শেষের পাতা

ঢাবি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের জরিপ

৮৪ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী, তবে...

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৩৮ অপরাহ্ন

বিনামূল্যে দেয়া হলে ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী। কিন্তু বেশির ভাগ লোকই টিকাদান কর্মসূচি চালুর শুরুতেই টিকা নিতে প্রস্তুত নয়। ‘কোভিড-১৯ টিকার প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল এ গবেষণার প্রাথমিক ফলাফল ওয়েবিনারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট দেশের ৮ বিভাগে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৮৪ শতাংশ লোক টিকা নিতে আগ্রহী। কিন্তু বেশির ভাগ লোকই টিকাদান কর্মসূচি চালুর শুরুতেই টিকা নিতে প্রস্তুত নয়। ৩২ শতাংশ মানুষ টিকা প্রদান কার্যক্রম চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা নিতে চান, আর বাকি প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষা করে টিকা নিতে চান। বরঞ্চ কিছুদিন অপেক্ষা করে এই টিকার কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তারপর নিতে চায়। আর ১৬ শতাংশ কখনই টিকা নিতে চায় না।

দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি জেলা ও ১৬টি উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গা যেমন হাট-বাজার, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, মসজিদ, মন্দির ইত্যাদি স্থান থেকে সিস্টেমেটিক দৈবচয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে জরিপে ৩ হাজার ৫৬০ জন অংশগ্রহণকারী বাছাই করা হয়। এছাড়াও জরিপে মহিলাদের অংশগ্রহণ  নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় খানাসমূহে জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট নিজস্ব অর্থায়নে এই গবেষণা কার্যক্রম চালায়। টিকার গ্রহণযোগ্যতা ছাড়াও করোনা নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, টিকার উপকারিতা নিয়ে মানুষের ভাবনা, টিকা নেয়ার উপকারিতা বা চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে জনগণের মতামত নেয়া হয়।

গবেষণায় দেখা যায়, শহরের চেয়ে গ্রামের লোকদের মাঝে টিকা নেয়ার আগ্রহ বেশি। তবে টিকাদান কর্মসূচি চালুর সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেয়ার আগ্রহ বিষয়ে গ্রাম ও শহরের মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগে টিকা নেয়ার ব্যাপারে বেশি আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। তবে বিনামূল্যে দেয়া না হলে এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম। কিন্তু ঢাকা সিটিতে টিকা নেয়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম (৭২ শতাংশ)। পুরুষ ও মহিলা, বিভিন্ন পেশার লোকদের মধ্যেও এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে মতামতের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন মহিলাদের মাঝে টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা পুরুষদের তুলনায় বেশি। বিনামূল্যে টিকা দেয়া হলে নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে উচ্চ আয়ের জনগণের মধ্যে তুলনায় টিকা গ্রহণ করার আগ্রহ বেশি দেখা যায়।

কেন এত বিশাল একটা অংশ এই মুহূর্তে টিকা নিতে আগ্রহী নয়- সে বিষয়ে এই গবেষণার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়। যারা এই মুহূর্তে নিতে চায় না তাদের ৫৪ শতাংশ টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। তাছাড়া ৩৪ শতাংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত এবং ১২ শতাংশ এর মাঝে আমদানি করা টিকার গুণগত মান নিয়ে সন্দেহ আছে বলে জানায়। যারা একেবারেই নিতে চায় না তারা টিকার মান ও কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব ও বিরূপ প্রতিক্রিয়াকে মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া একটা উল্লেখযোগ্যসংখ্যক লোক টিকা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। যদিও ৮৪ শতাংশ লোক টিকা নিতে চায় তবে অর্থের বিনিময়ে ৬৬ শতাংশ টিকা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাছাড়া বয়স্ক (৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব)দের মাঝে টিকার ব্যাপারে উৎসাহ কিছুটা কম (৭৮ শতাংশ)।

তাছাড়া এই গবেষণা থেকে আরো পাওয়া যায় যে, বেশির ভাই লোকই টেলিভিশনের মাধ্যমে করোনা বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকে। যদিও গ্রাম ও শহরের মধ্যে একটা ব্যবধান পরিলক্ষিত হয়। শহরের বেশির ভাগ মানুষই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোভিড-১৯ বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকে আর গ্রামের জনগণ প্রধানত টেলিভিশন থেকে করোনা বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকেন।

শতকরা ৪ দশমিক ৪ ভাগ লোক বলেছে যে, তার বা তাদের পরিবাবের লোকজনের করোনা হয়েছিল এবং এটাও দেখা গেছে যে, যাদের পরিবারে করোনা হয়েছিল তাদের মাঝে টিকা নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম। শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া এবং করোনাভীতি কমে যাওয়াটাকে প্রধান কারণ হিসেবে গবেষক দল মনে করে। যেহেতু টিকার কার্যকারিতা, এর মান ও সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মানুষের মনে সংশয় রয়েছে, তাই এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। তাছাড়া যেহেতু একেক পেশার মানুষ একেক উৎস থেকে করোনা বিষয়ক তথ্য পেয়ে থাকে, সরকারের প্রচারও তা বিবেচনায় রেখেই করার পরামর্শ দেয়া হয়।

বিশেষ করে দেশের একটা বিরাট অংশ এখনই টিকা নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়, তাই মানুষের মধ্যে যে দ্বিধা ও সংশয় আছে তা দূরীকরণে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। প্রত্যেক টিকার কিছু স্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সে বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা ও কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হলে বিষয়টি জনগণকে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে অবহিত করার ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়। কার্যকরী সিঙ্গেল ডোজ টিকা বাজারে এলে তা আনার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। এ ধরনের গবেষণা চালু রাখা দরকার যাতে করে মানুষের মনোভাব বোঝা যায়। কারণ অনেক দেশে দেখা গেছে- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে  গ্রহণযোগ্যতাও কমবেশি হয়ে থাকে। গবেষণা দলের সদস্য ছাড়াও সরকার, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিকসহ অনেক ধরনের বিশেষজ্ঞরা এই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status