বিশ্বজমিন
দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদন
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রকে জানতে হবে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের ধরণ স্বতন্ত্র, চীন সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়
রাজেশ রাজাগোপালান
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৪:৫৬ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রশাসন এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উভয়েই চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কথা বলছেন। এতে নয়াদিল্লির কিছুটা স্বস্তি পাওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন একটি শীতল যুদ্ধ হলে তাতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক গভীর হতে সহায়ক হবে। নিশ্চিত হবে যে, ভারত শুধু একা চীনকে মোকাবিলা করে না। কিন্তু নয়া দিল্লি ও ওয়াশিংটন উভয়কেই বুঝতে হবে যে, যুক্তরাষ্ট্র-সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধের থেকে অনেক ভিন্ন হবে চীনের সঙ্গে উদীয়মান শীতল যুদ্ধ। এটা একটা সমস্যা হতে পারে। কারণ, এর ফলে নয়া দিল্লি বা ওয়াশিংটন দৃশ্যত কেউই এই ভিন্নতার পরিণতি পুরোপুরি মুখোমুখি হবে বলে মনে হয় না।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিগত শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যেমনটা দুর্বল ছিল এখন দ্বিমেরুকৃত শীতল যুদ্ধ হলে তাতে এই দুটি দেশই ভিন্ন এবং দুর্বল অবস্থানে থাকবে। প্রথম শীতল যুদ্ধের সময় যতটা আধিপত্য বিস্তার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তারা এখন আর সেই অবস্থানে নেই। তখন তারা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক শক্তিধর। কিন্তু বর্তমানে এসব খাতের মধ্যে মাত্র একটিতে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উল্লেখ করার মতো নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। তাহলো বৈশ্বিক সামরিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত সংঘাতের সময়ের চেয়ে এটা এখন কম প্রাসঙ্গিক। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো না হয়ে চীনের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার। তাদের লক্ষ্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা নয়।
এটা তাদের দূরদর্শিতা এবং যেহেতু চীন অধিক পরিমাণ শক্তি অর্জন করছে তাদের উচ্চাকাঙ্খা ভবিষ্যতে বিস্তৃত করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিকক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের দিকে বেইজিং দৃষ্টি দেয়ার ফলে এটা তাদেরকে কিছু সুবিধা এনে দিয়েছে। নিজেদের সীমানার কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সামরিক ভারসাম্যের বিষয়টি, ভারত মহাসাগর ও অন্যান্য স্থানে যেমন ভারসাম্যহীন হবে, তেমনটি নয়। নিশ্চিতভাবে, ভূগোল যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সীমাবদ্ধ করেছিল, চীনের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু চীন যদি সিদ্ধান্ত নেয় তার সেনাবাহিনীকে উপক’লের বাইরে পাঠাতে তাহলেই তা বড় কিছু।
অধিক ভারসাম্যপূর্ণ স্নায়ুযুদ্ধ
একটি বড় পার্থক্য হলো, সোভিয়েতে ইউনিয়নের মতো নয় চীন। অর্থনীতির পাওয়ারহাউজ চীন। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এরা এত ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট যে, তা থেকে বহু দেশে তারা পেয়ে থাকে বৃহৎ সুবিধা। এটা নিশ্চিত যে, চীন তার এসব সুবিধাকে অযৌক্তিকভাবে ব্যবহার করে চলেছে এবং স্নায়ুযুদ্ধ যতই তীব্র হচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, তাদের মিত্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধন ততই বেশি মাত্রায় বিকশিত হবে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বড় রকমের ভারসাম্যের একটি উৎস হলো, তারা অধিক উৎপাদনশীল অর্থনীতির ওপর বসে আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের এমনটা কখনো ছিল না। যা এই শীতল যুদ্ধের প্রতিযোগিতাকে আরো ভারসাম্যময় করে তোলে।
প্রযুক্তির ওপরও এটা প্রযোজ্য। ১৯৭০-এর দশকে প্রযুক্তিতে বিশেষ করে ভোক্তা বিষয়ক ইলেকট্রনিকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দ্রুতই অতিক্রম করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীন এই প্রতিযোগিতা ধরে রেখেছে। এর কারণ, বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থানগত কারণে। এ ছাড়া আছে তাদের নিজস্ব বেসরকারি খাতের উচ্চাকাঙ্খা। প্রথমদিকে লক্ষণ দেখা গিয়েছিল যে, মুক্ত উদ্যোগে সহজাত ক্ষমতার বিষয়ে স্বস্তিতে ছিল না শি জিনপিংসহ চীনা শাসকগোষ্ঠী। তারা দমন পীড়নকে বেছে নিলেন। বেসরকারি খাতকে চেপে ধরলেন, তাদেরকে স্বাধীনতা দেয়ার পরিবর্তে। সম্ভবত মুক্তবাজার ও মুক্ত নয় এমন সমাজের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে উদারপন্থিরাই ঠিক ছিলেন। সম্ভবত তারা কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমাধান করবে রাষ্ট্র।
আমরা শুধু ধারণা করতে পারি যে, শি জিনপিংয়ের উদ্ভট বিষয়গুলো চীনের ভিতরেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। এবং তার পরিণতিতে দুর্বল হয়ে পড়বে চীন। এটাই চীনের শক্তির ভারসাম্যতার জটিলতা অধিক কার্যকরভাবে সহজ করে দিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এটা শুধুই ভবিষ্যতের আশা। অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন বড় প্রযুুক্তি নেই, যা দিয়ে সে চীনের উপরে উঠে যাবে। তাই এটা হবে অধিক পরিমাণে ভারসাম্যপূর্ণ শীতল যুদ্ধ, যেখানে অংশীদারদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সতর্ক হতে হবে। এটা কাটসাসহ (কাউন্টারিং অ্যামেরিকা'স এডভার্সারিস থ্রো স্যাংশন এক্ট) অন্য যে কোনো ধরণের অবরোধের পেছনে শক্তি নষ্ট করতে পারবে না।
মাঝে আটকা পড়েছে ভারত
ভারতের মতো সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে অ্যামেরিকান কুয়ান্ডেরি কোনো সুবিধা প্রদান করবে না। প্রথম øায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের হাতে ছিল সোভিয়েত ও চীন কার্ড। এখন সেটি আর নেই। উল্টো ভারত ও চীনের মধ্যে লাদাখ থেকে জাতিসংঘ নিয়ে উত্তেজনা বিদ্যমান রয়েছে। ভারত কিভাবে চীনের কার্ড খেলবে? চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মাধ্যমে? না, সেটি সম্ভব নয়। ফলে এখানে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নিশ্চিতভাবে খেলতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই ভারতকে শক্তিশালী করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা বাতিল করতে পারে। ওয়াশিংটন নতুন করে ভাবতে পারে যে, ভারতের চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
ফলে আগের øায়ুযুদ্ধে ভারতের যে ভূমিকা ছিল তা এবার বজায় থাকবে না। এটি ভারতকে বিপদে ফেলেছে। তবে এবার এই বিপদ আরো ভয়ংকর হবে কারণ চীনের অবস্থান ভারতের পাশেই। চীন ভারতের জন্য সরাসরি রাজনৈতিক হুমকি একইসঙ্গে ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্যেও হুমকি। ভারত পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এটি হয়তো চীনের বিরুদ্ধে দারুণ যুদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু চীনের সামরিক শক্তি ভারতের থেকে অনেক বেশি। ফলে এই যুদ্ধে ভারতের জয় প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া, এখানে ভারতের জন্য আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ১৯৬০ সালে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো বন্ধুত্ব ছিলনা, কিন্তু এখন সেটি রয়েছে। আর এই বন্ধুত্বের একটিই কারণ, সেটি হচ্ছে ভারত। তাই নয়া দিল্লিকে মাথায় রাখতে হবে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে ভারতকে এখন একইসঙ্গে দুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে।
একটি বহুমেরুর কল্পনা
ভারতের মধ্যে এখনো একটু বহুমেরুর ধারণা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব দ্বিমেরুর এখানে বহুমেরুভিত্তিক ভাবনার স্থান নেই। এই ধারণার একটি পরিণতি কৌশল গ্রহণের সময় দেখা যায়। একটি স্নায়ুযুদ্ধ ভারতের মতো দুর্বল শক্তির জন্য সুবিধাজনক। তবে যদি এটি তার এই দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত থাকে তাহলে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলও এমনভাবে সাজাতে হবে যেনো স্নায়ুযুদ্ধে সে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ।
( লেখক জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রফেসর)
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিগত শীতল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যেমনটা দুর্বল ছিল এখন দ্বিমেরুকৃত শীতল যুদ্ধ হলে তাতে এই দুটি দেশই ভিন্ন এবং দুর্বল অবস্থানে থাকবে। প্রথম শীতল যুদ্ধের সময় যতটা আধিপত্য বিস্তার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, তারা এখন আর সেই অবস্থানে নেই। তখন তারা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিক শক্তিধর। কিন্তু বর্তমানে এসব খাতের মধ্যে মাত্র একটিতে যুক্তরাষ্ট্র শুধু উল্লেখ করার মতো নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। তাহলো বৈশ্বিক সামরিক শক্তি। যুক্তরাষ্ট্র-সোভিয়েত সংঘাতের সময়ের চেয়ে এটা এখন কম প্রাসঙ্গিক। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো না হয়ে চীনের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তার। তাদের লক্ষ্য বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা নয়।
এটা তাদের দূরদর্শিতা এবং যেহেতু চীন অধিক পরিমাণ শক্তি অর্জন করছে তাদের উচ্চাকাঙ্খা ভবিষ্যতে বিস্তৃত করতে পারে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিকক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের দিকে বেইজিং দৃষ্টি দেয়ার ফলে এটা তাদেরকে কিছু সুবিধা এনে দিয়েছে। নিজেদের সীমানার কাছাকাছি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সামরিক ভারসাম্যের বিষয়টি, ভারত মহাসাগর ও অন্যান্য স্থানে যেমন ভারসাম্যহীন হবে, তেমনটি নয়। নিশ্চিতভাবে, ভূগোল যেভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নকে সীমাবদ্ধ করেছিল, চীনের ক্ষেত্রেও তাই। কিন্তু চীন যদি সিদ্ধান্ত নেয় তার সেনাবাহিনীকে উপক’লের বাইরে পাঠাতে তাহলেই তা বড় কিছু।
অধিক ভারসাম্যপূর্ণ স্নায়ুযুদ্ধ
একটি বড় পার্থক্য হলো, সোভিয়েতে ইউনিয়নের মতো নয় চীন। অর্থনীতির পাওয়ারহাউজ চীন। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এরা এত ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট যে, তা থেকে বহু দেশে তারা পেয়ে থাকে বৃহৎ সুবিধা। এটা নিশ্চিত যে, চীন তার এসব সুবিধাকে অযৌক্তিকভাবে ব্যবহার করে চলেছে এবং স্নায়ুযুদ্ধ যতই তীব্র হচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র, তাদের মিত্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক বন্ধন ততই বেশি মাত্রায় বিকশিত হবে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বড় রকমের ভারসাম্যের একটি উৎস হলো, তারা অধিক উৎপাদনশীল অর্থনীতির ওপর বসে আছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের এমনটা কখনো ছিল না। যা এই শীতল যুদ্ধের প্রতিযোগিতাকে আরো ভারসাম্যময় করে তোলে।
প্রযুক্তির ওপরও এটা প্রযোজ্য। ১৯৭০-এর দশকে প্রযুক্তিতে বিশেষ করে ভোক্তা বিষয়ক ইলেকট্রনিকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে দ্রুতই অতিক্রম করে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীন এই প্রতিযোগিতা ধরে রেখেছে। এর কারণ, বৈশ্বিক উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থানগত কারণে। এ ছাড়া আছে তাদের নিজস্ব বেসরকারি খাতের উচ্চাকাঙ্খা। প্রথমদিকে লক্ষণ দেখা গিয়েছিল যে, মুক্ত উদ্যোগে সহজাত ক্ষমতার বিষয়ে স্বস্তিতে ছিল না শি জিনপিংসহ চীনা শাসকগোষ্ঠী। তারা দমন পীড়নকে বেছে নিলেন। বেসরকারি খাতকে চেপে ধরলেন, তাদেরকে স্বাধীনতা দেয়ার পরিবর্তে। সম্ভবত মুক্তবাজার ও মুক্ত নয় এমন সমাজের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে উদারপন্থিরাই ঠিক ছিলেন। সম্ভবত তারা কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমাধান করবে রাষ্ট্র।
আমরা শুধু ধারণা করতে পারি যে, শি জিনপিংয়ের উদ্ভট বিষয়গুলো চীনের ভিতরেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। এবং তার পরিণতিতে দুর্বল হয়ে পড়বে চীন। এটাই চীনের শক্তির ভারসাম্যতার জটিলতা অধিক কার্যকরভাবে সহজ করে দিতে সাহায্য করবে। কিন্তু এটা শুধুই ভবিষ্যতের আশা। অল্প সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন বড় প্রযুুক্তি নেই, যা দিয়ে সে চীনের উপরে উঠে যাবে। তাই এটা হবে অধিক পরিমাণে ভারসাম্যপূর্ণ শীতল যুদ্ধ, যেখানে অংশীদারদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সতর্ক হতে হবে। এটা কাটসাসহ (কাউন্টারিং অ্যামেরিকা'স এডভার্সারিস থ্রো স্যাংশন এক্ট) অন্য যে কোনো ধরণের অবরোধের পেছনে শক্তি নষ্ট করতে পারবে না।
মাঝে আটকা পড়েছে ভারত
ভারতের মতো সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে অ্যামেরিকান কুয়ান্ডেরি কোনো সুবিধা প্রদান করবে না। প্রথম øায়ুযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের হাতে ছিল সোভিয়েত ও চীন কার্ড। এখন সেটি আর নেই। উল্টো ভারত ও চীনের মধ্যে লাদাখ থেকে জাতিসংঘ নিয়ে উত্তেজনা বিদ্যমান রয়েছে। ভারত কিভাবে চীনের কার্ড খেলবে? চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার মাধ্যমে? না, সেটি সম্ভব নয়। ফলে এখানে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নিশ্চিতভাবে খেলতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই ভারতকে শক্তিশালী করার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল তা বাতিল করতে পারে। ওয়াশিংটন নতুন করে ভাবতে পারে যে, ভারতের চীনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা ছাড়া আর কোনো সুযোগ নেই।
ফলে আগের øায়ুযুদ্ধে ভারতের যে ভূমিকা ছিল তা এবার বজায় থাকবে না। এটি ভারতকে বিপদে ফেলেছে। তবে এবার এই বিপদ আরো ভয়ংকর হবে কারণ চীনের অবস্থান ভারতের পাশেই। চীন ভারতের জন্য সরাসরি রাজনৈতিক হুমকি একইসঙ্গে ভারতের সার্বভৌমত্বের জন্যেও হুমকি। ভারত পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। এটি হয়তো চীনের বিরুদ্ধে দারুণ যুদ্ধ করতে পারবে। কিন্তু চীনের সামরিক শক্তি ভারতের থেকে অনেক বেশি। ফলে এই যুদ্ধে ভারতের জয় প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়া, এখানে ভারতের জন্য আরেকটি সমস্যা রয়েছে। ১৯৬০ সালে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো বন্ধুত্ব ছিলনা, কিন্তু এখন সেটি রয়েছে। আর এই বন্ধুত্বের একটিই কারণ, সেটি হচ্ছে ভারত। তাই নয়া দিল্লিকে মাথায় রাখতে হবে, ভবিষ্যতের যুদ্ধে ভারতকে এখন একইসঙ্গে দুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই লড়তে হবে।
একটি বহুমেরুর কল্পনা
ভারতের মধ্যে এখনো একটু বহুমেরুর ধারণা ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব দ্বিমেরুর এখানে বহুমেরুভিত্তিক ভাবনার স্থান নেই। এই ধারণার একটি পরিণতি কৌশল গ্রহণের সময় দেখা যায়। একটি স্নায়ুযুদ্ধ ভারতের মতো দুর্বল শক্তির জন্য সুবিধাজনক। তবে যদি এটি তার এই দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত থাকে তাহলে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলও এমনভাবে সাজাতে হবে যেনো স্নায়ুযুদ্ধে সে তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ।
( লেখক জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রফেসর)