চলতে ফিরতে

যে দ্বীপে নীল-সবুজ জলের মিতালি

ইসমাইল হোসেন স্বপন, ইতালি থেকে

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

ইতালির উপসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপ ক্যাপ্রি। ক্যাপ্রি দ্বীপে যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর নীলের বিস্তীর্ণ জলরাশি। সমুদ্রের বুকে ফারাগ্লিওনি নামের বিশাল বিশাল পাথর উঁচু হয়ে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে, দূর থেকে মনে হয় যেন সমুদ্রে পাথর ভাসছে। এই দ্বীপে রয়েছে ছোট বড় অনেক পাহাড় । এ যেন পাহাড় আর সমুদ্রের গভীর মিলন মেলা।

সেই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকপ্রেমীরা ছুটে আসেন ইতালির নাপোলি শহরের দক্ষিণে অবস্থিত এই ক্যাপ্রি দ্বীপে।

নেপলস, সোরেন্টো, পোসিতানো এবং আমালফি থেকে ফেরি দিয়ে অথবা নেপলস উপসাগর এবং সোরেন্টাইন উপদ্বীপের বন্দরগুলি থেকে নৌকা দিয়ে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই ক্যাপ্রি যাওয়া যায়।

পাহাড় ও সমুদ্রের গভীর মিলন মেলা, সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা বিশাল বিশাল পাথর, প্রাচুর্যময় পরিবেশ আর হালকা জলবায়ুর অসাধারণ সৌন্দর্য  উপভোগ করতে গত বছরের জানুয়ারিতে গিয়েছিলাম ক্যাপ্রি দ্বীপে ।

সমুদ্র পথে নেপলস থেকে ক্যাপ্রির দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। ভোর সকালে নেপলস থেকে ক্যাপ্রির উদ্দেশ্যে ফেরীতে চড়ে বসলাম।


টাইরহেনিয়ান  সমুদ্রের নীল জলে সূর্যোদয়ের লাল আবীর আছড়ে পড়ার দৃশ্যে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। জানুয়ারির এই সময়ে সমুদ্রের বাতাসে এখানে বেশ শিরশিরে ঠান্ডা, বেলা বাড়ার সাথে সাথে গরম বাড়বে।

টাইরহেনিয়ান  সমুদ্রে ঘন্টাখানের যাত্রা দিয়ে ফেরি থেকে নেমে ক্যাপ্রি শহরের মূল মুখে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম । টুরিস্ট অফিস এখনো খোলা হয়নি, অপেক্ষা করতে লাগলাম টুরিস্ট অফিস খুলার জন্য, প্রায় ৪০ মিনিট পর টুরিস্ট অফিস খুললো, টুরিস্ট অফিস থেকে ম্যাপ কিনে এবার ক্যাপ্রি দ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম।

ক্যাপ্রি দ্বীপে যাতায়াতের সুবিধার্তে ১৫ মিনিট পর পর হলুদ রঙের বাস ছাড়ে, সারাদিনের পাস্ কেটে নিলাম, সারাদিনের পাস কেটে নিলে একটা সুবিধা হলো যেখানে খুশি যেকোন বাসে নামাও যাবে উঠাও যাবে ।

প্রথমেই পৌছালাম ব্লু গ্রোটো এলাকায় । ক্যাপ্রির সবচেয়ে সর্বাধিক পরিচিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় স্থানের মধ্যে একটি হল ব্লু গ্রোটো, একটি অন্ধকার গুহা যেখানে সমুদ্রটি বৈদ্যুতিক নীলকে আলোকিত করে।


এই গুহার বিশেষ আকর্ষণ হলো গুহার মুখ বন্ধ ও খুলে সমুদ্রে জোয়ার ভাটায় । এই গুহায় ছোট্ট নৌকো করে ঢোকার জন্যে প্রচুর ভিড়, চিৎকার। যারা ভেতরে ঢুকছে তাঁদের মজার চিৎকার সুমুদ্রের কিনারে এই জায়গাটাকে বেশ সরগরম করেছে। ঢোকার মুখে এই গুহা অন্ধকার কিন্তু একটু ভেতরে গেলেই দেখা যায় অদ্ভুত আলো। সমুদ্রের বুকে সূর্যের আলো পড়ে গুহার ভেতরে এক আশ্চর্য সুন্দর এক আলোর খেলা তৈরি হয়।

গুহার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে গুjহা থেকে বের হয়ে কিছুটা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে হেঁটে আশেপাশে ঘুরে নিলাম। এই ছোট্ট সুন্দর দ্বীপে প্রকৃতি যেন নিজেকে মেলে ধরেছে।এ যেন পাহাড় আর সমুদ্রের কবির মিতালি । পাহাড়ি এই দ্বীপে নানান ছোট ছোট পাকদণ্ডী চলে গেছে।

ব্লু গ্রোটোর  সৌন্দর্য উপভোগ করে সেখান থেকে চলে গেলাম আগস্টাস উদ্যানে । এই উদ্যান থেকে দূরের সমূদ্রে সবুজ-নীল জলের বিস্তীর্ণ জলরাশি, সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা ফারাগ্লিওনি নামের বিশাল পাথর, পাহাড়ের বুকে আঁকাবাঁকা পথের সৌন্দর্য দেখা যায়। আগস্টাস উদ্যানে  রয়েছে ফল ও ফুলের প্রচুর গাছ।

এই দ্বীপের ইতিহাসে রোমান সম্রাট আগস্টাস ও  টাইবেরিয়াস  এর প্রচুর অবদান আছে। রোমান সম্রাট আগস্টাস এর নামেই এই বাগানের নামকরণ করা হয় আগস্টাস উদ্যান । আগস্টাস উদ্যান থেকে এবার পৌঁছে গেলাম আনাক্যাপ্রি। আনাক্যাপ্রিতেই আছে এই শহরের ভিল্লা সান মিচেল  এলাকা। যেখানে রয়েছে সমুদ্রের দিকে মুখ করে বিশাল বাগান ঘেরা সাদা প্রাসাদ।

আনাক্যাপ্রিতে অনেক ছোট বড় স্থানীয় দোকান রয়েছে, ক্যাপ্রির লেবু দিয়ে তৈরি ওয়াইন, সুভেনির ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে। আনাক্যাপ্রি ঘুরে দেখে নিতে নিতে বেলা পড়ে এলো। এবার ফিরতে হবে নেপলস। অহঙ্কারি ফারাগ্লিওনির অপারে সমুদ্রে তখন সূর্যের বিদায় বেলা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status