দেশ বিদেশ

যুক্তরাষ্ট্রকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব-

সম্পর্কোন্নয়ন চাইলে খুনি ফেরত দিন, ভায়া নয় সরাসরি যোগাযোগ করুন

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২৭ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ক এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিব বেশ কড়া বার্তাই দিলেন। ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নতি করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বঙ্গবন্ধু খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দিতে হবে। গত এক দশক ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র ঝুলিয়ে রেখেছে এমন অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি নতুন মার্কিন প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে কারণ আমরা উভয় দেশই বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাস করি। প্রকৃতপক্ষে রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত ওই খুনিকে ফেরাতে বাংলাদেশ বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, এটিও যুক্তরাষ্ট্র ঝুলিয়ে রেখেছে। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (পররাষ্ট্র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদার হচ্ছে ভারত এবং এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ওয়াশিংটন কী ধরনের সম্পর্ক রাখবে সেটি অনেকাংশে দিল্লির উপর নির্ভর করে। কিন্তু বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র যেন সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এবং অন্য যেকোনো দেশ কীভাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক দেখতে চায় সেটি যেন বিবেচনা না করে। ‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’- শীর্ষক ওই ওয়েবিনারে সচিব মাসুদ বিন মোমেন আরও বলেন, বাংলাদেশ আশা করে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে, অন্য কোনো প্রিজমের মাধ্যমে নয়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সম্পর্ক অম্লমধুর। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক একদিকে যেমন পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছে তেমনি বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত না পাঠানোর মতো বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে পাঁচজন এখনও বিদেশে পালিয়ে আছে। এরমধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নুর চৌধুরী কানাডায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়া রাশেদ চৌধুরী পরবর্তীতে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২০০৪ সালে অভিবাসন বিচারক আবেদন তা মঞ্জুর করেন। পরে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। ২০০৬ সালে ওই আপিল খারিজ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হয়। ২০১৬ পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক সরকার ক্ষমতায় থাকা ওই  আলোচনা বেশিদূর এগোয়নি। পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পরে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত আনার বিষয়টি একাধিকবার বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হলে গত বছরের জুনে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল বিষয়টি পুনর্বিবেচনার নোটিশ জারি করেন। যুক্তরাষ্ট্র-চীন সাংঘর্ষিক অবস্থা হলে বাংলাদেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে: ওদিকে ওয়েবিনারে পররাষ্ট্র মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে-পরের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে, তবে এই দুই শক্তির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য রক্ষা করতে বাংলাদেশকে কঠিন অবস্থানে পড়তে হতে পারে। বাইডেন প্রশাসন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি এবং চীনের বিআরআই-এই দুই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশ জড়িত। আমরা বিশ্বাস করি কানেক্টিভিটি ও পরিবহন অবকাঠামো বৃদ্ধির মাধ্যমে উভয় উদ্যোগ আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে সুযোগ তৈরি করবে। ব্যবসা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও মার্কিন সহযোগিতা আশা করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জিএসপি সুবিধার পুনর্বহাল, বাণিজ্য বহুমুখীকরণ ও মার্কিন বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবার বহুপাক্ষিক ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ভালো সংবাদ বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসাটি আমাদের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status