বাংলারজমিন

কবির-জিল্লুতে তছনছ ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রবিবার, ৯:০১ অপরাহ্ন

সরাইল বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে আনিছুল ইসলাম ঠাকুর পদত্যাগ করেন ২০১৯ সালের ১৯শে মার্চ। আর ব্যক্তিগত সমস্যার অজুহাতে ওই বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি দলত্যাগী হন যুগ্ম সম্পাদক মো. নূরুজ্জামান লস্কর তপু। এরপর তারা দলে ফিরেছেন, এই খবর কারো জানা নেই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতা, নারী সংসদ সদস্য-কার সঙ্গে নেই তার ছবি। একই অবস্থা আনিসুল ইসলামেরও। এ দু’জনকেই সরাইল উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয়েছে শুক্রবার। ওইদিনই আখাউড়া উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়। আগের কমিটিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেরই এই কমিটিতে নাম নেই। উপজেলা ও পৌরসভায় এমন ধরনের কমিটি নিয়ে বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।
দলের ত্যাগী এবং মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত নেতাদের বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার অভিযোগ ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। কোনো সাংগঠনিক রীতিনীতি না মেনে দলের কয়েকজন নেতার একটি সিন্ডিকেট স্বেচ্ছাচারী হয়ে এসব কমিটি দিচ্ছেন বলেই অভিযোগ উঠেছে।
সূত্র জানায়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত বছরের ১৩ই নভেম্বর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি জিল্লুর রহমান জিল্লুকে। শুরু থেকে তার নেতৃত্বাধীন কমিটির সাংগঠনিক তৎপরতা একের পর এক বিতর্কের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে। গত ২৪শে ডিসেম্বর আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান মেয়াদোত্তীর্ণ বলে সকল উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এ সংক্রান্ত চিঠিতে ৩০শে নভেম্বর আহ্বায়ক কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হলেও চিঠি দেখে বিস্মিত হন আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। কমিটি বাতিলের চিঠিতে বিলুপ্ত ইউনিটগুলো পরিচালনার জন্য উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই আহ্বায়ক কমিটি করার কথা বলা হয়। দলের নেতারা জানান, সামনে থেকে জেলা আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান সবকিছু করলেও পেছনে রয়েছেন কবির আহমেদ ভূঁইয়া। কবিরের পরিচয়- তিনি বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত স্টাফ আবদুর রহমান সানির বড় ভাই। সাংগঠনিক টিমের এক নেতার নামও রয়েছে আলোচনায়। তারাই রফাদফা করে কমিটি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে কসবা উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন ওই উপজেলার নেতারা। তারা জানান, কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা করতে গত ৫ই ফেব্রুয়ারি উপজেলা এবং পৌর বিএনপি’র ৩৫ জন নেতা জেলা আহ্বায়ক জিল্লুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় দলের জন্য যাদের ত্যাগ তিতিক্ষা রয়েছে, মামলা মোকদ্দমায় জেলে গেছেন এমন নেতাদের সমন্বয়ে আহ্বায়ক কমিটি করার অনুরোধ করেন তারা। জেলা আহ্বায়কের কথায় উপজেলার নেতারা পরদিন একটি আহ্বায়ক কমিটিও জমা দেন। যাতে সাবেক জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছিল। কিন্তু এর একদিন পরই তাদের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির সকলকে বাদ দিয়ে এডভোকেট ফখর উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক এবং যুবদল নেতা শরীফুল হক স্বপনকে সদস্য সচিব করে উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপরই কসবা বিএনপিকে বাঁচাতে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতারা এক হয়ে আন্দোলনে নামেন।
কসবা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকলিল আজম বলেন, জেলা আহ্বায়ক নিজেই একটা আইন করেছেন যে, আগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেউ আহ্বায়ক কমিটিতে থাকতে পারবেন না। কিন্তু আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব যারা হবেন পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকতে পারবেন। এ বিষয়ে জেলা আহ্বায়ক বলেন, এটা তার ইচ্ছার ব্যাপার। আমাদের প্রস্তাবিত কমিটি বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় তাদেরকে নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। মোট কথা নিয়মনীতির বাইরে সবকিছু করা হচ্ছে। শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, কমিটির বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার টিম লিডার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়ার সঙ্গেও আমরা দেখা করেছিলাম। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান। মোখলেছুর রহমান বলেন, কমিটি নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে। দলের অবস্থা ভালো না।
আলোচনা ছড়িয়েছে- কসবার কমিটি দেয়ার আগে ৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি হোটেলে ৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়। সরাইল কমিটির পেছনেও রয়েছে মোটা অঙ্কের লেনদেন। উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন, আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন তিনি। সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আনিসুল ইসলাম দল ছেড়ে যাওয়ার পর আমিই সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। আমাকে করা হয়েছে আহ্বায়ক কমিটির ৮ নম্বর সদস্য। বাঞ্ছারামপুর বিএনপি’র এক তরুণ নেতা নিজের অনুকূলে আহ্বায়ক কমিটি পেতে জেলা আহ্বায়ক ঢাকা গেলে তাকে হোটেলে রাখাসহ সবকিছু দেখভাল করেন বলে আলোচনা রয়েছে। ৮ হাজার টাকা দামের জুতা কেনার কথাও চাউর হয়েছে। তবে আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান বলেন, এই অভিযোগ হাস্যকর। এমন রেকর্ড আমার নেই। সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি করা যায় না। যাদের প্রয়োজন তাদের সঙ্গেই আলোচনা করে কমিটি করছি। এব্যাপারে বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল হক সায়ীদের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটি দেয়ার ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলাপ করার কথা নয়। জেলা আহ্বায়ক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাংগঠনিক টিম লিডার ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলেই কমিটি করবেন। এরসঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে সাংগঠনিক টিম লিডার আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেছেন, আমাদের পার্টি অনেক বড়। এখান আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে, তাতে সবাইকে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। তাতে কিছুটা অসন্তোষ থাকতেই পারে। যৌক্তিক অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status