অনলাইন

ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজ

৪ বছরেও কমেনি ভোগান্তি-দুর্ভোগ

পিয়াস সরকার

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:০০ অপরাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের চার বছর পূর্ণ হয়েছে গত মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০১৭ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, বেগম বদরুননেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে।

ঐতিহ্যবাহী এই ৭ কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য ঢাবি’র অধিভুক্ত করা হলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এখনো নানান জটিলতায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। অধিভুক্তির মূল উদ্দেশ্য ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন’ অর্জন করতে সাত কলেজ সক্ষম হয়নি বলে অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। তীব্র সেশনজট, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা, অনাকাক্সিক্ষত ফলাফল বিপর্যয় ছাড়াও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত সাত কলেজ। মূলত অপরিকল্পিতভাবে কোনোরকম পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই অধিভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা এর মূল কারণ। এসব সমস্যা সমাধানের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছে বহুবার। আন্দোলনে পুলিশ হামলা অথবা ঢাবি শিক্ষার্থীদের কর্তৃক অপমানিত ও অপদস্থ হতে হয়েছে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলের আঘাতে দুই চোখের জ্যোতিও হারাতে হয় শিক্ষার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজের সিদ্দিকুর রহমানকে। এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা বলেন, পড়াশোনার মানোন্নয়ন দূরে থাক আমরা এখনো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পিছিয়ে গিয়েছি। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো একাডেমিক ক্যালেন্ডার আমরা পাইনি। সমস্যার সমাধানে নেই কোনো ডেডিকেটেড ডেস্ক। কোনো কিছু নিয়ে সমস্যা হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলে ঢাবিতে যেতে। আবার ঢাবিতে গেলে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বলে এটা তোমাদের কলেজের কাজ। প্রশাসন যদি আন্তরিক না হয় তবে সমস্যা কীভাবে সমাধান হবে? সবার আন্তরিকতা থাকলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করতে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে আলাদা ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ চালু করার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু করাসহ অন্যান্য সমস্যার যথাযথ সমাধানের দাবিতে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নীলক্ষেত অবরোধ করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়। অধিভুক্ত এই সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ কলেজে ‘ডেডিকেটেড ডেস্ক’ বসানো হবে বলেও জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কাগজে কলমেই আটকে থাকে। গত দেড় বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ভুল ফলাফল প্রকাশ হয়েছে আগের মতোই। কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলেছিল, ডেডিকেটেড ডেস্ক চালু হলে শিক্ষার্থীর আবেদন জমা বা অফিসিয়ালি কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে না। শিক্ষার্থীরা তাদের কাগজপত্র নিজ কলেজের ডেডিকেটেড ডেক্সের দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়কের কাছে জমা দিলেই তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে যাবে।

এ বিষয়ে সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়ক এবং ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, সেশনজট সমস্যা আমরা ইতিপূর্বেই কাটিয়ে উঠছিলাম। করোনার কারণে সেই পরিস্থিতিতে আবারো সেটা দেখা দিয়েছে। সাত কলেজ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সমস্যা সমাধানে শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ানো সহ সরকারের বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। আমরা চাইলেই একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুটো দিকই দেখতে হয়। সাত কলেজের শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা আমাদের সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

গতকাল সাত কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে। দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের এখান থেকে সরে যেতে বলে। শিক্ষার্থীরা সরে যেতে না চাইলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় একজন আহতও হয়। পুলিশ কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা করলে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

উল্লেখ্য, সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:- (১) ১৭-১৮ এবং ১৮-১৯ সেশনের যারা ৩ সাবজেক্ট অবধি ফেইল আছে তাদেরকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা, অনতিবিলম্বে ২/২.২৫/২.৫ এর নিয়ম বাতিল করা এবং যারা ৩ সাবজেক্টের অধিক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে তাদের খাতা জবাবদিহি সহ পুনরায় মূল্যায়ন করা।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status