারণভাবে জবাব দিলাম । “কিন্তু ব্যাংকে কত টাকা আছে সে কথা আমরা জিজ্ঞেস করছি না। আমরা জানতে চাইছি। কত টাকা আপনি অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন।” বললাম, “আমার বা আমার পরিবারের কারো কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। আমার কোনো শেয়ার বা স্টকে ইনভেস্টমেন্ট নেই, কোনো ব্যবসায়ে আমার গোপন কোনো পার্টনারশিপও নেই।” আমার কাছে আশ্চর্য লাগছিল, ওদের কাছে যদি আমার গোপন কোনো অর্থের উৎসের কথা জানা থাকলে বারবার তা আমাকে জিজ্ঞেস করছে কেন? আমি বললাম, “আমাদের সম্পত্তির মধ্যে শুধু আছে আমার নিজস্ব একটা বাড়ি। এটা তৈরি করা হয়েছে ১৯৭৬ সালে। আমি সরকারে যোগ দেওয়ার অনেক আগে। এই বাড়ির ভাড়া দিয়ে এরই মধ্যে দু’টো ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। এই সবকিছুই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে দেয়া আছে।”
“সাভারে আপনার ৩০০ বিঘা জমি আছে”, একজন বললো। আমি জবাব দিলাম, “সাভারে আমার জমি আছে মাত্র তিন বিঘা। ১৯৭৪ সালে আমি কিনেছি। প্রতি বিঘা তিন হাজার টাকায়। আমি জানালাম, যদি আরো জমি থেকে থাকে তাহলে আমি আনন্দের সঙ্গে তা ওদের নামে লিখে দিতে রাজি আছি এবং ওরা তা নিয়ে নিতে পারে। কিন্তু এতে ওরা সন্তুষ্ট হয়েছে বলে মনে হলো না। আমি বুঝতে পারলাম যে, আসলে ওদের কাছে বাস্তব কোনো তথ্য নেই। বরং নিজেদের অনুমানসিদ্ধ ধারণার উপর ভিত্তি করে ওরা কাল্পনিক কিছুর পেছনেই ছুটছে। অফিসারেরা এবার বিদায় হলো। তবে যাবার আগে আমাকে কড়াভাষায় হুমকি দেওয়া হলো- যাতে আমি সারা রাত এ নিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্তে আসি এবং আমার আসল গোপন সম্পদের কথা ওদের পরদিন সকালে জানিয়ে দেই। অন্যথায় তারা আমার গা  থেকে চামড়া তুলে নেবে।
এরপর আমাকে আবার ফিরিয়ে আনা হলো সেই পুঁতিগন্ধময় অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। অন্ধকার রাতে ঘোলাটে একটা বাতির আলোয় তখন ঘরটাকে ভীষণ নোংরা ও জরাজীর্ণ বলে মনে হচ্ছিল তবে এবার ঘরটাতে আমার আরো কিছু সঙ্গী পেলাম। টিকটিকি ও তেলাপোকার দেখা পেয়েছিলাম আগেই, এবার তার সঙ্গে যোগ হলো কয়েকটা ইঁদুর। আরো দেখা গেল অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে একটা সরু লাইনে স্বাধীনতা দিবসে মার্চরত সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল পিপীলিকার একটা সারি। আর ছিল মশা, তারা জোরেশোরে তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে চলছিল। কোনো কোনোটা আবার কানের কাছে বিকট পোঁ পোঁ শব্দ তুলে আমার উপর সহসা আক্রমণের সতর্ক সংকেত দিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল আমাকে ঘিরে যেন তাদের একটা মহোৎসব চলছে। কোনোরকম মশারি, মশার কয়েল বা স্প্রে ছাড়া অবস্থায় আমি ছিলাম তাদের জন্য এক সহজ ও উপাদেয় ভোগ্যবস্তু । আসলে আমার ভয় হচ্ছিল সেই বিশেষ ধরনের মশার, যার কামড়ে আমি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি। সেই আধো অন্ধকারে সেই রকম বিশেষ কোনো ধরনের মশাকে শনাক্ত করা বাতুলতা। রাত যতো বাড়তে থাকে মশাগুলোও ততো বেশি মারমুখো ও বেপরোয়া হতে থাকে। একেকবার মনে হলো, আমার এই অর্ধভগ্ন রুগ্ণ শরীরের রক্তে তারা কী ধরনের স্বাদ খুঁজে পাচ্ছে? মিষ্টি, তেতো, না টক? নাকি ঝাঁঝালো ঝাল? হয়তো কিছুই না। একেবারে স্বাদবিহীন। এদের সঙ্গে লড়াই করার কোনো ক্ষমতা আমার ছিল না। তবে চরম হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় যতটুকু সম্ভব আত্মরক্ষার জন্য যথাসম্ভব প্রস্তুতি নিতে থাকি। ব্যাগ থেকে লুঙ্গি ও বুকখোলা একটা শার্ট নিয়ে আমি প্রতিদিনের অভ্যাসমতো রাতে ঘুমানোর পোশাক পরলাম। তারপর চৌকিতে বসে মাথা নিচু করে পা দু’টো ক্রস করে লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে দিলাম আপাদমস্তক। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে আমার দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসলো। উঠে বসলাম ও পরপর খানিকটা বিরতি দিয়ে আরো কয়েকবার একই কায়দার পুনরাবৃত্তি করলাম। মনে পড়লো আমার তের বছর বয়সে সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়কার টিচার গাঙ্গুলী স্যারের কথা। তিনি প্রায় সময়ই একটা কথা বলতেন যে, “প্রয়োজনই হলো যে কোনো আবিষ্কারের সূতিকাগার।” Necessity is the mother of invention- কিন্তু আমার বেলায় এবার কোনো আবিষ্কারই ঠিকমতো কাজ করেনি। আমি আর কোনো বিকল্প খুঁজে পেলাম না। গোটা ব্যাপারটাই আমার একটা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হতে লাগলো।

(চলবে..)

আরও পড়ুন-
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (১)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (২)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৪)
মওদুদ আহমদ যখন রিমান্ডে (৫)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status