প্রথম পাতা

বার্নিকাটের গাড়িতে হামলায় চার্জশিট

জড়িত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার

৬ মার্চ ২০২১, শনিবার, ৯:৩৫ অপরাহ্ন

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)। ঘটনার আড়াই বছর পর গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি’র পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৯ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই বার্নিকাটের গাড়িবহরে ও মামলার বাদী সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে ভাঙচুর করেছে। ঘটনার রাতে বদিউল আলম মজুমদারের বাসায় মার্শা বার্নিকাট, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরো কয়েকজন সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন এমন খবর পেয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ৯জন ছাড়া মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরকারদলীয় আরো ৯ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তাদের প্রকৃত নাম ঠিকানা না পাওয়াতে অভিযোগপত্রে বিস্তারিত দেয়া হয়নি। অভিযোগপত্রে বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সদস্যসহ ১৯ জনকে সাক্ষী হিসাবে রাখা হয়েছে।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে তারা হলেন- নাইমুল হাসান ওরফে রাসেল, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন ওরফে আকাশ, মো. সাজু ইসলাম ওরফে সাজু, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি। অভিযোগপত্রে যাদের বিস্তারিত দেয়া হয়নি তারা হলেন- বিল্পব, নাখালপাড়ার রাজু, আতিক, টুটুল, রাহাত, ইয়ামিন, নোমান, তানভির ওরফে রাজা ও এনামুল হক অনিক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি’র পরিদর্শক মো. আব্দুর রউফ মানবজমিনকে বলেন, গত মাসেই অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দিয়েছেন। তদন্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আমেরিকান অ্যাম্বেসির চিহ্নিত করা হামলার মূলহোতা ইশতিয়াক মাহমুদকে অভিযোগপত্রে রাখা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ২০১৮ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। ওই বছরের ৪ঠা আগস্ট রাতে মার্শা বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন ও আরো কয়েকজন মিলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়িতে বার্নিকাটের বিদায় উপলক্ষে নৈশভোজে যান। ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় সরকারের নানামুখী কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। তারা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার কাছে সরকার বিরোধী বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তারা বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করে। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যায়।

২০১৮ সালের ৪ঠা আগস্ট হামলার ঘটনা ঘটলেও ১০ই আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে তিনি বলেন, ওই রাতে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট তার মোহাম্মদপুরস্থ ১২/২ ইকবাল রোডের বাসায় তার বিদায়ী নৈশভোজে আগমন করেন। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে বার্নিকাট তার বাসা থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠার সময় ৩০/৪০ জন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্ত বার্নিকাটের গাড়িতে হামলা করে। বার্নিকাটের গাড়িচালক এবং তার ছেলের ওপর আক্রমণ করে। দুর্বৃত্তরা বার্নিকাটের গাড়ির পেছনে ধাওয়া করে এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। অপরাধীরা পিস্তল ও লাঠিসোটা বহন করছিল এবং বার্নিকাটের গাড়িতে আগুন দেয়ার উস্কানি দিচ্ছিল। বার্নিকাটের গাড়ি দ্রুত বেগে স্থান ত্যাগ করার পর দুর্র্বৃত্তরা তার ২য় তলায় অবস্থিত বাসায় হামলা চালিয়ে জানালায় ইট-পাটকেল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে। দুর্র্বত্তরা গেট ভেঙে বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে। পরে তিনি দ্রুত ৯৯৯ নম্বরে কল দেন। দুর্বৃত্তরা তার বাসার সামনে আধা ঘণ্টা অবস্থান করে তার পরিবারকে গালাগালি করতে থাকে। তারা দিনের বেলায় দেখে নেয়ার হুমকি দেয়।

চার্জশিটের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার মানবজমিনকে বলেন, এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ দিয়েছিল যাতে এই দেশের নাগরিকরা স্বাধীনতা ভোগ করে। চলাফেরা, চিন্তা, বাক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করি। কিন্তু একটা নৈশ ভোজের আয়োজনকে কেন্দ্র করে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহর ও আমাদের বাড়িতে আক্রমণ চালিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে এটা পুরো জিনিসটাকে প্রহসনে পরিণত করেছে। কাউকে বাড়িতে ডেকে আপ্যায়ন করার অধিকারটুকু নাই। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বলে হামলা করছে। বাড়িতে আক্রমণ আমাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করছে। সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গৃহ এবং যোগাযোগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু আমার নিজের গৃহের নিরাপত্তা নিশ্চিত ভঙ্গ হয়েছে। এতে আমার মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে। এ ছাড়া এই আক্রমণটা ভয়াবহ হতে পারতো। এর মাধ্যমে আহত ও প্রাণ সংহারের মতো ঘটনা ঘটতে পারতো। মূলত বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এমনটা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমেরিকান অ্যাম্বেসি থেকে দু’জনকে মূলহোতা হিসাবে চিহ্নিত করে দিয়েছিল। একজন হচ্ছে ইশতিয়াক মাহমুদ আরেকজন ফিরোজ আহমেদ। শুনেছি তারা ইশতিয়াক মাহমুদকে চার্জশিট থেকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে আমি বিস্মিত হয়েছি এবং চরমভাবে হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি। এটা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status