অনলাইন

করোনায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্যদশা প্রকাশ পেয়েছে: অধিকার

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১:১২ অপরাহ্ন

সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে তাদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তারা রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার করেছে। গত বছরে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল অবনতিশীল। করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও দৈন্যদশা প্রকাশ পেয়েছে। করোনা মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব বিষয় উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার তাদের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রহসনমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে দিয়েছে। ২০২০ সালে সংসদের যেসব উপ-নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানেও সরকার ও নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা না থাকায় ভোটাররা ভোট দিতে আর আগ্রহ দেখাননি। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রই ছিল ভোটার শূন্য। ফলে সরকারীদল ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের প্রার্থীদের বিজয়ী করেছে।
করোনা মোকাবেলায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৈন্যদশা প্রকট হয়ে ওঠে। কোভিড-১৯-কে কেন্দ্র করে কার্যকর তথ্য এবং উপযুক্ত সিদ্ধান্তের অভাবে স্বাস্থ্য অধিকার, সুরক্ষা ও কর্মসংস্থানের মত বিষয়গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশে গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫শ’১০ ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৭ হাজার ৫শ’৫৯ জন মারা গেছেন। এই মহামারীর সময় স্বাস্থ্য খাতসহ অন্যান্য সেক্টরে দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করে। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় উচ্চ পদস্থ ডাক্তারদের বদলি এবং ওএসডি করা হয়।
২০২০ সালে সরকার নাগরিকদের বাক, চিন্তা, বিবেক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই সময় সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে ব্যাপক নজরদারির মধ্যে নিয়ে আসে। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করায় এবং ক্ষমতাসীনদলের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্য, ক্ষমতাসীনদলের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক লেখা বা কোন পোস্টে ‘লাইক-শেয়ার’ দেয়ার কারণে ভিন্নমতের অনুসারী, লেখক, ব্লগার, বিরোধীদলের নেতাকর্মী, শিক্ষক, কার্টুনিস্ট, সাংবাদিক, মসজিদের একজন ইমাম, আইনজীবী এমনকি শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এবং ‘ধর্মীয় অনুভুতিতে’ আঘাত দেয়ার অভিযোগে নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই সময়ে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ কে আরো কঠোরভাবে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে এই আইনের বিধিমালা  জারি করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার বিভিন্নভাবে সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করায় বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচার ব্যাহত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাংবাদিকদের সেল্ফ সেন্সরশিপ প্রয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংবাদ প্রকাশ করার জেরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সময়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে সাংবাদিকরা সরকারি দলের সমর্থক দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়ে হতাহত হয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০১৩ সালে শুরু হওয়া রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ২০২০ সালেও অব্যাহত ছিল উল্লেখ করে অধিকারের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কোন জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে দেশের নাগরিকদের গুম, বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক ঘটনায় জড়িত হয়েছে।


অধিকার’র বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছরে দুই জন নারীসহ মোট ২২৫ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ২০২০ সালে ৩১ জনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের গুম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে এখনও পর্যন্ত তিন জনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি, ছয় জনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ২২ জন গুম হওয়ার পর ফিরে এসেছেন বলে অধিকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ বা তাদের পরিবার কিংবা ধর্মীয় বিষয়ে সমালচনামূলক মন্তব্য করার কারণে ২০২০ সালে ১৪২ জনকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং ১৩ জনকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে গ্রেপ্তার করা হয় ।
গত বছরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ৭৪ জন সাংবাদিক আহত, ৩১ জন লাঞ্ছিত, ২৮ জন আক্রমণের শিকার, ১৭ জন হুমকির সম্মুখীন, সাত জন গ্রেপ্তার, একজন নির্যাতনের শিকার, তিন জন অপহৃত, চার জন বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গত বছরে ৭০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status