শেষের পাতা

আবেদনের এক বছর আগেই কলেজ স্থানান্তর

পিয়াস সরকার

৭ মার্চ ২০২১, রবিবার, ৯:৩০ অপরাহ্ন

রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত ন্যাশনাল কলেজ। কলেজটি নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। এটি ১লা নভেম্বর ২০১৯ সালে স্থানান্তর করে কিন্তু স্থানান্তরের আবেদন করে তার এক বছর পর অর্থাৎ ২২শে নভেম্বর ২০২০ সালে। এ ছাড়াও কলেজটির স্বীকৃতির মেয়াদ শেষ হয় ৩০শে জুন ২০১৫ সালে। স্বীকৃতি নবায়ন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে কলেজটি। কলেজটির সাধারণ তহবিলে কোনো ব্যাংক সনদ নেই। সর্বশেষ অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ২০শে জুন ২০১২ সালে। অসম্পূর্ণ রিপোর্টে নেই আয়-ব্যয়ের হিসাব, শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কলেজটি ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হলেও নিয়ম-বহির্ভূতভাবে এমিপওভুক্ত হয়েছে। রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে ২০০১ সালের পহেলা জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল কলেজটি। যেটি পরিচালিত হয় ন্যাশনাল এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি ফাউন্ডেশন (এনইটি) কর্তৃক। নির্বাহী কমিটি পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় অন্যত্র স্থানান্তর ও মালিকানা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

এনইটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ১৮ই এপ্রিল ২০০৬ প্রগতি সরণি রোড, বাড্ডায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সভা হয়। এ সময় সবাই একমত পোষণ করেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল আলম ব্যর্থতার কারণ হিসেবে প্রশাসনিক দুর্বলতা, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অসহযোগিতা, অর্থনৈতিক সমস্যাসহ নানাবিধ কারণে কলেজটি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে কারণ দর্শানো হয়। এ সময় কলেজটির ঋণের পরিমাণ দেখানো হয় দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এ সময় অধ্যক্ষ বাজেট পেশ করেন ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ১১ জন পরিচালক নির্বাচন করা হয়। শহীদুল আলম এবং সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মনিরুল আমিন কোনো আর্থিক বিনিয়োগ করেননি। বাকি নয় জন ৩০শে এপ্রিল ২০০৬ সালে চার লাখ করে মোট ৩৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটি শুধু কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ২০০৭ সালে ২৯ জন ছাত্র ভর্তি হয়। কলেজটিকে অনুমোদন দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাউশি)। দ্বিতীয় গভর্নিং বডি ১২ই মে ২০১৪ সালে গঠিত হয় যা অনুমোদন পায়নি। কলেজটির কার্যক্রম সমপ্রসারণের জন্য নার্সারি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সম্প্রসারণ করা হয়। স্কুল ও কলেজের জন্য নিজস্ব ভূমি থাকা বাঞ্ছনীয় তাই এনইটি’র নামে আফতাব নগরে ৬৬ লাখ টাকায় নয় শতক জমি ক্রয় করা হয়। জমি ক্রয়কালীন ফান্ডের জন্য সফিউদ্দিন আহমেদ সেলিম নামে একজন পরিচালককে নেয়া হয়। অন্যান্য পরিচালকগণের সমান বিনিয়োগ হিসেবে ১৫ লাখ টাকা জমা দেন। পরিচালকরা সে সময় এক লাখ টাকা করে জমা দেন।

প্রতিষ্ঠানটি ছয়তলা ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয়ে আসছে। স্কুল পরিচালিত হয় প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আর কলেজ পরিচালিত হয় অধ্যক্ষের মাধ্যমে। অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষ শহিদুল আলম একক উদ্যোগে ফাউন্ডেশন কমিটির সভা কিংবা লিখিত অনুমতি ছাড়াই কলেজটিকে আলাদা করে ফেলেন।

শাহজাহান বলেন, এদিকে প্রতিষ্ঠানটিতে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াতি করে ব্যাংকের জমা রশিদ জাল করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে উদঘাটিত হয়েছে। এছাড়াও আরো তদন্ত চলছে। এছাড়াও এরমধ্যে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয় নিয়ম-বহির্ভূতভাবে। এই কমিটি বাতিলের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত ১৫ই অক্টোবর ২০১৮ সালে এই কমিটি স্থগিত করে দেন। এরপরও অভিযোগ রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সহযোগিতায় ফের অবৈধভাবে এই কমিটি চালু করেন। এরপর রিট পিটিশন মামলার বাদী হাইকোর্ট ডিভিশনে আদালত অবমাননা মামলা করেন। এরপর আদালত অবমাননা মামলায় এক রায়ে কমিটি বাতিল করা হয়। বর্তমানে হাইকোর্ট ডিভিশনে মামলাটি বিচারাধীন আছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ফের এডহক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। কলেজের অধ্যক্ষ নেট ফাউন্ডেশনের অগোচরে হাইকোর্ট ডিভিশনে বিচারাধীন মামলা নং- ১১৩৭৪/১৮-তে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন এবং স্থানান্তরের আবেদন করেন। শুনানি শেষে কলেজ অন্যত্র স্থানান্তর আবেদন খারিজ করে দেয়। করোনার সময়ে আদালত বন্ধ থাকার সুযোগে নেট ফাউন্ডেশনকে না জানিয়ে আদালতের রায়কে অবমাননা করে ইদ্রিস পয়েন্ট, মধ্যবাড্ডা ইউলুপ সংলগ্ন ইসলামী ব্যাংকভবন, প্রগতি সরণি বাড্ডায় স্থানান্তরের চেষ্টা চালান। কিন্তু এই সময়ে তিনি কলেজের ভাড়া পরিশোধ করছেন না। কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট ২০২০ সাল পর্যন্ত বকেয়া আছে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ২০১৯ সালে পহেলা নভেম্বর কলেজটি স্থানান্তর করে তারা। কিন্তু পবির্তনের আবেদন করে বোর্ডে ২২শে নভেম্বর ২০২০ সালে।

২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হয় কলেজটি। প্রতিষ্ঠানটিকে এমপিওভুক্ত করতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনই নেয়া হয়নি। ট্রাস্টের (এনইটি ফাউন্ডেশন) চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও মহাসচিব শহীদুল্লাহ বাদল অবিলম্বে কলেজের এমপিওভুক্তি বাতিলের দাবি জানান। তারা এক অভিযোগপত্রে বলেছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড হতে এডহক কমিটি এবং মন্ত্রণালয় হতে এমপিওভুক্তি করানোর জন্য ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন মর্মে অধ্যক্ষ মহোদয় একটি সালিশি সভায় উত্থাপন করেন। ন্যাশনাল কলেজ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বলেন, কাগজ জালিয়াতি করেই এটি করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির অনুমোদন স্থগিত চেয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কলেজটি বাণিজ্যিক ভবনের ২য় তলা হতে ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত ভাড়া করা ভবনে পরিচালিত হয়ে আসছে। একটি অস্তিত্ববিহীন জমির দলিলাদি তৈরি করে কর্তৃপক্ষকে ধোঁকা দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, আমরা নানা কারণে এটি সময়মতো করতে পারিনি। আবেদনের সময় চেয়ারম্যান মহোদয় পরিবর্তন হয়েছে এটাও একটা বড় কারণ। এডহক কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিয়ম মেনে আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই কমিটি করি। যিনি অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি মিথ্যা ও অবৈধভাবে কথা বলছেন। আর এমপিওভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ভাড়া বাড়িতে অনেক কলেজই এমপিওভুক্ত হয়েছে। আমরা আবেদন অনলাইনে করেছি। আমরা যখন আবেদন করি তখন ভাড়া বাড়িতে এমপিওভুক্তি করা যাবে না এমন নিয়ম ছিল না। এই নিয়ম পরবর্তীতে যোগ করা হয়েছে। এটা বর্তমান সরকারের শিক্ষাবান্ধব নীতির কারণেই এমপিওভুক্ত হয়েছে।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status