প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকারে জোনায়েদ সাকি

বৃহত্তর ঐক্যের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি

শাহনেওয়াজ বাবলু

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৯:৩৮ অপরাহ্ন

বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করার কথা জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের দলের পরিকল্পনাও তুলে ধরেছেন তরুণ এই নেতা। বলেছেন, দীর্ঘদিন থেকেই দেশে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার কাজ চলছে। সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এখন এ তৎপরতা আরো বাড়ছে । এ ছাড়া স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্‌যাপনে তার দলসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মধ্যে রয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা বেশ কয়েকটি বামদল ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি একটি জোট আকারে। আমরা প্রাথমিকভাবে বলছি, আমরা একটি একদফা আন্দোলনের মধ্যে রয়েছি। এক দফা হচ্ছে এই ভোটবিহীন সরকারের পদত্যাগের জন্য সংগ্রাম এবং রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর। সেখানে আমাদের সঙ্গে যাদের চিন্তার মিল আছে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। এই ঐক্য আরো সম্প্রসারণ করার চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি এক মঞ্চ, যৌথ, যুগপৎ এবং সংগ্রামের মাধ্যমে রাজপথে জনগণের ঐক্য।

আমরা গণমানুষের রাজনীতি করছি। গণমানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে। গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা হলেই এই দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর হবে। আমাদের ঐক্য কোনো কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য না। এটা একটা ঘনিষ্ঠ ঐক্য। সেই ঐক্যের রূপ কী হবে সেটা রাজপথ নির্ধারণ করবে। কিন্তু একটা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই ঐক্য হতে পারে বলে আমরা মনে করি। এতে করে একটা একক দলও হতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা ২০১৭ সাল থেকে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। এর জন্য আমরা বামপন্থিদের আহ্বান জানিয়েছি, এই দেশে লিবারেল গণতন্ত্রী নামে পরিচিত যে দলগুলো আছে তাদের আহ্বান জানিয়েছি, বিএনপি সহ অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকেও আহ্বান জানিয়েছি আমরা।
আমরা ভেবেছিলাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর আন্দোলনের একটা সূচনা হবে। কিন্তু তারা আন্দোলনে না গিয়ে নির্বাচনের পথটাকেই বেছে নিয়েছে। ফলে আন্দোলন সংগ্রামটা যে হারে একটি শক্তি অর্জন করতে পারতো সে জায়গাতে যেতে পারেনি। মানুষ এখন আন্দোলন চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আবারো আহ্বান জানিয়েছি জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার। বিশেষভাবে মওলানা ভাসানীর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২০শে নভেম্বর আমাদের দলের সমাবেশ থেকে আর ২৮শে নভেম্বর আমরা চার সংগঠনের যৌথ সমাবেশ থেকে বর্তমান এই অগতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছি আমরা। আমরা আবারো দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানাই যে যার অবস্থান থেকে অতিদ্রুত আন্দোলনে সম্পৃক্ত হোন।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা। বাংলাদেশের নাগরিকরা এটা উদ্‌যাপন করবে- এটাই স্বাভাবিক। এই কর্মসূচি উদ্‌যাপনে আমাদের দলও শরিক হতে চায়। এ উপলক্ষে আমরা আমাদের কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এ ছাড়া বছরব্যাপী আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। বিশেষভাবে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি, স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে বাংলাদেশের যে অর্জন, আর এখন পর্যন্ত যে ব্যর্থতাগুলো আছে এবং বাংলাদেশের যে চ্যালেঞ্জসমূহ আছে এসব নিয়ে আলোচনা করবো। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ একটি আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি রাষ্ট্র পেয়েছি। যে আকাঙ্ক্ষা এবং প্রাপ্তির জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে সেটা আমরা আদৌ পেয়েছি কিনা এর একটা হিসাব করা দরকার।

জোট বা ঐক্যের বিষয়ে বিএনপি’র সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের রাজনৈতিক অবস্থানটা একেবারেই স্পষ্ট, যেটা আমরা ইতিমধ্যে ঘোষণা আকারে জানান দিয়েছি। ফলে এ বিষয়ে বিএনপি’র সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। বিএনপি’র সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোট করোনাকালের শুরুতেই করণীয় প্রসঙ্গ নিয়ে যৌথ আলোচনা করেছিল। সেটা ছিল জাতীয় ভিত্তিতে, রাজনৈতিক ভিত্তিতে একটা জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য। সরকারি দল সে বিষয়টাতে সাড়া না দেয়ায় জাতীয় উদ্যোগের সে চেষ্টাটি সফল হয়ে ওঠেনি। তবে আশা করছি, সময় মতো সব আলোচনা হবে।

এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবেন কিনা জানতে চাইলে সাকি বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে জনগণের নির্বাচন বলে তো কিছু নেই। নির্বাচনকে তো তারা পরিপূর্ণভাবে তামাশায় পরিণত করেছে। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা। সেটার জন্য বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং বাংলাদেশে এমন একটা জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা যাতে করে পরবর্তী নির্বাচন এবং এর মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হবে তার মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের রূপান্তর ঘটবে। যেখানে আর কেউই এই সরকারের মতো দেশকে পুরোপুরি নিজেদের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে না পারে। আর দেশ একটা গণতান্ত্রিক অবস্থার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হবে এবং সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থাকবে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ইবরাহিমের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওনার সঙ্গে আমার জোট গঠনের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে একটা কথা হচ্ছে সবাই সবার অবস্থান থেকে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এই সব উদ্যোগগুলো যখন রাজপথের লড়াইয়ে পরিণত হবে তখনই সেটা মানুষের আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status