প্রথম পাতা

দিনভর বিক্ষোভ, পুলিশের লাঠিচার্জ

কারাগারে লেখক মুশতাকের মৃত্যু, নানা প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৯:৫৩ অপরাহ্ন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে তার মৃত্যু হয়। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ওইদিন তার স্বজনদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়। মুশতাক আহমেদের স্বজনরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ সাক্ষাতে মুশতাক সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছিলেন। এরপর কি এমন হলো যে, তাতে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে উন্নত চিকিৎসা কেনো দেয়া হলো না এমন প্রশ্ন করেছেন তার স্বজনরা। লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে গতকাল দিনভর নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে রাজধানীতে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন। তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে বলেন, এটা যারা তৈরি করেছে মুশতাকের মৃত্যুর জন্য তারা দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।

গত বছরের মে মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা একটি মামলায় মুশতাক আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ আরো ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে কিশোর ও মুশতাক ছাড়া অন্য ২ জন জামিনে মুক্ত হন। কয়েক দফা জামিন চাইলেও কিশোর ও মুশতাকের জামিন মেলেনি।
তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বিরোধী পোস্ট দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। গ্রেপ্তারের পর ৬ বার জামিন আবেদন নাকচ করা হয় মুশতাকের। মুশতাকের মৃত্যুর পর নানা প্রশ্ন দেখা দিলেও সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. অসিউজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। প্রায় একই কথা জানিয়েছেন তার ময়নাতদন্ত করা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শাফি মোহাইমেন। তিনি বলেছেন, বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ বায়েজীদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে বা পরে ঘা হয়েছে এমন লালচে-কালো ছোট ছোট দাগ দেখা গেছে মুশতাকের পিঠে ও ডান বাহুতে।

মুশতাকের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই স্ট্যাটাস ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র লেখালেখির কারণে মুশতাককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফাঁদে ফেলে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না। এই আইনকে কবর দেয়ার সময় এসেছে। কারাগারে মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে ঢাকায় দিনভর বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সন্ধ্যায় মশাল মিছিলও হয়েছে। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আজ সকালে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যেগে প্রেস ক্লাবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি পালন করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মৃত্যুবরণের পর প্রায় ১৬ ঘণ্টা পরে গতকাল সকাল ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে মুশতাক আহমেদের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. অসিউজ্জামান চৌধুরী। কারাগারের পক্ষ থেকে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (নং-১৩) হয়েছে। হাসপাতাল মর্গে মুশতাকের ভাই ডা. নাফিছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তার মরদেহ আমি নিজে দেখেছি। তেমন কোনো সমস্যা আমার চোখে পড়েনি। ময়নাতদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন ছাড়া আমি এ ব্যাপারে কী বলবো? এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।

গতকাল বিকাল ৪টায় শাহবাগে ছাত্র অধিকার পরিষদের আয়োজনে মুশতাকের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামের দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক আখতার হোসেন। গায়েবানা জানাজায় উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খাঁনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।

ওদিকে, গতকাল দুপুরের পর মুশতাক আহমেদের লাশ তার লালমাটিয়ার বাসায় নিয়ে আসা হলে সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। মুশতাকের সহকর্মীদের অনেকে স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। লালমাটিয়ায় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, মুশতাক কীভাবে মারা গেছেন তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তিনি রাষ্ট্রের হেফাজতে ছিলেন, তার দায়িত্ব নিয়েছিল সরকার- এই মৃত্যুর দায়, হত্যার দায় সরকারের...। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক লিখেছেন, মুশতাক জেলে মারা গেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তার অপরাধ ছিল লেখালেখি করা, অন্য কিছু নয়।

মুশতাক আহমেদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ২৩শে ফেব্রুয়ারি সিএমএম আদালতে হাজিরা দিতে এসে যিনি সুস্থ সেই মুশতাক আহমেদ হঠাৎ স্ট্রোক করে ২৫ তারিখ মারা যাবেন তা আমার বিশ্বাস হয় না। কারণ কার্টুনিস্ট কিশোরকে মেরে কানের পর্দা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে, পা ভেঙে দেয়া হয়েছে। কানে পুঁজ জমছে অথচ চিকিৎসা নেই। যদি তার স্বাভাবিক মৃত্যুও হয়ে থাকে তবুও এর তদন্ত চাই নিরপেক্ষ কোনো কমিটির মাধ্যমে। আগামী সপ্তাহে কার্টুনিস্ট কিশোর ও মুশতাকের হাইকোর্টে জামিন শুনানি হওয়ার কথা। তিনি বলেন, মুশতাক আহমেদ আইনি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।

গত বছরের মে মাসে জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ঢাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানো, জাতির জনকের প্রতিকৃতি, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকাকে অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। মুশতাক আহমেদ ‘কুমির চাষের ডায়েরি’ নামে বইয়ের লেখক, তিনি ‘মাইকেল কুমির ঠাকুর’ নামে একটি ফেসবুক পাতাও পরিচালনা করেন, যাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্যও উঠে আসতো। তিনি বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ শুরু করেছিলেন।

দিনভর বিক্ষোভ, মশাল মিছিলে লাঠিচার্জ-টিয়ারশেল নিক্ষেপ: লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে গতকাল দিনভর প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মশাল মিছিলে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পৃথক কর্মসূচি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি মশাল মিছিল বের করেন। মিছিলে কোনো ব্যানার ছিল না। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে আসা মাত্রই পুুলিশ সেখানে বাধা দেয়। পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা সামনের দিকে এগুতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা টিএসসির দিকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। লাঠিচার্জে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে আয়োজকদের দাবি। আহতদের সহপাঠীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের হট্টগোলের ঘটনায় ওই এলাকায় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে রমনা জোনের পুলিশের ডিসি মো. সাজ্জাদুর রহমান গতকাল রাতে মানবজমিনকে জানান, একদল শিক্ষার্থী হঠাৎ শাহবাগ মোড়ে এসে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করতে চাইলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ জনকে পুলিশ আটক করে।

গায়েবানা জানাজা, বিক্ষোভ: কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ উল্লেখ করে এই ঘটনায় সরকার সংশ্লিষ্টদের হুকুমের আসামি করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যদি পেট্রোলবোমা মারার ঘটনায় হুকুমের আসামি হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখক মুশতাক আহমেদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হুকুমের আসামি করা উচিত। একই সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরকে নোয়াখালীতে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় হুকুমের আসামি করা উচিত। গতকাল শাহবাগস্থ জাতীয় জাদুঘরের সামনে কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজা পূর্ববর্তী এক সমাবেশে এসব কথা বলেন নুর। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ এই জানাজার আয়োজন করে। এতে ইমামতি করেন ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। জানাজা পূর্ববর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজীম উদ্দীন খান, অর্থনীতি বিভাগের রুশাদ ফরীদি, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকী প্রমুখ। জানাজা শেষে উপস্থিত সবাই জুতা খুলে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে টিএসসি ঘুরে শহীদ মিনারে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। জুতা খুলে মিছিলের কারণ হিসেবে নুর বলেন,  মুশতাকের শেষ পোস্ট ছিল, ‘আমার জুতোগুলো মনে করছে তার মালিক হারিয়ে গেছে।’ তার এই উক্তি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ বহন করে। তাই আমরা জুতা খুলে খালি পায়ে হেঁটে বিক্ষোভ মিছিল করছি। নুর বলেন, লেখক মুশতাকের হত্যাকারী রাষ্ট্র না, এই রাষ্ট্র আমাদের সবার। মুশতাকের হত্যাকারী এই অবৈধ সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে কারাগারে রাখা হয়েছে। এ সময় তিনি এ আইন বাতিলে দাবি জানান। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রত্যেকে এই হত্যায় জড়িত। তিনি বলেন, আপনাকে হাসি ঠাট্টা করার অধিকার প্রতিটি জনগণের রয়েছে। এই আইন বাতিল করুন। না হয় আপনাকেও একদিন এই আইনের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে।

অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, আজকে কথা বলা খুব সহজ নয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণে আজ শুধু মুখের ভাষা কেড়ে নেয়নি, প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এর আগে অনেক গুম, খুন হয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম তারা সবাই বিএনপি-জামায়াতের কর্মী। কিন্তু আজ তা মুশতাক ভাই পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। উন্নয়নের কথা বলে তারা আমাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সবার আওয়াজ তুলতে হবে। এখনই সময় আওয়াজ তোলার। এ সময় তিনি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। জুনায়েদ সাকী বলেন, এই বাংলাদেশে কোনো আইন নেই। আমরা শুনেছি হাসপাতালে আনার আগেই মুশতাক মৃত্যুবরণ করেছেন। এই সরকার মুশতাককে হত্যা করেছে। মুশতাকের হত্যার দায় শেখ হাসিনার। এই ১২ বছরে প্রত্যেকটি অন্যায়ের দায় শেখ হাসিনাকে নিতে হবে।  তিনি বলেন, সংবিধানের উপর আসল বিচারক বাংলাদেশের জনগণ। আপনাদের প্রত্যেককেই জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এ সময় তিনি কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এই কালো আইন বাতিলে দাবিতে আগামী ৩রা মার্চ  সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে আমরা বিক্ষোভ পদযাত্রা করবো। 

শাহবাগে বিক্ষোভ: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। গতকাল বেলা ১১টার পর বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ মোড় ঘুরে শাহবাগে ফিরে আসে। পরে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তারা সেখান থেকে সরে দাঁড়ান। পরে নেতা-কর্মীরা শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য পর্যন্ত মিছিল করেন। বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী প্রতিবাদী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরীসহ নেতাকর্মীরা।

শাহবাগ মোড়ের বিক্ষোভে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, তার অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কারাগারে আটকে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তাকে হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে। অবিলম্বে মুশতাক হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচার করতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

শ্রমিক নেতা ও ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইমরান হাবিব বলেন, লুটপাট-দুর্নীতি-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। সরকারের সমালোচনা করে সত্য কথা বলায় একজন লেখককে গ্রেপ্তার করে জামিন দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার। উদীচী নেতা রহমান মোস্তাফিজ বলেন, আমাদের সবার মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সরকারের লুটপাট-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেই আইনের খড়্‌গ নেমে আসে আমাদের ওপর। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আরিফ রহমান, কবি সৈকত আমিন, নারীমুক্তি কেন্দ্রের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি তাসলিম আক্তার প্রমুখ।


 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status