শেষের পাতা

বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

সাদা পোশাকে মাঠে নেমেছে পুলিশ

রুদ্র মিজান

২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:২৯ অপরাহ্ন

মদ, মাস্তি। দল বেঁধে রাতভর হইহুল্লোড়, আড্ডা। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা। আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা। কখনো কখনো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করাসহ নানা অপকর্মে বেপরোয়া কিশোর-তরুণ গ্যাং। এই গ্যাং কালচারের শিকার হচ্ছেন কিশোরী-তরুণীরা। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে আলোচনায় এসেছে গ্যাং। সন্ধ্যা নামার পরপরই শুরু হয় এসব গ্যাং-গ্রুপের দৌরাত্ম্য। দিনের পর দিন তাদের অপকর্মে অতিষ্ঠ মানুষ। কয়েকদিন ধরে রাজধানীতে কিশোর-তরুণ গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানের দায়িত্ব পালন করছে পুলিশের বিশেষ টিম। এই গ্যাং কালচার ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে সাদা পোশাকেও মাঠে নেমেছে পুলিশ।

সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানের ডলফিন গলির বাসায় বিকৃত যৌনাচারে মৃত্যু ঘটে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রীর। রেস্টুরেন্টে মদপান করার পর মৃত্যু ঘটেছে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে ও মেয়ের। নিহত তরুণীর পিতা অভিযোগ করেছেন, বন্ধুদের আড্ডায় জোর করে মদ পান করানো হয় তার মেয়েকে। পরে বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করার পর অসুস্থ হয়ে যায় তরুণী। রাতভর সেখানেই ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে তার। একইভাবে মৃত্যু ঘটে রাতের আড্ডায় অংশগ্রহণকারী তার বন্ধু আরাফাতের। কিশোর-তরুণদের এ রকম বিভিন্ন গ্রুপ ছড়িয়ে রয়েছে রাজধানীব্যাপী। রাতভর আড্ডা, মাস্তি, লং ড্রাইভে যায় তারা। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল ও রেসিংকার নিয়ে রাস্তায় নামে তারা। এরমধ্যে আরও একটি শ্রেণি রয়েছে যারা দলবেঁধে হইহুল্লোড় করে বেড়ায়।  মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। হাতিরঝিল এলাকায় বিকাল থেকেই শুরু হতো এই গ্যাংগুলোর অপতৎপরতা। বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালানো, জোরপূর্বক দর্শনার্থীদের ছবি, ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করাই তাদের কাজ।

গতকাল বিকালে হাতিরঝিল এলাকায় পুলিশের চারটি টিম অভিযানে নামে। তার আগের দিন অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে আটক করা হয়। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ জানান, ২৭শে জানুয়ারি ১৬,  ২৮শে জানুয়ারি ৫৫ কিশোরকে আটক করা হয়। হাতিরঝিল এলাকায় থানা পুলিশের তিনটি টিম কাজ করছে বলে জানান তিনি।

হাতিরঝিল ছাড়াও ধানমন্ডি, খিলগাঁও এলাকার তালতলায় বেপরোয়াভাবে গড়ে উঠেছে এসব গ্যাং। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানা বলেন, কিশোর-তরুণ গ্যাং কালচাল ও অপরাধ প্রবণতা থেকে তাদের মুক্ত রাখতে এই অভিযান অব্যাহত রয়েছে। থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের দুই প্লাটুন ফোর্স রয়েছে এই অভিযানে। পুরো এলাকাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাক সমন্বয়ে পাঁচটি আলাদা টিম একসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছে। যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানেই এই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গুলশান, বনানী এলাকায় আড্ডা দিয়ে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েরা অনেকেই রাতে জড়ো হন হাতিরঝিল এলাকায়। অনেকে ছুটে যান তিন শ’ ফিটে। কেউ কেউ লং ড্রাইভে যান। সম্প্রতি বড় একটি অংশ রাতের আড্ডার জন্য বেছে নিচ্ছে মাওয়া এলাকাকে। এসব গ্রুপের বেশির ভাগই কম বয়সী। সতেরো থেকে পঁচিশ বছরের ছেলে-মেয়ে। তারা বিভিন্ন অজুহাতে বাসার বাইরে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রাত কাটায়। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব)’র ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় আলোচনায় এসেছে এসব গ্রুপ। মদ্যপান ও ধর্ষণের পরই মৃত্যু ঘটেছে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব)’র ওই ছাত্রীর। ওই ছাত্রীর মৃত্যুর পর মারা গেছে তার বন্ধু এবং এই মামলার আসামি আরাফাত।  রোববারই তার মৃত্যু হয়েছে। শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। মদ্যপানের কারণের এটি হতে পারে। এছাড়া ওই তরুণীর দেহে ধর্ষণের আলামতও রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চান না তারা।

গত ৭ই জানুয়ারি রাজধানীতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ও’লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বন্ধু ফারদিন ইফতেখার দিহানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধানমন্ডির লেকসার্কাস এলাকার বাসিন্দারা দিহানকে জানতে গ্যাং কালচারে বখে যাওয়া তরুণ হিসেবেই। রাত-বিরাতে আড্ডা, মদপান ছিল তার অভ্যাস। দলবেঁধে বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়াতো। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়া ছিল তার অভ্যাস। শেষ পর্যন্ত বিত্তশালী পিতার এই বখে যাওয়া সন্তান দিহানই বান্ধবীকে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে ওই ছাত্রীর মৃত্যু ঘটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status