অনলাইন

বদলে যাওয়া কিছু কিশোরের গল্প

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি থেকে

৯ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

২০১৯ সালের শুরুতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু স্থানের মতো জাহাঙ্গীরনগর সংলগ্ন এলাকায় কিছু কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখা দেয়। অজানা প্রেমিকা নিয়ে বারবার মারামারিতে লিপ্ত হয় এই কিশোররা। উচ্চগতিতে বাইক চালানো, দলবদ্ধ হয়ে অপরদল হুমকি ও মারধর, ক্লাস ফাঁকি দেয়া এসব ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব কিশোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আমবাগান, কলাবাগান, রাঙামাটি ও ইসলামনগর এলাকার বাসিন্দারা। এই কিশোরদের কেউ কেউ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তান। কারো কারো বাবা-মা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। কিন্তু সন্তানদের বকে যাওয়া নিয়ে অনেকের উদ্বিগ্নতা ছিল না।

সেসব বেপরোয়া জীবনের দিকে ধাবিত হওয়া কিশোরদের প্রায় সকলে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কিশোরদের গ্যাং কালচার নিয়ে ওয়াকিবহাল থাকলেও নিজের অসহায়ত্বের কথা জানান।

এসব পরিস্থিতি নিয়ে ২০১৯ সালের ২রা মার্চ দৈনিক মানবজমিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয় ‘জাবি সংলগ্ন সক্রিয় তিন কিশোর গ্যাং’। সে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন তিনটি সক্রিয় কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার খবর। এসব কিশোরের বিপজ্জনক কাজ ও পরিকল্পনার খবর প্রকাশ হলে টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কিশোরদের অভিভাবকদের। স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বসা হয় কিশোরদের অভিভাবকদের নিয়ে। সেই সাথে এলাকাবাসীও সজাগ হয়ে উঠে উঠতি কিশোরদের বিপদগামিতা নিয়ে। স্থানীয় এলাকার অভিভাবক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সচেতন হয়ে ওঠায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কমে যায়। কিশোররা ফিরে যায় সুস্থ স্বাভাবিক নির্মল জীবনে।

তবে মানবজমিনের প্রতিবেদনে একেবারে বদলে দিয়েছিল আমবাগান কেন্দ্রিক বড় কিশোর দলের জীবন। নিজেদের মধ্যে মারামারি ও অশুভ প্রতিযোগিতা ছেড়ে তারা ব্যস্ত হয়ে উঠে সমাজকর্মে। করোনাকালে নানাভাবে এলাকাবাসীকে সতর্ক করার উদ্যোগ নেয় এই কিশোররা। সেই সাথে বৃক্ষরোপণ, মানবতার দেয়াল চালু সহ নানা সামাজিক কর্মকা- চালু করে। অভিভাবকদের সহযোগিতায় গড়ে তোলে ‘ব্রাদারহুড এতিম তহবিল’। সেখানে এতিম শিশুদের পড়াশোনা ও নানা ধরনের আর্থিক সহযোগিতা করা হয়। সেই সাথে খেলাধুলা ও পারস্পরিক সৌহার্দে কাটছে তাদের অবসর।


 যোগাযোগ করা হলে আমবাগানের কিশোর ফারভিদ মিরাজ বলেন, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে দৈনিক মানবজমিনে কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। আমরা ছোটো থেকেই একতায় বিশ্বাসী ছিলাম। আমাদের ভালো কিছু পরিকল্পনা থাকলেও আমাদের সঙ্গে কিছু উগ্র ছেলেরা যুক্ত হয়ে যায়। যার কারণে কয়েকটি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ি আমার। অনেক চেষ্টা করেও অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে পারছিলাম না। সংবাদটি প্রচার হওয়ার পর সবাই বেশ আতঙ্কিত হয়। আমরাও বুঝতে পারি আমাদের ভুলগুলো কোথায় ছিলো। তারপর ধীরে ধীরে আমরা অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করতে সক্ষম হই এবং ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে আমরা ‘ব্রাদারহুড এতিম তহবিল’ গড়ে তুলি। বর্তমানে আমরা ৭ জন দুস্থ শিশুকে একটি মাদ্রাসায় এক বছর যাবৎ পড়াচ্ছি যাদের সবাই ক্যাম্পাসে চা-বাদাম বিক্রি করে। এছাড়াও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই সমাজে আর কোনো কিশোর গ্যাং তৈরি না হোক। আমাদের মতো কিশোররা চাইলে এই সমাজ এবং দেশ বদলে ভূমিকা রাখতে পারে। দৈনিক মানবজমিনের  সংবাদটি আমাদের জীবনের মোড়ই বদলে দিয়েছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status