বিশ্বজমিন

সিঙ্গাপুরে ২ মসজিদে ক্রাইস্টচার্চ স্টাইলে হামলা পরিকল্পনা, গ্রেপ্তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোর

মানবজমিন ডেস্ক

২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:০৩ অপরাহ্ন

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নৃশংস হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে সিঙ্গাপুরের দুটি মসজিদে একই রকম ভয়াবহ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিঙ্গাপুরের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর। এমন অভিযোগে ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (আইএসএ) অধীনে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় নৃশংস হামলা চালায় সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টেরেন্ট। তার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে ওই কিশোর মুসলিমদের ছুরিকাঘাত করার পরিকল্পনা করেছিল। একই সঙ্গে ব্রেন্টন টেরেন্টের মতো সরাসরি সম্প্রচার করতে চেয়েছিল হামলার দৃশ্য। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি, দ্য স্ট্রেইটস টাইমস। এতে বলা হয়, আটক ওই কিশোর ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান। হামলার জন্য সে বেছে নিয়েছিল সিঙ্গাপুরের সেমবাওয়াংয়ে অবস্থিত আসিয়াফাহ মসজিদ এবং উডল্যান্ডসে অবস্থিত ইউসুফ ইসহাক মসজিদ। এ দুটি মসজিদ তার বাসস্থানের কাছাকাছি। হামলা চালানোর জন্য সে একটি ব্লুএসজি কার ভাড়া নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল, যাতে এ দুটি মসজিদে যাতায়াত করতে পারে এবং ওই স্বয়ংক্রিয় ট্রান্সমিশন সুবিধা সম্পন্ন গাড়ি থেকে তার অভিযানের ভিডিও প্রচার করতে পারে।

সিঙ্গাপুরে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক আইন ইন্টারনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (আইএসএ) অধীনে এ পর্যন্ত যত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ওই কিশোরের বয়স সবচেয়ে কম। আইএসএ আইনে যেকোনো ব্যক্তিকে বিনা বিচারের আটক রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে যে কিশোরকে আটক করা হয়েছে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করেনি মিডিয়া। বলা হয়েছে, ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোর ইসলামবিরোধিতায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সহিংসতায় তার আছে আগ্রহ। এমন মন্তব্য করেছে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সিঙ্গাপুরে উগ্র ডানপন্থি কট্টর আদর্শবাদীদের দ্বারা উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে তাকেই প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেখানে সন্ত্রাসী হামলা অথবা সহিংস অপরাধ বিরল এক ঘটনা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বালকটি গত মাস থেকেই আটক রয়েছে।

২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চে জুমার নামাজ আদায় করার সময় মুসল্লিদের ওপর নৃশংস হামলা চালায় সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টেরেন্ট। এলোপাতাড়ি গুলি করে কমপক্ষে ৫১ জন মুসলিমকে হত্যা করে ওই নরপিশাচ। একই সঙ্গে সেই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে। এ কারণে, তাকে গ্রেপ্তার করার পর গত বছর নিউজিল্যান্ডের আদালত তাকে প্যারোলবিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। অর্থাৎ যতদিন সে বেঁচে থাকবে, ততদিন তাকে জেলেই অবস্থান করতে হবে। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টেরেন্ট দ্বারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই কিশোর উদ্বুদ্ধ হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। সে এ বছর ক্রাইস্টচার্চ হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে আগামী ১৫ই মার্চ হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছি। সে স্বীকার করেছে যে, ব্রেন্টন টেরেন্টের হত্যালীলার সরাসরি সম্প্রচার তাকে দ্রুততার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

হামলার আগে একটি ব্লুএসজি গাড়ি ভাড়া নেয়ার জন্য তার পিতার ক্রেডিট কার্ড চুরি করার পরিকল্পনা ছিল। ওই গাড়ি নিয়ে দুটি হামলাস্থলের মধ্যে দ্রুত সে যাওয়া-আসার পকিল্পনা করেছিল। উল্লেখ্য, সে যে দুটি মসজিদকে টার্গেট করেছে তা উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। তবে এখানে উল্লেখ্য, ওই কিশোরের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তবে তার ভিতর দৃঢ় আস্থা আছে যে, সে গাড়ি চালাতে পারবে। ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দিয়েছেন ইন্টারনাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা। হামলায় প্রথমেই সে ব্রেন্টন টেরেন্টের মতো একটি রাইফেল ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সিঙ্গাপুরে অস্ত্র কেনাবেচায় কঠোর আইন আছে। ফলে সে চাইলেই একটি আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে পারবে না। তাই সে রাইফেল ব্যবহারের চিন্তা বাদ দেয় মাথা থেকে। সিদ্ধান্ত নেয় একটি চাপাতি ব্যবহার করবে। আর এই অভিযানে অংশ নেবে সে একা। এ ছাড়া হামলার আগে সে তার সব ডকুমেন্ট নষ্ট করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে গত বছর নিস শহরে হামলা এবং অন্যটি ইসলামবিদ্বেষী তার একটি বিস্তারিত মেনিফেস্টো। এতে সে বলে যেতে চেয়েছে, হামলার আগে সে বলে যাবে, সহিংসতার বিরুদ্ধে তার এই হামলা যথার্থ।

কর্তৃপক্ষ বলেছে, ছদ্মবেশ অভিযানে গত নভেম্বরে তার বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া যায়। এর অল্প পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর স্বীকার করেছে, তার সামনে দুটি পথ খোলা দেখতে পেয়েছে সে। তার একটি হলো, হামলার আগেই সে গ্রেপ্তার হতে পারে। অন্যটি হলো, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সে পুলিশের হাতে নিহত হতে পারে। স্থানীয় মিডিয়াকে আইন ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী কে. শানমুগাম বলেছেন, হামলা চালানোর বিষয়ে সে ছিল পুরোপুরি প্রস্তুত। সে জানতো হয়তো বাঁচবে না হয় সে মারা যাবে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাকে এখন ধর্মীয়, মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে তাকে উগ্রপন্থা থেকে ফিরিয়ে সঠিক পথে আনতে খ্রিস্টান কাউন্সেলরদের সহায়তা চাওয়া হবে।

ইন্টারনাল সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট (আইএসডি) বলেছে, এই কিশোর নিজে নিজেই উগ্রবাদী হয়ে উঠেছে। ইসলামবিদ্বেষী হয়ে উঠেছে। ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইসিস) এর প্রপাগান্ডা ভিডিও দেখেছে। এসব দেখে দেখে সে ভুল করে ধরে নিয়েছে যে, ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে আইসিস। তাই ইসলাম অবিশ্বাসীদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছে বলে সে মনে করেছে।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status