বাংলারজমিন

টিউশনি করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম সীমা

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮ অপরাহ্ন

প্রতিনিয়ত অভাব আর দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে ২০১৭ সালের (২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত) ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের  বিএসএস শাখার শিক্ষার্থী সীমা আক্তার।
সীমা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের চাঁন মিয়া ও রুকুন্নাহার দম্পতির সন্তান। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সীমা তৃতীয়। বাবা চান মিয়া পুরাতন কাপড়ের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী।
অভাবের সংসারে আর্থিক সংকট ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন সীমা। নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন সীমা। অবশেষে স্নাতক পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করার মধ্য দিয়ে নিজের অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের সফলতা লাভ করেছেন।
সীমা স্থানীয় গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৭৫ ও হোসেনপুর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তার স্বপ্ন ছিল ইংরেজিতে অনার্স পড়ার। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য অনার্সে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। দরিদ্র বাবার ইচ্ছায় হোসেনপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে পাস কোর্সে বিএসএস শাখায় ভর্তি হন তিনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি (পাস) পরীক্ষায় তার রোল নং-৭৩৬৯৫৩৬, রেজিঃ নং-১৪১০২২৩৭২৬৪। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রকাশিত ফলাফলে সীমা আক্তার সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৭৫ অর্জন করে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।
মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারি সীমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও পদক প্রদান করবে।
সীমার প্রিয় শিক্ষক অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আশরাফ আহমেদ জানান, সীমা নিয়মিত ছাত্রী ও পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সে এত ভালো রেজাল্ট করায় আমরাও খুবই আনন্দিত।
স্বভাবতই সীমার এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার মা-বাবা। তারা বলেন, “আমাদের মাইয়া হারারাত জাইগ্যা লেহাপড়া করতো। দীর্ঘ ১২ মাইল রাস্তা পায় হাঁইট্যা প্রত্যেক দিন কলেজে যাইতো। তার সব চাওয়া আমরা পূরণ করতে পারি নাই। আল্লায় মুখ তুইল্লা তাকায়ছে।”
হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোসলেম উদ্দিন খান বলেন, সীমা কলেজের নিয়মিত একজন ছাত্রী। তার এ সাফল্যে শিক্ষক পর্ষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদসহ আমরা খুবই আনন্দিত।
ফলাফল জানার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সীমা আক্তার বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা মোতাবেক অধ্যয়ন করায় এত ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করার ইচ্ছা রয়েছে। এ জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন সীমা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status