শেষের পাতা

বিএনপি’র ৭ই মার্চের আলোচনা সভায় বক্তারা

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

৮ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৯:৩২ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ৭ই মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তারা এ অভিযোগ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৭ই মার্চ তো একটা দিন। ২৬শে মার্চ আরেকটা দিন। কিন্তু এর আগে দীর্ঘকাল ধরে এই দেশের মানুষ স্বাধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছে। এই যুদ্ধ এক-দুই-তিন দিনের নয়। বৃটিশদের বিরুদ্ধে এই দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। পাকিস্তান হওয়ার পর থেকে তাদের বৈষম্যমূলক চিন্তা-ভাবনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে মানুষ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে রুখে দাঁড়িয়েছে আমাদের ছাত্ররা। এইভাবে এই দেশের ছাত্রছাত্রী, তরুণরা তাদের অধিকারের জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই ইতিহাসগুলো থেকে বঞ্চিত করে একটা ভ্রান্ত ইতিহাস দিচ্ছে। একটা ধারণা দিচ্ছে যে একটিমাত্র দল, একজন ব্যক্তি, একটাই গোষ্ঠী এই দেশের সবকিছু এনে দিয়েছে। সব স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। আমরা সত্যটা তুলে ধরতে চাই। কারা এই দেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে, সংগ্রাম করেছে।  

তিনি বলেন, আজকের যারা তরুণ প্রজন্ম, তাদের প্রকৃত ইতিহাস জানার অধিকার রয়েছে। আজকে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটে সত্যকে সম্পূর্ণভাবে একটা দলীয় ঘটনা বলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে এই দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং দায়িত্বশীল দল হিসেবে ও স্বাধীনতার ঘোষকের দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব মনে করেছি মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার অর্থে যে ইতিহাস তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলা ধরা।
স্বাধীনতা কি একা আওয়ামী লীগের- প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা কি কোনো ব্যক্তির? স্বাধীনতা সমগ্র দেশের। এই স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে আমাদের হাজার-হাজার তরুণ, যুবক, কৃষক, ছাত্র-ছাত্রী। এই স্বাধীনতার আমাদের মা-বোনেরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। সুতরাং এটাকে ধরে স্বাধীনতার যে ইতিহাস সেটাকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে বিএনপি এই প্রোগ্রামগুলো হাতে নিয়েছে।

আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানীর নাম একবারও উচ্চারণ করে না বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীর নামও উচ্চারণ করেন না তারা। শুধু তাই নয়, যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের নামও উচ্চারণ করে না। এরা কতো সংকীর্ণ, এরা নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতায় সারাজীবন টিকে থাকার জন্য, একজন মানুষ ও পরিবারকে মহিমান্বিত করার জন্য মিথ্যা ইতিহাস এই দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। সেজন্য আমরা একেকদিন একেক বিষয়ের ওপর প্রোগ্রাম করে সত্য ইতিহাস তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি।

মির্জা আব্বাস বলেন, রেসকোর্সে ৭ই মার্চের ভাষণের সময় আমি ঠিক মঞ্চের সামনেই উপস্থিত ছিলাম। ওই ভাষণের পুরোটাই আমি শুনেছি। এখনো শুনছি। কিন্তু বক্তব্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ যা কিছু খুঁজে পেয়েছে আমরা কিন্তু তা খুঁজে পাইনি। ওইদিন আমরা রেসকোর্স ময়দানে বাঁশ নিয়ে গিয়েছিলাম, আমরা মনে করেছিলাম স্বাধীনতার ঘোষণা আসবে। তারপর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বো। কিন্তু সেদিন কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই যদি কেউ বলে একজন মেজরের ঘোষণায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই, তাহলে আমরাও বলবো ৭ই মার্চের ভাষণে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তথা পুরো পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোটে জয়ী হওয়ার পরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার প্রতিবাদে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল সে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটই হচ্ছে ৭ই মার্চের জনসভা। আমার কাছে খুব অবাক লাগে, যখন দেখি যারা বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে আছে- তারা কি ভুলে গেছে সেই প্রেক্ষাপটের কথা? সেই প্রেক্ষাপট ছিল গণতন্ত্রের প্রেক্ষাপট। সেই প্রেক্ষাপট ছিল বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার প্রেক্ষাপট। আজকে যারা ক্ষমতা দখল করেছে তারা যখন ৭ই মার্চের কথা উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকে; তারা কি ভুলে গেছে, আজকে তারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে? মুক্তিযুদ্ধের অনেক মাইলফলকের মধ্যে ৭ই মার্চ সত্যি একটি মাইলফলক। মুক্তিযুদ্ধের অনেক মাইলফক হারিয়ে গেছে। কিন্তু এগুলো এখন আর কেউ স্মরণ করে না। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বিএনপি পালন করছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসকে জানানোর জন্য।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমরা রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চে শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা শুনতে আশা নিয়ে বসেছিলাম যে, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন। ২০ মিনিট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বক্তৃতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন একটা গুলি চললে পাল্টা গুলি চলবে। কিন্তু সেখানে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। শেষে তার বক্তব্য ছিল- ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি সেদিন স্বাধীনতার ভাষণ দিয়েছেন। স্বাধীনতার ভাষণ আর ঘোষণা এক জিনিস না।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status