অনলাইন

স্কুল বন্ধের তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়

করোনায় ১৭ কোটি শিশুর বেড়ে ওঠায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে: ইউনিসেফ

কূটনৈতিক রিপোর্টার

৪ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

মহামারি করোনার কারণে দুনিয়াজুড়ে বন্ধ থাকা স্কুলগুলো খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে সরকারসমুহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। বিশ্বব্যাপী শিশুদের উন্নতি ও নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনাকারী ইউনিসেফ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় ঘোষিত লকডাউনে বিশ্বজুড়ে ১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি শিশু গত এক বছর ধরে পুরোপুরি স্কুল থেকে বঞ্চিত। স্কুল বন্ধের নেতিবাচক প্রভাব বিষয়ে সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, এতে শিশুদের বেড়ে ওঠা এবং শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র শিশুদের আর কখনোই স্কুলে না ফেরার ঝুঁকি মারাত্মক তৈরি হয়েছে। ইউনিসেফওয়েবে প্রচারিত এ সংক্রান্ত ৩ রা মার্চের বিবৃতিতে জানানো হয়, বন্ধ স্কুল খোলার বিষয়ে জনসচেতনতা   সৃষ্টিতে ইউনিসেফ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে 'প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম' উন্মোচন করেছে। সংস্থাটির তরফে প্রচারিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯ লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি, প্রায় ২১ কোটি ৪০ লাখ বা প্রতি ৭ জনের মধ্যে ১ জন ব্যক্তিগত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে । স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী ১৪টি দেশের বেশিরভাগ স্কুল ২০২০ সালের মার্চ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সাল পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। এই দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের, যেসব দেশে প্রায় ৯ কোটি ৮০ লাখ স্কুলগামী শিশুর ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
করোনায় বেশি দিন স্কুল বন্ধ রাখার যে তালিকা ইউনিসেফ প্রকাশ করেছে তাতে পানামা প্রথম। বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। অর্থাৎ পানামাই সবচেয়ে বেশি দিন স্কুল বন্ধ রেখেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে এল সালভাদোর। এর পরেই বাংলাদেশ। তালিকার চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বলিভিয়া।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেছেন, আমরা যখন কোভিড-১৯ মহামারির এক বছর পূর্তির দিকে এগোচ্ছি, তখন বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ক্ষেত্রে লকডাউন যে ভয়াবহ জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করেছে তা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দেয়। যতই দিন যাচ্ছে, শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে ততই পিছিয়ে পড়ছে, যেখানে সবচেয়ে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা শিশুদের সবচেয়ে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। কাজেই আমরা এমন আরও একটি বছরে পদার্পন করতে পারি না, যেখানে শিশুরা স্কুলে হাজির হয়ে শিক্ষা গ্রহণের সীমিত সুযোগ পাবে বা একেবারেই পাবেনা। স্কুলগুলো খোলা রাখার বিষয়ে বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রচেষ্টা বাদ রাখা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে ২০২০ সালের মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ থাকা দেশ এবং শিশুর সংখ্যার অঞ্চল ভিত্তিক একটি বিভাজনী সারণীও সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদন বিষয়ক নোটে বলা হয়, ২০২০ সালের ১১ মার্চে  যখন স্কুলগুলো পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া শুরু হয়, তখন থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেয়া নির্দেশনার সংখ্যার ভিত্তিতে দেশগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এই উপাত্ত বিগত ১১ মাস ধরে স্কুল বন্ধ থাকার অবস্থাকে তুলে ধরে। এই সময়ের মধ্যে যেসব দেশে স্কুলের পুরোপুরিভাবে ১০ দিনেরও কম সময় ধরে চালু ছিল এবং আংশিকভাবে ১২ দিনেরও কম সময় ধরে চালু ছিল সেসব দেশকে পুরো বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকা দেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, আমরা ৩০ মার্চ স্কুল পুনরায় চালুর জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে ইউনিসেফ বিদ্যালয়গুলো নিরাপদে পুনরায় চালু করতে সহায়তা দিতে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ ও নিবিড়ভাবে কাজ করে চলেছে।

শিশুদের পড়াশোনা এবং সার্বিক সুস্থতার ক্ষেত্রে স্কুল বন্ধ রাখার পরিণতি ধ্বংসাত্মক। সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা এবং যারা দূরশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় না তারা আর কখনও ক্লাসরুমে ফিরতে না পারার এবং এমনকি শিশুবিয়ে বা শিশুশ্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, পুরোপুরি ও আংশিকভাবে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বিশ্বব্যাপী ৮৮ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি শিশুর পড়াশোনা অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়ছে।

বিশ্বব্যাপী স্কুলগামী শিশুদের বেশিরভাগই এমন এক স্থান হিসেবে তাদের স্কুলগুলোর ওপর নির্ভর করে যেখানে তারা তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারে, সহায়তা চাইতে পারে, স্বাস্থ্য ও টিকাদান পরিষেবা এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে পারে। যত বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকবে, তত বেশি সময় ধরে শিশুরা তাদের শৈশবের এই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে।

প্রতীকি 'প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম' উন্মোচন প্রসঙ্গ-

শিক্ষা কার্যক্রমের এই জরুরি অবস্থার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এবং স্কুলগুলো খোলা রাখতে, বা পুনরায় খোলার পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দেয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সরকারসমূহের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ইউনিসেফ 'প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম' উন্মোচন করে। এটি ১৬৮টি খালি ডেস্ক দিয়ে তৈরি এমন একটি মডেল শ্রেণিকক্ষ, যেখানে প্রতিটি ডেস্ক এক মিলিয়ন শিশুকে প্রতিনিধিত্ব করে, যারা এমন দেশে থাকে যেখানে প্রায় এক বছর ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে। প্রতীকী এই ডেস্কগুলো বিশ্বের প্রতিটি কোনায় খালি থাকা ক্লাসরুমগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ বিষয়ে ইউনিসেফ প্রধান ফোর বলেন, এই শ্রেণিকক্ষটি খালি পড়ে থাকা লাখ লাখ শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করে, যেসব কেন্দ্রের অনেকগুলো প্রায় এক বছর ধরে ছাত্র-শুন্য। প্রতিটি খালি চেয়ারের পিছনে একটি ফাঁকা স্কুল ব্যাগ ঝুলানো আছে, যা একটি শিশুর থেমে যাওয়া সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতকে অনির্দিষ্টকালের বিরতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে — এই বিষয়টিকে অস্পষ্ট করে তুলতে আমরা আর বন্ধ দরজা ও বন্ধ ভবন চাই না। এই ‘প্যান্ডেমিক ক্লাসরুম’টি সরকারের প্রতি একটি বার্তা: আমাদের অবশ্যই স্কুল পুনরায় খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্কুলগুলোকে আগের তুলনায় আরো ভালোভাবে খোলার বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে।শিক্ষার্থীরা যখন তাদের ক্লাসরুমে ফিরবে, তখন তাদের পুনরায় মানিয়ে নিতে এবং পড়াশোনার ঘাটতি মোচনে সহায়তার প্রয়োজন হবে। স্কুল পুনরায় খোলার পরিকল্পনাগুলোতে অবশ্যই শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের বিকাশ এবং সার্বিক কল্যাণের জন্য স্কুলে প্রতিকারমূলক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থাসমূহের বিস্তৃত পরিষেবা নিশ্চিত করাসহ প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনন্য প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য ইউনিসেফ সরকারসমূহের প্রতি আহ্বান জানায়। ইউনেসকো, ইউএনএইচসিআর, ডব্লিউএফপি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে ইউনিসেফের জারি করা স্কুল পুনরায় চালু করার কাঠামোতে জাতীয় এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের জন্য ব্যবহারিক পরামর্শ রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status