অনলাইন

ভবিষ্যত প্রজন্মকে কল্যাণময় রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখাতে চাই: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

১ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৭:৫৫ অপরাহ্ন

স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন করে অঙ্গীকারের কথা বললেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার বিকালে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উপদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই অঙ্গীকারের কথা ব্যক্ত করেন। গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপির স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনে এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলোয়াত এবং পরে দলের শিল্পীরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করেন। এ সময়ে সকলে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি এবং একাত্তরের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

বিএনপি মহাসচিব বক্তব্যের শুরুতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম-স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমানসহ রনাঙ্গনের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা-লাখো ভাই-মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, পাঁচ শতাধিক গুম-খুন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশি হামলা, লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ, গুলি, গ্রেপ্তার, কারাগারে নির্যাতনে সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু, মিথ্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত কারাগারের কন্ডেম সেলে অন্তরীণ দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লুৎফুজ্জামান বাবর, লেখক মুশতাক আহমেদ কারা মৃত্যুবরণ প্রভৃতি বিষয়গুলো তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই স্বাধীনতা কোনো ব্যক্তি বা দলের নয়। এই স্বাধীনতা এদেশে যারা সোনালী ফসল ফলায়, যারা পণ্য উৎপাদন করে, যারা শ্রম দিয়ে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তাদের সকলের। বিদেশী প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়ের, গার্মেন্টসে কর্মরত মা-বোনের, ক্ষেতে রৌদে পোঁড়া-বৃষ্টিতে ভেজা কৃষকের, ছাত্র-যুবক সকল পেশাজীবীর। আসুন এই পঞ্চাশ বছর পরে আমরা নতুন করে শপথ নেই- ১৯৭১ সালের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের। যা আমাদের একটি উদার গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এগিয়ে নিয়ে যাবে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে।

তিনি বলেন, এই স্বাধীনতা আমাদের জনগনের স্বপ্নের ফসল। আমরা যখন সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের চক্রান্ত চলছে। বর্তমানে অনির্বাচিত কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার এই চক্রান্ত করছে। স্বাধীনতার চেতনা আজকে ভুলন্ঠিত। একদলীয় শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রের ভুয়া মোড়কে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। ভোটার বিহীন নির্বাচন। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে পার্লামেন্ট ও সরকার গঠন। আমাদের স্বাধীনতার সকল আশাগুলো ভেঙে খান খান করেছে দিয়েছে এই সরকার।

ফখরুল বলেন, এই ৫০ বছরে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা দূরে থাকুক আরো বিভক্ত করা হয়েছে। স্বাধীনতাকে সংহত করার চেয়ে আরো দূর্বল করা হয়েছে। জনগনের আশা-আকাংখা ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। বৈষ্যম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভ্রান্ত ইতিহাস জানিয়ে বিভ্রান্তি করা হচ্ছে। আমরা সূর্বণ জয়ন্তীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেই সত্যকে অবধারিত করতে চাই, স্পষ্ট করতে চাই- যে সত্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধকে মহিমান্বিত করেছিলো, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে আবারো সেই স্বপ্ন দেখাতে চাই-মুক্ত স্বদেশে, মুক্ত সমাজে, মুক্ত মানবিক কল্যাণময় রাষ্ট্রে। আমরা অর্থনৈতিক সামাজিক বৈষ্যম দূর করতে চাই। আজকের যে শিশু তার জন্য একটি কল্যাণময় ভেবে ভালোবাসার পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখাতে চাই। আমাদের সেই মহান সংগ্রামী যুদ্ধে যাদের যে অবদান তাকে তুলে ধরতে চাই, তাদের সকলকে সম্মান্বিত করতে চাই।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন উজ্জ্বলের পরিচালনায় দলের শিল্পীরা দলীয় সঙ্গীত, ক্যারিওগ্রাফীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর ‘থিম সং’ এবং শিল্পী রেখা সুফিয়ানা, ইথুন বাবু এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বেবী নাজনীন দেশাত্মবোধক গান পরিবেশ করেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ওপর প্রামাণ্য চিত্র উপস্থাপন করা হয়।
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বীরোত্তম, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, জাতীয় পাটির্ (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহি বীর প্রতীক বক্তব্য রাখেন।

বর্ণাঢ্য এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল আলম চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদীন ফারুক, উকিল আব্দুস সাত্তার, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুল কাইয়ুম, শাহিদা রফিক, আব্দুল কুদ্দুস, মামুন আহমেদ, সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, তাহসিনা রুশদীর লুনা, বিজন কান্তি সরকার, সুকোমল বড়ুয়া, এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার মুক্তাদির, মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, শ্যামা ওবায়েদ, বিলকিস জাহান শিরিন, জহিরউদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, নাসের রহমান, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, খন্দকার মারুফ হোসেন, প্রচার ও মিডিয়া কমিটির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আমিরুল ইসলাম আলীম, মীর হেলালউদ্দিন, আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান, মাহমুদা হাবিবাসহ দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে মোস্তফা জামাল হায়দার, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রেদোয়ান আহমেদ, আহমেদ আবদুল কাদের, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুউদ্দিন মনি, সাহাদাত হোসেন সেলিম, আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ এহসানুল হুদা, আবু তাহের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ফারুক রহমান, মোস্তফিজুর রহমান মোস্তফাসহ শরিক দলের নেতারাও ছিলেন।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, তুরস্ক, জাপান, জাতিসংঘ, ইউএসএইড, আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন দেশের কুটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status