বাংলারজমিন

সিলেটে জ্বালানি সংকট কাটাতে ধর্মঘটের হুমকি

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৫৯ অপরাহ্ন

সিলেটে গত চারদিন ধরে জ্বালানি তেল অকটেন নেই। ডিজেল ও পেট্রোল যা আছে তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। গত কয়েক মাস ধরে একইভাবে সিলেটে জ্বালানি তেল সংকট চলছে। এ নিয়ে গতকাল সিলেটের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতারা। তারা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন- রোববারের মধ্যে সংকটের সমাধান না হলে ধর্মঘটে যাবেন। সিলেটে জ্বালানি তেলের জোগান মিলে দুইভাবে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে- চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে আসে জ্বালানি তেল। আর অপরটি হচ্ছে- স্থানীয় সিলেট গ্যাস ফিল্ড লি. থেকে উৎপাদিত তেল। গত ৬ মাস ধরে সিলেট গ্যাস ফিল্ডের তেল মিলছে না। কারণ- বিএসটিআইয়ের এক অভিযানের পর থেকে নিম্নমানের অজুহাতের দোহাই দিয়ে ওই গ্যাস ফিল্ডে তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে একমাত্র ভরসা ছিল চট্টগ্রাম থেকে রেলপথে আসা তেল। কিন্তু ফেঞ্চুগঞ্জে তেলবাহী রেলগাড়ি লাইনচ্যুত হওয়ার পর থেকে রেলপথেও জ্বালানি তেল সরবরাহ কমে গেছে। সিলেটের পেট্রোলপাম্প মালিকরা জানিয়েছেন- সংকট কাটাতে তারা কখনো শ্রীমঙ্গল, কখনো আশুগঞ্জ থেকে নিজেদের উদ্যোগে তেল নিয়ে আসেন। লোকসান দিয়েও তারা সিলেটের মানুষের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এরপরও সংকট দূর হচ্ছে না। চাহিদার তুলনায় তেল সরবরাহ কম হওয়ায় বিভাগের ১১৪টি পেট্রোল পাম্প বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তারা জানান- চাহিদামতো জ্বালানি তেল সরবরাহের দাবিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটার্স এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের গত ২৭ ডিসেম্বর ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। এ নিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন। তখন সপ্তাহে তিনদিন জ্বালানি তেল আসতো। প্রতিটি ট্রেনে করে ২০টি ওয়াগনে তেল আসতো। এরপরও ওই সময় সংকট ছিল। যেহেতু সিলেটের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তেল তারা পাচ্ছেন না সেহেতু তাদের চাহিদা হয়ে পড়েছিলো দ্বিগুণ। ওই চাহিদার অর্ধেক তেল ডিসেম্বরেই সরবরাহ করা হতো। এরপর ফেঞ্চুগঞ্জে তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে নতুন করে সংকট তীব্র হয়েছে। আগে যেখানে ২০টি ওয়াগন আসতো এখন আসে ১০টি ওয়াগন। এসব ওয়াগনের অকটেন আনাই হয় না। ডিজেল ও কেরোসিন আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান- সিলেটে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ লিটার জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। আর এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ৩-৪ লাখ লিটার তেল। সরবরাহ না থাকার কারণেই সংকট তীব্র হয়েছে বলে জানান তারা। এদিকে- গতকাল সকালে সিলেট বিভাগ পেট্রোল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ.ন.ম বদরুদ্দোজার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় তারা সমস্যা ও তেল সংকটের বিষয়ে অবগত করেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলেটে  তেলের সংকট সমাধান করার জন্য বিষয়টি রেলওয়ের কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘জেলা প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আমরা ডিসেম্বরে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। এরপরও জেলা প্রশাসন থেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। বরং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না আমরা মনে করছি। এ কারণে গতকাল জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করে আমরা জানিয়ে দিয়েছি- এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে তারা ধর্মঘটে যাবেন।’ পাম্প মালিকরা অভিযোগ করেন- ব্যক্তিস্বার্থের কারণে সিলেটের গ্যাস ফিল্ডের খনি থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। সিলেটের গোলাপগঞ্জের গ্যাস ফিল্ড থেকে তেল উৎপাদন বন্ধ করে রেখেছে একটি চক্র। তেল বিক্রি না করায় এই গ্যাস ফিল্ড থেকে সরকারের প্রায় আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার তেল নষ্ট হচ্ছে। ওই তেলের মান উচ্চমানের। এখন যে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে সেটি নিম্নমানের বলে দাবি করেন পাম্প মালিকরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status