শেষের পাতা

বেরোবি’র ভিসি কলিমুল্লাহর দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে ইউজিসি

বেরোবি প্রতিনিধি

৩ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৯:৪৬ অপরাহ্ন

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘বিশেষ  উন্নয়ন প্রকল্প’- শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ কাজে ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের নানা অসঙ্গতি নজরে এলে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর গত বছরের ২০শে এপ্রিল ইউজিসি’র সদস্য মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ইউজিসি’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক (বর্তমানে সচিব)  ফেরদৌস জামান এবং ইউজিসি’র অতিরিক্ত পরিচালক দুর্গা রানী সরকার।

এক বছর পর চলতি বছরের ১৭ই জানুয়ারি সরজমিন পরিদর্শনে যান এই তদন্ত কমিটি। পরিদর্শনকালে তারা বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্থাপনাসহ প্রকল্পের কাগজপত্রাদি যাচাই-বাছাই করেন। গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় এই তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি স্থাপনা নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট ভেঞ্চার অব আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবীব অ্যান্ড প্রাকৃত নির্মাণ লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা না করে প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেডকে নিয়োগ প্রদান করা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ এবং প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চুক্তির নিয়মাবলীর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে কমিটি মনে করে। প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনা ছাত্রী হল এবং ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জন্য প্রকৃত নকশা বা ডিজাইনের ওপর ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। তাছাড়া ইতিমধ্যে ওই ভবনটির অর্ধেকের বেশি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই এখানে দ্বিতীয় ড্রয়িং বা ডিজাইনের কোনো ধরনের প্রয়োজন আছে বলে কমিটি মনে করে না। বর্তমান পরিস্থিতি যা হোক না কেন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনকৃত এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক যথাযথ প্রক্রিয়ায় অনুমোদিত মূলধন ডিজাইন অনুযায়ী নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা উচিত। সরকারি উপেক্ষা করে অযাচিতভাবে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ প্রদান করা হয়, যা সরকারি ক্রয় পদ্ধতি নিয়ম বহির্ভূত। এ ধরনের অনৈতিক কাজের জন্য সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা  গ্রহণ করা যেতে পারে।
স্বাধীনতা স্মারকের অসমাপ্ত কাজ কীভাবে সম্পন্ন করা হবে তা সুষ্ঠু সমাধান মূল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও আর্কিটেক্ট মনোয়ার হাবিবই করতে পারবেন। বর্তমানে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ওয়ার্কস কমিটির সদস্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত আছেন। এই সময়ে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মেসার্স একিউম্যান আর্কিটেক্ট অ্যান্ড প্ল্যানার্স লিমিটেড ভবন সংশোধিত ড্রয়িং বা ডিজাইন প্রণয়ন করে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক ভিসি’র কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। এই সময়ে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদের পরিকল্পনা উন্নয়ন, ওয়ার্কস কমিটির সদস্য থাকা সত্ত্বেও এ রকম একটি অগ্রহণযোগ্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ ড্রয়িং বা ডিজাইন অনুমোদিত হয়েছে। তাই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে আর্কিটেক্ট মঞ্জুর কাদেরকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার স্বার্থে প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি অবকাঠামো নির্মাণে যে অবহেলা, দীর্ঘসূত্রতা ও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা বর্তমান প্রশাসনের অনৈতিকতা, অদক্ষতা ও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এবং শিক্ষা গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিও চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রধান এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকার জন্য বর্তমান ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর এই দায়-দায়িত্ব অবশ্যই বহন করা উচিত। একই সঙ্গে ইউজিসি’র তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভবনের নকশা পরিদর্শন করে যেভাবে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে,  সেই প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status