দেশ বিদেশ

পেশাদার ছিনতাইকারীর কাছে ডিশ ব্যবসায়ী খুন

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ৯:৩৬ অপরাহ্ন

পেশাদার ছিনতাইকারীর কাছে খুন হয়েছেন ডিশ ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা জোনাল টিম এই ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য ও হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে ২৩শে জানুয়ারি হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন ঈদগাহ্‌ মাঠের সামনের রাস্তার ফুটপাথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ব্যবসায়ী হামিদ। তিনি পুরান ঢাকা থেকে ফ্ল্যাটের ভাড়া নিয়ে সেগুন বাগিচার বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে দুর্বৃত্তরা তার পায়ে ছুরিকাঘাত করে সঙ্গে থাকা একটি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে চলে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলার ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো. সোহেল ওরফে এরাবিয়ান হোসেন, মো. জাহিদ হোসেন, মো. শুকুর আলী, মো. শাকিল ও মো. সোহেল মিয়া।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার এসব কথা জানিয়ে বলেন, ঘটনার দিন হামিদুল ইসলাম হাতকাটা শাকিলের রিকশাতে উঠেছিলেন। হাইকোর্ট মাজার থেকে সেগুনবাগিচায় যাওয়ার পথে জাতীয় ঈদগাহ্‌ মাঠের সামনের ফুটপাথে ওই রিকশার গতি রোধ করে ছিনতাইকারী সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন ও শুক্কুর আলী। হামিদুলের কাছ থেকে তারা মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মধ্যে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে হামিদুল চিৎকার করলে এরাবিয়ান সোহেল চাকু দিয়ে পায়ে আঘাত করে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সবাই হামিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এদের মধ্যে শাকিল ওরফে ডুম্বাস একজন রিকশাচালক। তার ডান হাত কনুই থেকে কাটা। এজন্য তাকে ‘হাতকাটা শাকিল’ বলেও ডাকে অনেকে। রিকশাচালক হলেও তার মূল পেশা ছিনতাই। এরাবিয়ান সোহেল হচ্ছে মূল হোতা। তার সঙ্গে জাহিদ ও শুক্কুর আলী সহযোগী। আর সোহেল মিয়া ছিনতাইয়ের মালামাল ক্রয়কারী। হামিদুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইলও সোহেল মিয়াই কিনেছিলেন। তাদের সবার বাসা কামরাঙ্গীরচর এলাকায়। ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো শাকিলের ছদ্মবেশ। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিকশা চালাত এবং টার্গেট ব্যক্তিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে ছিনতাই করতো। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষের সহানুভূতিও কাজ করতো তার প্রতি। পুলিশও সহজে তাকে কিছু বলতো না। যার ফলে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে সব সড়কে চলাচল করতে পারতো। গ্রেপ্তার হওয়া প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই মামলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, প্রত্যেক মামলাতেই তারা জামিনে রয়েছে। এরাবিয়ান সোহেল গত সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছে আর হাতকাটা শাকিল এক বছর আগে বের হয়েছে। জামিনে বের হয়ে পুনরায় তারা ছিনতাইয়ে নামে। হামিদুল হত্যার সঙ্গে এরা সবাই জড়িত। ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও রিকশা জব্দ করা হয়েছে। আর হামিদুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবি’র রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস মানবজমিনকে বলেন, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা পেশাদার ছিনতাইকারী। এর আগেও তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি। কিন্তু জামিনে বের হয়ে তারা আবার ছিনতাই শুরু করে। এই চক্রে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য আছে। এদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে জেলে আছে। যারা বাইরে আছে তারা ছিনতাই করে। ছুরিকাঘাতের পরে ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ প্রায় আধাঘণ্টা ফুটপাথে পড়েছিল। কেউ তাকে ধরে নাই। যদি আরো আগে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেয়া যেত তবে হয়তো বাঁচানো যেত। তিনি বলেন, ঘটনার দিন একজন হিজড়াসহ যে দুইজনকে আটক করা হয়েছিল, মূলত তাদের তথ্য থেকেই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়। তারা বলেছিল একজন হাতকাটা রিকশাচালক ওই ব্যক্তিকে রিকশায় তুলেছিলেন। হিজড়ার দেয়া তথ্যমতে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর ২৪শে জানুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকা থেকে হাতকাটা শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যমতে, বাকিদের কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status