শেষের পাতা

চাল ও তেলের বাজারে অস্থিরতা

স্টাফ রিপোর্টার

৩০ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৯:০৮ অপরাহ্ন

দ্রব্যমূল্যের  ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় স্বল্প আয়ের মানুষ। বাজারে এখনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। এর মধ্যে কিছু পণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে। চাল ও তেলের দামে এখনো লাগাম টানা যায়নি। সর্বশেষ গত রোববার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণে একটি কমিটি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এদিন সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোজ্যতেলের মূল্য নিশ্চিত করা হবে। তবে এখনো বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং দাম আরো বাড়তির দিকে। অন্যদিকে চালের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতিতে অস্বস্তিতে পড়েছেন ভোক্তারা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম আগের সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে আরো বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারকে কোনো বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। ওদিকে আমদানি করে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। দামতো কমছেই না, বরং আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে ডালসহ আরো দু’একটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে আলু, পিয়াজসহ সবজির দামে এখনো স্বস্তি রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, হাতিরপুল কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে কোম্পানিভেদে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরো ৫ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে ১২৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দামও প্রতি কেজি ১২৫ থেকে ১২৭ টাকা। গত সপ্তাহে কিছুটা কমে ১২০ টাকা পর্যন্ত ছিল। সেই হিসেবে বর্তমানে খোলা ও বোতলজাত তেলের দাম প্রায় সমান। সুপার পাম বিক্রি হচ্ছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকা কেজি।
কাওরান বাজারের মুদি দোকানি কাওছার বলেন, বিশ্ব বাজারে দাম না কমলে দেশের বাজারেও কমার লক্ষণ নেই। তবে তেল আমদানিতে সরকার ভ্যাট কমালে দাম কিছুটা কমতে পারে। তা না হলে সহসাই দাম কমবে না, বরং আরো বেড়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা মানবজমিনকে বলেন, তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজার চড়া তাই দেশে তেলের দাম বেড়েছে। তারা কমালে আমাদের দেশেও কমে যাবে। তবে বিশ্ব বাজারের তুলনায় দেশের বাজারে এখনো তেলের দাম অনেক কম বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারতেও এখন ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য দেশে আরো বেশি। সেই হিসাবে আমাদের দেশে কম। তিনি আরো বলেন, আমরা বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলাম। তাছাড়া বিভিন্নভাবে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে বাজারে দাম কমিয়ে আনা যায়। তেল আমদানির ক্ষেত্রে সরকার যদি ভ্যাট-ট্যাক্স কমিয়ে দেয় তাহলে কিন্তু দাম অনেকটা কমে যায়।
ওদিকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ১০ লাখ টন চাল আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে সেই উদ্যোগ অনেকটা ভেস্তে যেতে বসেছে। আমদানির চাল বাজারে এলেও দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেন, সরকারি গুদামে চালের পর্যাপ্ত মজুত না থাকার কারণেই মূলত বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যদি আমাদের গুদামে ১০ লাখ টনের বেশি থাকতো, তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যেতো। সরকারের গুদামে পর্যপ্ত চাল না থাকায় মিলাররা এই সুযোগে দাম বাড়িয়েছে।
গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে সরু চাল আগের মতোই ৫৮ থেকে ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭০ টাকা কেজি। মোটা চাল স্বর্ণা, পাইজাম, গুটি, চায়না ইরি ইত্যাদি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
এ বছর সারা দেশে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তার পরও বাজারে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। এ নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা দোষ দিচ্ছেন পাইকারি বিক্রেতাদের ওপর, অন্যদিকে পাইকারি বিক্রেতারা দূষছেন মিল মালিক ও আড়ৎদারদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি হওয়া চালের খুব সামান্য অংশই বাজারে ঢুকেছে। ভোক্তারা নিম্নমানের চাল কিনছে না। এতে বাজারে চাহিদা সম্পন্ন চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ- মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে দেশব্যাপী চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন।  
এছাড়া বাজারে চলতি সপ্তাহে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মোটা দানার ডাল এখন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি। ছোট দানার ডাল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। দেশি পিয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম আগের মতোই ৮০ থেকে ১০০ টাকা রয়েছে। আর আলুর কেজি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছুদিন আগে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ বাজারভেদে এখন ৮০ থেকে ৯০ টাকা। তবে অন্যান্য সবজির বাজারে এখনো স্বস্তি রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status