প্রথম পাতা

বিক্ষোভ আল্টিমেটাম

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ৯:৩১ অপরাহ্ন

আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ৭ কলেজের চলমান পরীক্ষা অব্যাহত রাখার ঘোষণার পর এবার পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন রাজধানীর শিক্ষার্থীরা। রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ওদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে।

৩ দিনের আলটিমেটাম: তিনদিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে গতকাল সকালে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ করতে আসেন বিভিন্ন সরকারি কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। দফায় দফায় বিক্ষোভের পর বিকালে আটক ছাত্রদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে দিনের কর্মসূচি স্থগিত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ছাত্র আল আমিন। চলতি ফেব্রুয়ারির শেষ বা মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে চলমান পরীক্ষাগুলোর নতুন রুটিন প্রকাশ করার দাবি জানান তিনি। বলেন, আজকের মতো আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করছি। আমাদের সহযোদ্ধাদের যদি আজকের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া আর তিনদিনের মধ্যে নতুন রুটিন প্রকাশ করে চলমান পরীক্ষা চালু না করা হয়- তবে আমরা কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবো।

পুলিশের রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের পরীক্ষা হোক আমরাও চাই। আপনারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেন। এ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো।
পুলিশের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা থানা ফটক থেকে না সরলেও এক পর্যায়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থানের চেষ্টা করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম সেখানে তাদের অবস্থান নিতে দেয়নি।
আন্দোলন হয়েছে রাজধানীর হোম ইকোনমিক্স কলেজের সামনেও। এই কলেজটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। সেখানে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে হটিয়ে দেয়। আখি রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার অনার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালে। সেখানে ২০২১ সালে এসে আমাকে সড়কে দাঁড়াতে হচ্ছে। অনার্সই যদি শেষ না হয় তবে কবে আমি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিবো? এভাবে আমাদের ঝুলিয়ে রেখে লাভ কী তাদের। চলমান পরীক্ষা কোন যুক্তিতে বন্ধ করা হলো।
তাসনুভা আতিক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। আমাদেরকে লাথি মেরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আমাদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ।
একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন। গতকাল বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মানববন্ধন পালন করে। এর আগে ১১টার দিকে চলমান পরীক্ষাগুলো নেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হল না খুলেই পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে তারা মানববন্ধন করে এই দাবি জানান। তারা বলেন, হল ও ক্যাম্পাস না খোলার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। কিন্তু চলমান পরীক্ষাগুলো আবার চালু করা হোক। আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রক্টর প্রফেসর লুৎফর রহমান।
একই দাবিতে আন্দোলন হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অনেক আন্দোলনের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এসেছে। হল খোলা না থাকায় নতুন করে বাসা, কটেজ ভাড়া নিতে হয়েছে। এই মুহূর্তে এসে পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু নয়।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। গতকাল সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে ‘দ্রুত পরীক্ষা চাই, পরীক্ষা ছাড়া উপায় নাই’ লেখা সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে প্রশাসনিক ভবনে তারা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
কেন হঠাৎ পরীক্ষাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো চলছিল এটা ভালো দিক। কিন্তু হলগুলো খুলে দেয়া এই মুহূর্তে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রথমে শিক্ষার্থীরাই বলেছিল হলগুলো খুলতে হবে না পরীক্ষা নিয়ে নেন। কিন্তু পরীক্ষা চলমান হওয়ার পরে শিক্ষার্থীরা দাবি তুলতে শুরু করে হল খুলে দেয়ার। মূলত এ কারণেই পরীক্ষাগুলো স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status