শেষের পাতা

সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি এবং আনুশকার করুণ মৃত্যু

পর্নোগ্রাফি যখন যৌন শিক্ষার মূল উৎস

তারিক চয়ন

২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২৬ অপরাহ্ন

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণরা মনে করে পর্নোগ্রাফি হলো যৌন শিক্ষার সেরা উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় প্রতিনিধি সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক চতুর্থাংশ ‘কীভাবে যৌনমিলন করা যায়’ সে তথ্য পাওয়ার ‘সবচেয়ে সহায়ক’ উৎস হিসেবে পর্নোগ্রাফিকে বেছে নিচ্ছেন। এটি পর্নোগ্রাফিকে যৌন তথ্যপ্রাপ্তির সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে  তালিকাভুক্ত করেছে, এমনকি যা তাদের নিজের যৌন সঙ্গীদের কাছ থেকে জানতে পারার চাইতেও বেশি।

লাইভ সায়েন্স এক প্রতিবেদনে বলা হয়-বোস্টন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ পাবলিক হেলথ-ব্লুমিংটন-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, যৌন সঙ্গী, বন্ধুবান্ধব, পিতা-মাতা, মিডিয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের চেয়েও পর্নোগ্রাফি এক্ষেত্রে উচ্চ স্থানে রয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত যৌন সম্পর্কের জন্য যৌনশিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে গবেষক দলনেতা এমিলি রথম্যান বলেন, পর্নোগ্রাফি বানানো হয় বিনোদনের জন্য। এগুলোর নির্মাতারা তাদের লাভের দিকটাই দেখেন। ভালো শিক্ষা দেয়ার বিষয়টা তাদের নিকট মুখ্য নয়। আর কানাডার টরেন্টো সেক্স থেরাপিস্ট কোচ কার্লাইল জ্যানসনের মতে, এটা মোটেও অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়। কারণ, আমরা এখনো ‘সেক্স’ নিয়ে কথা বলি না। আমরা এখনো জানি না সেক্স বিষয়ে ঠিক কোথায় জানা যায়। আর আপনি যদি সেক্স সম্পর্কে জানতে ‘গুগল’ করেন তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনি পর্নোতে গিয়ে ঠেকবেন। স্বাভাবিকভাবেই সেক্স সম্পর্কে জানতে গিয়ে পর্নোগ্রাফিতে ঝুঁকে পড়া ওই তরুণদের বেশির ভাগই ছেলে। মেয়েরা সাধারণত এসব তথ্য তাদের সঙ্গীদের কাছেই জানতে চায়।

এ চিত্র শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা অন্য কোনো দেশের নয়। ইদানীং দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় বাচ্চা ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। কখনো কখনো সেটা রূপ নিচ্ছে করুণ পরিণতিতে।

পর্নোগ্রাফি থেকে সেক্স ফ্যান্টাসি বা বিকৃত যৌনাচারেও ঝুঁকছে অনেক তরুণ। এই সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসিতে বিভিন্ন ‘ফরেন বডি’ বা ‘সেক্স টয়’ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পর্নোগ্রাফি দেখে ‘ফরেন বডি’ ব্যবহারের বড় উদাহরণ সমপ্রতি ঢাকার কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ‘ও’ লেভেলের ছাত্রী আনুশকার করুণ মৃত্যু। এ নিয়ে মামলায় অভিযোগ করা হয়, ‘প্রেমে প্রলুব্ধ’ করে বাসায় নিয়ে ‘বিকৃত যৌনাচারের’ মাধ্যমে আনুশকাকে হত্যা করেছে তার ছেলেবন্ধু দিহান। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনুশকার যোনিপথ ও রেক্টামে ‘ফরেন বডি’ পুশ করায় মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। যেটা ‘সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি’ থেকেই করা হয়েছে বলে তাদের মত।

এসব নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমানের সঙ্গে। অধ্যাপক মজিবুর কমনওয়েলথ রিসার্চ ফেলো হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী গবেষণায় একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয় সারা বিশ্বেই ‘সেক্স এডুকেশন’ একটা ট্যাবু। ছেলেমেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের সে শিক্ষা না দেয়া হলে তারা অন্য পথ খুঁজে নেয়। হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার হয়তো সন্তানদের এই শিক্ষা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বেশির ভাগই তাদের ‘পিয়ার গ্রুপ’ বা সমবয়সীদের কাছে এসব নিয়ে আলোচনা করে। আর সেখান থেকেই তারা পৌঁছে যায় পর্নোগ্রাফির অন্ধকার জগতে।

সমাধান কি জানতে চাইলে অধ্যাপক মজিবুর বলেন, এই যুগে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটে যে কেউ যেকোনো সাইটে ‘এক্সেস’ করতে পারেন। তাই যে কারো এসব সাইটে প্রবেশ বন্ধ করতে হলে ইন্টারনেট দুনিয়ার নিয়ন্ত্রকদের সাইটগুলোতে ‘ব্যারিয়ার’ দিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে সব দেশগুলোকে মিলে একটা সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। তাছাড়া পরিবারগুলোকে সচেতন হতে হবে। সন্তানদের পরিণত বয়সে যৌনশিক্ষা দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সেক্স এডুকেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে। নন ফরমাল বিভিন্ন ক্ষেত্রেও এ শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। মূলধারার গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্ষেত্রে সচেতনতামূলক বিভিন্ন শিক্ষামূলক বক্তব্য প্রচার করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status