প্রথম পাতা

সরকারি ঘোষণায় ক্যাম্পাসে হতাশা

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন

ক্যাম্পাসজুড়ে শূন্যতা। নেই প্রাণের উচ্ছ্বাস। গত বছরের ১৭ই মার্চ থেকে তালা ঝুলছে ক্লাসরুমে। উচ্ছলতায় ভরপুর রঙিন ক্যাম্পাসে ফিরতে মুখিয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার দাবিতে ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এরমধ্যেই গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী আরো তিন মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। সরকারি এ ঘোষণায় হতাশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাখো শিক্ষার্থী। তারা দ্রুত ফিরতে চান ক্লাসরুমে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মার্জিয়া মৌ বলেন, ব্যাগ গোছানো শুরু করেছিলাম। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা শুনে হতাশা ভর করেছে। আর কতোদিন বাড়িতে থাকা যায়। কক্সবাজারে করোনা নাই। কয়েক লাখ লোক যেতে পারে। তিনি বলেন, সব করোনা জায়গা করে নিয়েছে ভার্সিটিতে?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নীলিমা ফারজানা বলেন, আমি সেখানে তিনটি টিউশনি করাতাম। স্বাধীন জীবন। এখন ঘরে বন্দি। কতোদিন থাকা যায়। এভাবে থাকলে না হচ্ছে লেখাপড়া না থাকতে পারছি সুস্থ। অনলাইনে ক্লাসের কথা শুনলেই হাসি পায়। মোবাইলেই মাঝে মাঝে কথা বলতে পারি না।

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৭ই মে আবাসিক হল খোলা ও ২৪শে মে থেকে পরীক্ষা গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, সে অনুযায়ী হল খোলা ও পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। এরইমধ্যে ১৩ই মার্চ হল খোলার যে সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছিল তা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বেলা সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তবে আল্টিমেটাম অব্যাহত রাখছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ছাত্রলীগ। এর বিরোধিতা করেছে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভিসি বলেন, হলে ওঠার প্রস্তুতি নিতে দুই সপ্তাহ সময় লাগে। সেজন্য অনুষদ ও বিভাগ সমন্বয় করে ১৭ই মে’র দুই সপ্তাহ পর থেকে এ কার্যক্রম চলবে। কেন্দ্রীয়ভাবে বড় কোনো পরীক্ষা এখন নেবো না। বিভাগীয় পর্যায়ে নেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের সম্মতি, সামর্থ্য ও সুরক্ষা লাগবে। এখন হল খোলার জন্য টিকা নেয়া পূর্বশর্ত। এ বিষয়গুলো এখন একেবারেই বিভাগীয় পর্যায়ে সীমিত থাকবে।
অধিভুক্ত কলেজের পরীক্ষার বিষয়ে ভিসি বলেন, সাত কলেজের পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রেও ১৭ই মে’র পূর্বের পরীক্ষাগুলো আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় কোনো পরীক্ষা থাকবে না। সরকারের ভ্যাকসিন দেয়ার প্রটোকল আছে। সেটি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দেখবে। এটা সরকারের প্রায়োরিটি।
১৭ই এপ্রিলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকার প্রথম ডোজের কার্যক্রম শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান ভিসি।

এদিকে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পর হল খোলার বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক জুনায়েদ হোসাইন খান বলেন, আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছি এবং ৭২ ঘণ্টা পর্যন্তই অপেক্ষা করবো এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভা আছে এটাও আমরা পর্যবেক্ষণ করবো।
জাবি প্রতিনিধি জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলে অবস্থান করার ঘোষণা দিয়ে সাময়িক আন্দোলন স্থগিত করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একাংশ। গতকাল দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এ সময় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নোশিন আদিবা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের অধিকাংশ দাবি মেনে নিয়েছে। এ কারণে আমাদের আন্দোলনের সকল কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা হলে থাকবো।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তাবিয়া ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সকল দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদেরকে হলে থাকতে কোনো বাধা দিবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তার প্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আমরা আবারো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামবো।

এদিকে হল ছাড়তে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির মিটিং শেষে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ইবি প্রতিনিধি জানান, হল খুলে দেয়ার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। স্থগিতকৃত পরীক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করে দেয়া ও আগামী ১লা মার্চের মধ্যে না খুললে জোর করে হলে উঠে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, যেখানে সবকিছু স্বাভাবিক চলছে সেখানে করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা প্রহসনমূলক। আগামী ১৭ই মে হল ও ২৪শে মে ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমরা এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে পুনর্বিবেচনার দাবি করছি। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর ইতিমধ্যে ইবিতে সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিপাকে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান করছি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে হল-ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করুন। এ সময় আগামী ১লা মার্চের মধ্যে হল খুলে না দিলে জোর করে হলে প্রবেশ করবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

সম্মেলন শেষে ডায়না চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে সমবেত হয়। এর আগে গত রোববার ও সোমবার একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status