শেষের পাতা

যেসব বিষয় আলোচনা হলো মোমেন-ব্লিনকেন ফোনালাপে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৩ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে সন্ত্রাস দমন, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে বিদ্যমান সহযোগিতা আরো বাড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি জে. ব্লিনকেন। বাংলাদেশ প্রশ্নে বাইডেন ৩প্রশাসনের মনোভাব বুঝতে গত সোমবার রাতে মন্ত্রী মোমেন ওয়াশিংটন গেছেন। সফরের প্রথম দিনেই পূর্ব নির্ধারিত শিডিউল মতে সেক্রেটারি অব স্টেটের সঙ্গে তার টেলিফোন আলোচনা হয়। করোনার কারণে মুখোমুখি বৈঠকের বিকল্প হিসেবে ওই টেলিফোন আলাপ হয় বলে জানিয়েছে ঢাকা। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস প্রচারিত ২৩শে ফেব্রুয়ারির ওই বিবৃতিতে টেলিফোন আলাপে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি কি বিষয়ে কথা বলেছেন তার সারবত্তা তুলে ধরা হয়েছে। ওয়াশিংটনের বিবৃতি মতে, দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরো গাঢ় করার উপায় নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। এছাড়া দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ একত্রে মোকাবিলায় কাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা মিয়ানমার পরিস্থিতি, বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের একটি টেকসই সমাধান চেয়েছেন। একইসঙ্গে শ্রম ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন ২০শে জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি জে ব্লিনকেন। তারা উভয়ে দক্ষিণ এশিয়া এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে ঢাকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি জে ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্ট্র্যাটেজিক স্তরে নেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন উভয় দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতাদের সফরের ওপর জোর দেন। মোমেন আশা প্রকাশ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দ্রুত বাংলাদেশ সফর করবেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখতে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় অ্যান্থোনি ব্লিনকেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে ব্লিনকেন বলেন, বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে জনস্বাস্থ্য, জ্বালানি এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দু’দেশের মধ্যে নিরাপদ বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে নীতি সহায়তা প্রত্যাশা করে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আবার বৈশ্বিক নেতৃত্বে ফেরত আসবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার জন্য নতুন মার্কিন সরকারকে অভিনন্দন জানান তিনি। বাংলাদেশ সরকারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি মতে, টেলিফোন আলাপে শুরুতে কোভিড হেলথ রেস্ট্রিকশনের কারণে মুখোমুখি বসে কথা না বলতে পারার জন্য ব্লিনকেন দুঃখ প্রকাশ করেন। উভয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে আরো গভীর করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। দু’দেশের সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করার জন্য এবং বৈশ্বিক বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য দুই নেতা সম্মত হন। তারা কোভিড পরিস্থিতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা, রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ‘লক্ষণীয়’ অর্থনৈতিক সাফল্য এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের ত্বরিত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আলাপকালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে বাইডেন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বলেন, মিয়ানমারে এখন সামরিক সরকার রয়েছে। এই মুহূর্তে প্রত্যাবাসন আলোচনা এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল  নিয়োগ করে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সম্প্রতি একজন ইহুদি খুনিকে ফেরত দিয়েছে। রাশেদ চৌধুরী ইতিহাসের একজন জঘন্য খুনি। তাই তাকে ফেরত পাঠানো জরুরি। আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে এনার্জি খাত ছাড়াও আইসিটি, গ্রিন এনার্জি ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, ঢাকার তরফে আগেই জানানো হয়েছে, সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থোনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ ছাড়াও মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেন্দেজসহ একাধিক আইন প্রণেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাছাড়া কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)-এ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ও নিউলাইনস ইনস্টিটিউটে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দু’টি আলাদা আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তিনি। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইউএস চেম্বারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক এবং ওয়াশিংটন পোস্টে একটি সাক্ষাৎকারও দেয়ার কথা রয়েছে তার। ঘোষিত শিডিউল মতে, আগামী ২৮শে ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status