প্রথম পাতা

সিলেটে পরিবহন শ্রমিকরা পিটিয়ে হত্যা করলো ব্যাংক কর্মকর্তাকে

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৯:৩৬ অপরাহ্ন

সিলেটে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নগরীর কোর্ট পয়েন্টে গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ভাড়া নিয়ে বচসাকে কেন্দ্র করে অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিকদের দলবেঁধে গণপিটুুনিতে এই ব্যাংক কর্মকর্তা মারা গেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে- নগরীর ব্যস্ততম ওই এলাকায় খুনের ঘটনা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধরের খবর জানলেও পুলিশ তাৎক্ষণিক এসে রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। পুরো ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গিয়ে পুলিশ লাশ খুঁজে পায়। রাতভর ওই লাশের কোনো পরিচয়ও পায়নি পুলিশ। পরে মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে স্বজনের সন্ধান মেলে। সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট। ব্যস্ততম একটি এলাকা। সবসময় মানুষের ভিড় থাকে ওই এলাকায়। ওখানে রয়েছে সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনাসহ কয়েকটি পরিবহনের অস্থায়ী স্ট্যান্ড। এর মধ্যে মধুবন সুপার মার্কেটের সামনের অংশ থেকে সিএনজি অটোরিকশা যায় তামাবিল রুটে। জৈন্তাপুর থেকে সরসরি সিএনজি আসে ওখানে। জৈন্তাপুরের গ্যাস ফিল্ড শাখার অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মওদুদ আহমদ। তার কর্মস্থল হরিপুরের গ্যাস ফিল্ডে হলেও তিনি বসবাস করেন সিলেট নগরীর রাজারগলি এলাকার একটি ভাড়া বাসায়। তার মূল বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরিপুর উপজেলার টেংগুড়িপাড়া গ্রামে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- মওদুদ আহমদ হরিপুর শাখার অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। শনিবার তিনি নগরীর দরগাহ গেট থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে কোর্ট পয়েন্টে পৌঁছেন। স্থানীয় কোর্ট পয়েন্টে সিএনজি থেকে নামার পর কয়েকজন যুবক তার উপর হামলে পড়ে। সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ডের ফাঁকা স্থানে নিয়ে তাকে এলোপাতারি মারধর করা হয়। প্রায় ১৫ মিনেটের মারধরে এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়েন ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ। এ সময় দু’জন সিনিয়র অটোরিকশা শ্রমিক ওই কর্মকর্তাকে সিএনজি অটোরিকশাতে তুলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। এদিকে- হাসপাতালে ভর্তির পরপরই ওই দুই সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক চলে আসেন। তারা তাদের পরিচয়ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেননি। পুলিশ জানায়, রাত ১০টার দিকে কোর্ট পয়েন্টের ওই ঘটনাটি কোতোয়ালি থানা পুলিশের কানে যায়। এরপর কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি দল এসে কোর্ট পয়েন্ট এলাকা পরিদর্শন করে। এ সময় তারা সিএনজিচালক সহ আশেপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললেও ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি। পরে পুলিশের ওই টিম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুসন্ধান চালায়। সেখানে গিয়ে তারা ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদের সন্ধান পায়নি। দু’জন সিএনজি অটোরিকশাচালক তাকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছেন বলে হাসপাতালের লোকজন পুলিশকে অবগত করে। তবে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ওই ব্যাংক কর্মকর্তার পুরো পরিচয় পুলিশ পায়নি। রাতে এই অবস্থায় লাশ হাসপাতালে ছিল। মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে এক স্বজনের সন্ধান মেলে। পরে ওই স্বজন এসে লাশ শনাক্ত করেন। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ মানবজমিনকে জানান- কোর্ট পয়েন্টের ওই ঘটনার খবর পুলিশের কাছে পৌঁছা মাত্রই তারা অনুসন্ধান শুরু করেন। একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়ে এ ধরনের ঘটনার কোনো সত্যতা পায়নি। রাতে অধিকতর অনুসন্ধানের পর ঘটনার সত্যতা মেলে। তিনি জানান, নিহত আব্দুল ওয়াদুদ জৈন্তাপুরের এক ব্যাংক কর্মকর্তা। ভাড়া নিয়ে বচসার জের ধরে কোর্ট পয়েন্টের সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। খুনের ঘটনায় নিহত মওদুদের বড়ভাই আব্দুল ওয়াদুদ গতকাল বিকালে বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের টুকেরগাঁও পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সিএনজি অটোরিকশা চালক নোমান হাছনুর সহ কয়েকজনকে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযানে রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে, ভাড়া নিয়ে বচসার জের ধরে সংঘটিত এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। দেখা দিয়েছে রহস্যও। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- শুধুমাত্র ভাড়া নিয়ে বচসার জের ধরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা মনে করেন না। তারা বলেন- দীর্ঘদিন ধরে তারা ওই এলাকায় ব্যবসা করছেন। কিন্তু কখনো ভাড়া নিয়ে বচসা কিংবা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। ঘটনায় অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা। অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম সিলেটের ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ খুনের ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি ঘটনার রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status