প্রথম পাতা

আদালতে যেতে চান কিশোর

রাশিম মোল্লা

১ মার্চ ২০২১, সোমবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের করা রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম এই আবেদন নাকচ করেন। কিশোরকে আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাকে হাজির করা হয়নি। আদালতে শুনানিতে কিশোরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে আহমেদ কবির কিশোরকে রিমান্ড নেয়ার আবেদন নাকচ করেন বিচারক। কিশোরের আইনজীবী রিপন বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, কিশোরকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিনদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন। রিমান্ড শুনানিতে আসামিকে আদালতে উপস্থিত করার বিধান থাকলেও কিশোরকে হাজির করা হয়নি। হাইকোর্টে জামিনের দরখাস্ত শুনানির অপেক্ষায় থাকায় আমরা বিচারিক আদালতে কোনো জামিন আবেদন করিনি।
এদিকে, র‌্যাব হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ দিতে আহমেদ কবির কিশোরকে আদালতে উপস্থিত করার জন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আবেদন করেন আমলি আদালতে। পরে আদালত আবেদনটি তার শুনানির এখতিয়ার না থাকায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করতে বলেন। আদালত বলেন, উচ্চ আদালতে দরখাস্ত পাঠানোর এখতিয়ার আমলি আদালতের নেই। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে দরখাস্তটি মহানগর দায়রা ও জজ আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবেদনটি উঠিয়ে নেন।
নির্যাতনের অভিযোগ এনে কিশোরকে হাজির করার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৬ই মে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর র‌্যাব-৩ এর সদস্যদের হাতে গ্রেপ্তার হন। লালমাটিয়ার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে কয়েকজন র‌্যাব সদস্য তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। ফলে তিনি দুই কানের ভেতরে ও বাম পায়ে আঘাত পান। ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী যা সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অপরাধ। তাই দরখাস্তকারী (কিশোর) আসামী আদালতে অভিযোগ উত্থাপন করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, আহমেদ কবির কিশোর শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তাকে টর্চার করা হয়েছে। তার রিমান্ড শুনানির আর সুযোগ নেই। তাকে গতকাল আদালতে উপস্থিতই করা হয়নি। আসামির অনুপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির সুযোগ নেই। আমরা অভিযোগ করেছিলাম, সে (কিশোর) আমাদের হেফাজতে নেই। তাহলে কিশোরকে সেশন কোর্টে পাঠানো হোক। তার পক্ষে আমরা অভিযোগ উত্থাপন করবো। অভিযোগটি আমলি আদালতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বলা হয়, উচ্চ আদালতে আবেদন পাঠানোর এখতিয়ার নেই। আবেদনটি আমরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে উঠিয়ে নিয়েছি, সেশন কোর্টে ফাইল করবো।
গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপ-পরিদর্শক ও মামলাটির নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিনদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে কার্টুন বা ব্যঙ্গ চিত্র একে সুনাম ক্ষুণ্ন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির অভিযোগ রয়েছে। মামলার বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত আসামি (আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদ) ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে জনগণের মধ্যে মিথ্যা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির উদ্দেশ্যে অপপ্রচার করে আসছে। ফেসবুক পেজ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিপ্রায়ে অপপ্রচার করে আসছে। মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্তে আই অ্যাম বাংলাদেশ ফেসবুক পেজটির অ্যাডমিন-এডিটর কারা, পেজটি কারা পরিচালনা করেন, তাদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের উদ্দেশ্য কী তা জানতে আসামিদের উপস্থিতিসহ জিজ্ঞাসাবাদ একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া, আসামিদের হেফাজত থেকে মামলার এজাহার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডিজিটাল আলামত, বাদীর স্ক্রিনশট দেয়া বিভিন্ন ফেসবুক আইডি নিয়ন্ত্রণে নিতে এবং আসামিরা মেসেঞ্জার, গ্রুপ মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যেসব লোকদের সঙ্গে চ্যাট করেছে সেসব অ্যাপসের ইনবক্স চেক করে মামলার গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল তথ্য উদঘাটনে আসামিকে তিনদিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু আবেদনের এক দিন পরে ২৫শে ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হয়। এ কারণে গতকাল আবেদন অনুযায়ী দু’জনের রিমান্ড শুনানির কথা থাকলেও শুধু কিশোরের রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়। এ ব্যাপারে আদালতের রমনা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মানবজমিনকে বলেন, আহমেদ কবির কিশোর ও মুশতাক আহমেদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। এর আগে মুশতাক আহমেদের মৃত্যু হওয়ার কারণে আদালতে শুধু কিশোরের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন।
গত বছরের মে মাসে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কিশোর ও মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। চলতি বছরের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পুলিশ কিশোর, মুশতাক ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশ জানায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাকি সাত আসামি সাংবাদিক তাসনীম খলিল, সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার বিদেশে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ১০ই ফেব্রুয়ারি এই মামলার পুনঃতদন্তের আদেশ দেন।
সূত্র জানায়, এ মামলায় প্রায় ৯ মাস কারাগারে আছেন কিশোর, তার সঙ্গে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদ গত বৃহস্পতিবার মারা যান। এই দু’জনই আদালতে ছয়বার আবেদন করেও জামিন পাননি। সবশেষ মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন হাইকোর্টে নাকচ হয় প্রায় দুই মাস আগে। এরপর আরেক বেঞ্চে তাদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। সেটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। কিশোর, মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র‌্যাব। অন্য ৯ আসামি হলেন রাজনৈতিক সংগঠন রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক শাহেদ আলম, জার্মানি প্রবাসী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, হাঙ্গেরি প্রবাসী জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি), আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার। ওই মামলায় ৪ঠা ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয় রমনা থানা পুলিশ। তবে সেখানে সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল ও আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বিতর্কিত জুলকারনাইন সায়ের খানসহ (সামি) ৮ আসামির নাম না থাকায় আদালত অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status