প্রথম পাতা

লন্ডন ফেরত ৩৫ যাত্রীর করোনা, সিলেটে শঙ্কা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৭ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন

বৃটেন ফেরত প্রবাসীদের নিয়ে নতুন শঙ্কা সিলেটে। একদিনেই মিলেছে লন্ডন থেকে আসা ২৮ জন প্রবাসীর শরীরে করোনার অস্তিত্ব। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চলতি মাসে দুটি ফ্লাইটে আসা প্রায় আড়াইশ’ যাত্রীর নমুনা রিপোর্টে ৩৫ জনের করোনা পজেটিভ মিলেছে। ফলে এ নিয়ে চিন্তিত সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ। আক্রান্ত বৃটেন প্রবাসীদের শরীরে নতুন স্ট্রেইনের করোনার অস্তিত্ব রয়েছে কিনা- সেটি পরীক্ষা করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে ইতিমধ্যে ঢাকার আইইডিসিআরের গবেষণা দলকে সিলেটে ডাকা হয়েছে। তারা এসে নমুনা সংগ্রহের পর সেটি গবেষণা করবেন বলে জানিয়েছেন সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। করোনার নতুন স্ট্রেইনে কাবু গোটা বৃটেন। ওখানে বসবাসরত সিলেটিদের ঘরে ঘরে করোনার প্রকোপ। মারা যাচ্ছেন অনেকেই। বৃটেনে থাকা প্রবাসীদের নিয়ে সিলেটের স্বজনরা চিন্তিত। এই অবস্থায় লন্ডনের সঙ্গে সিলেটের ফ্লাইট বন্ধেরও চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। কিন্তু লন্ডন প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে সেটি করা হয়নি। বরং আগের মতোই ফ্লাইট স্বাভাবিক রাখা হয়। তবে, বাংলাদেশ সরকার নতুন করে  দেশে আসা বৃটেন প্রবাসীদের জন্য নতুন নিয়ম চালু করেছিল। সেই নিয়মের মধ্যে গত ১লা জানুয়ারি থেকে যারা লন্ডন থেকে এসেছেন তারা বাধ্যতামূলক নিজ খরচে ১৪ দিন থেকেছেন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। পরবর্তীতে প্রবাসীদের কথা চিন্তা করে সেটি শিথিল করে গত ১৫ই জানুয়ারি থেকে যারা  দেশে আসছেন তাদের ৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়। তবে, কোয়ারেন্টিনের ৪ দিনের মাথায় তাদের নমুনা পরীক্ষা করার পর নেগেটিভ হলে বাড়ি যেতে দেয়া হয়। যেসব প্রবাসী পজেটিভ হচ্ছেন তাদের সরকারিভাবে আইসোলেশনে নেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৫ই জানুয়ারির পর সিলেটে গতকাল পর্যন্ত এসেছে তিনটি ফ্লাইট। এসব ফ্লাইটে তিনশ’র অধিক যাত্রী সিলেটে এসেছেন। প্রথম দুটি ফ্লাইটে আসা আড়াইশ’ যাত্রীর করোনা টেস্ট এরই মধ্যে করা হয়। সব মিলিয়ে ৩৫ জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাদের সরকারি আইসোলেশন সেন্টার সিলেটের খাদিমপাড়ার ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে, তারা সবাই এখনো ভালো আছেন। যদি কারো হাসপাতালের আইসিইউ সাপোর্ট লাগে তাহলে তাদের কোভিড হাসপাতাল সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে। যারা আইসোলেশন সেন্টারে থেকে সুস্থ হবেন তাদের পরবর্তীতে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র দেয়া হবে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আশরাফ উল্লাহ তাহেরের বরাত দিয়ে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সিলেটে আসা ১৫৭ জন বৃটেন যাত্রী সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী রোববার সকল যাত্রীর নমুনা সংগ্রহ করে টেস্টের জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। সোমবার আসা রিপোর্টে দেখা গেছে, ২৮ জনের করোনা পজেটিভ। আক্রান্তদের মধ্যে হোটেল নুরজাহানে থাকা ১৫ জন, হোটেল ব্রিটানিয়ায় থাকা ৫ জন, হোটেল হলিগেটে থাকা ৪ জন, হলিসাইটে থাকা ১ জন ও লা রোজে থাকা ৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও পুরুষের সংখ্যা বেশি। তবে, শিশুরা কম আক্রান্ত হয়েছে। গত সোমবার সিলেটে নতুন করে এসেছেন ১৪৩ জন বৃটেন যাত্রী। তারা বর্তমানে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে আছেন। গতকাল তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। সিলেটে একদিনে ২৮ জন বৃটেন ফেরত রোগীর করোনা আক্রান্তের খবরে সিলেটে নতুন করে করোনা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। কারণ চলতি শীত মৌসুমেও সিলেটের করোনা পরিস্থিতি অনেক ভালো। হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা কম। ল্যাবের পরীক্ষায় আক্রান্তের সংখ্যা কম। প্রায় ৩০০ পরীক্ষায় প্রতিদিন ১৫-১৬ জন করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। এবং যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তারা অনেকেই নিজ বাসায় আইসোলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন। ফলে করোনা নিয়ে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগও স্বস্তিতে আছে। কিন্তু একদিনে অধিক সংখ্যক বৃটেন প্রবাসী করোনা আক্রান্তের খবরে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ সহ সব মহল। স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, অধিক সংখ্যক বৃটেন প্রবাসী আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ঢাকার আইইডিসিআরে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আইইডিসিআরের একদল গবেষক ঢাকা থেকে সিলেটে আসার কথা রয়েছে। যেসব বৃটেন প্রবাসী করোনা পজেটিভ হয়েছেন তাদের শরীরে নতুন স্ট্রেইনে করোনার উপস্থিতি রয়েছে কিনা- সেটি পরীক্ষা করতে তারা আসছেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকা অবস্থায় যারা প্রবাসীর সংস্পর্শে ছিলেন তাদেরও নমুনা পরীক্ষা করা হবে। কারণ তাদের দ্বারা নতুন স্ট্রেইনের করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর যেসব প্রবাসী করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে গেছেন তাদের প্রতিও নজরদারি থাকবে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল জানিয়েছেন, প্রবাসীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তারা তো বৃটেন থেকে এসেছেন। করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেটও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। এখন  কোন ধরনের করোনা তারা বহন করছেন- সেটি জানা দরকার। এ কারণে তিনি নিজেও আইইডিসিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ছাড়া বৃটেন প্রবাসীদের  কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশনের বিষয়টি সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status