মত-মতান্তর

ওরা কি অন্য গ্রহের?

শামীমুল হক

১১ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

সে যে অমানুষ এটা নিশ্চিত। মানুষ রূপে এক হায়েনা। পশুরও তো দয়া-মায়া আছে। কিন্তু ওর? না! এক নির্দয়, নিষ্ঠুর হৃদয় তার। পাষাণ প্রাণ। হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসায় আট বছর বয়সী এক শিশু ছাত্রকে বেধড়ক পিটুনির ভিডিও দেখে মন অস্থির হয়ে উঠে। হৃদয়টা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন জাগে মানুষ কি এমন হতে পারে? ভিডিওতে দেখা যায়, মাদ্রাসার শিক্ষক ওই শিশু ছাত্রকে ঘাড় ধরে বাইরে থেকে নিয়ে যায় তার রুমে। সেখানে নিয়ে তাকে বেধড়ক মারতে থাকে। আর বলতে থাকে আর বাইরে যাবি? শিশুটি চিৎকার করে বলছে আর বাইরে যাবো না। তারপরও একনাগাড়ে তাকে প্রহার করতে থাকে। সে কি মার। যেকোনো মানুষ এ দৃশ্য দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারবে না। এটা নিশ্চিত। হেফজ বিভাগের ওই শিক্ষার্থীর দোষ ছিল বাইরে যাওয়া। আচ্ছা বলুন তো? এটা কি কোনো দোষ হলো? গত মঙ্গলবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। আর সন্ধ্যায় মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলে রাতেই ওই শিক্ষককে হাটহাজারী সদরের মারকাজুল ইসলামিক একাডেমি থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর এ শিক্ষক নামধারী হায়েনার নাম ইয়াহিয়া।    
ঘটনাটা আসলে কি? হেফজ বিভাগের ওই শিশু ছাত্র ইয়াসিন ফরহাদকে দেখতে মঙ্গলবার বিকালে তার বাবা-মা মাদ্রাসায় আসেন। তারা চলে যাওয়ার সময় ইয়াসিন তার মায়ের কাছে ছুটে যায়। মা তখন মাদ্রাসার বাইরে। শিক্ষক এ অপরাধেই তাকে বাইরে থেকে ঘাড় ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে মারধর শুরু করেন।
ওদিকে এই ভিডিও ভাইরাল হলে হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের মারকাজুল কোরআন ইসলামিক একাডেমিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ইয়াহিয়াকে আটক করে। তবে ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মা অভিযুক্ত ওই মাদ্রাসা শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন মর্মে লিখিত দেন। এ জন্য প্রশাসন এ ঘটনায় দোষী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। রাত ১২টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই মাদ্রাসায় যান। অভিযুক্ত শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন। তাকে হাটহাজারীর কোনো মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেয়ারও নির্দেশ দেন তিনি। ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য তিনি শিশুটির মা-বাবাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শিশুটির মা-বাবা মামলা করতে রাজি হননি।
প্রশ্ন হলো সামান্য এ ঘটনায় এমনভাবে মারধর করতে হবে? কোন্ বইয়ে এটা লেখা আছে? বিশেষ করে বহু আগেই সরকারিভাবে পরিপত্র জারি হয়েছে, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠাতে বেত ব্যবহার করা যাবেনা। শিক্ষার্থীদের প্রহার করা যাবেনা। তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেতের ব্যবহার হয় কীভাবে। কিংবা এমন হায়েনারা কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি পায়। যাদের কাছে শিশু শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। আরো একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। করোনাকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও বন্ধ। তাহলে মাদ্রাসাগুলো কীভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য কি বাংলাদেশের আইন অকার্যকর। নিয়মকানুন কোনো কিছুই তাদের জন্য নয়। নাকি করোনা মাদ্রাসাগুলোতে যেতে ভয় পাচ্ছে। এর কি কোনো উত্তর আছে কারো কাছে। আরো একটি প্রশ্ন-মাদ্রাসাগুলো প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষা নাকি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যদি এসব মন্ত্রণালয়ের অধীনেই হয়ে থাকে তাহলে তো মাদ্রাসা বন্ধ থাকার কথা। কারণ কোনো মন্ত্রণালয়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে পরিপত্র জারি করেনি। তাহলে কিসের বলে তারা মাদ্রাসাগুলো করোনাকালে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। নাকি তারা বাংলাদেশ নয়, অন্য গ্রহের বাসিন্দা? আর সেই গ্রহের নিয়মে চলছে তারা?
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status