প্রথম পাতা

যেভাবে হবে করোনা টিকার রেজিস্ট্রেশন

৫০ লাখ ভ্যাকসিন এসেছে, দু’-একদিনের মধ্যে যাবে সারা দেশে

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:০৪ অপরাহ্ন

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকারিভাবে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ঢাকায় পৌঁছেছে। সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট ভ্যাকসিনের চালান নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এই ভ্যাকসিন আনা হচ্ছে বাংলাদেশে সিরাম ইনস্টিটিউটের এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, সিরাম ইনস্টিটিউট আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাঠানো ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আমরা আজ গ্রহণ করলাম। এটাকে আমরা এখন নিয়ে যাবো টঙ্গীতে আমাদের নতুন ওয়্যারহাউজে। কোল্ড চেইন মেনটেইন করে সেখানে ভ্যাকসিন রাখা হবে। পাপন আরো জানান, ওয়্যারহাউজ থেকে প্রতিটি ব্যাচের টিকার নমুনা পাঠানো হবে সরকারের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে। পরীক্ষার পর সবকিছু ঠিক থাকলে ছাড়পত্র দেয়া হবে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর টিকাগুলো ৬৪টি জেলায় পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো। আমরা অ্যাপ্রুভাল পাওয়ার পর সরকার যেখানে পাঠাতে বলবে, সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। আমার ধারণা, ৪ থেকে ৫ দিনের মধ্যে উনারা যেখানে পৌঁছে দিতে বলবেন আমরা সেখানে পৌঁছে দিতে পারবো। নাজমুল হাসান পাপন জানান, টিকার প্রতিটি কার্টনে একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস রাখা হয়েছে। এই ডিভাইস প্রতি পনের মিনিট পর পর সিরাম ইনস্টিটিউটে তাপমাত্রার হালনাগাদ তথ্য পাঠাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ভ্যাকসিনের কার্টনগুলো প্রথম দেখবেন। এরপর প্রতিটি কার্টন খোলা হবে। সেখানে টেম্পারেচার মনিটরিং ডিভাইস দেয়া আছে প্রতিটি কার্টনের ভেতরে। ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়ার আগ পর্যন্ত কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হলে দায় বেক্সিমকো নেবে। বেক্সিমকো ফার্মার এমডি আরো বলেন, পুরো সময় ওই ভ্যাকসিন ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার কথা। সেটা যাতে হয়, সে কারণেই কার্টনে ওই ডিভাইস রাখা হয়েছে। আমাদের দেখাতে হবে যে, পুনে থেকে মুম্বই, সেখান থেকে ঢাকা হয়ে আমাদের ওয়্যারহাউজ এবং সেখান থেকে জেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে কোথাও কোনো কোল্ড চেইন ব্রেক হয়নি। যদি কোনো ড্যামেজ, শর্টেজ বা কোনো রকমের সমস্যা থাকে, তাহলে আমরা তা চেইঞ্জ করে দেবো। ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সমস্ত রকমের দায়িত্ব বেক্সিমকোর। বেক্সিমকোর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও ভ্যাকসিনের চালান গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ই নভেম্বর তিন কোটি ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন কিনতে সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ ভ্যাকসিন সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হচ্ছে। প্রতি মাসে ভ্যাকসিনের ৫০ লাখ ডোজ পাঠানোর কথা সিরাম ইনস্টিটিউটের। এর আগে ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে একই ভ্যাকসিন ২০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর সরকার ২৭শে জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছে। ২৭ ও ২৮শে জানুয়ারি ঢাকায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ হবে। তারপর ৮ই ফেব্রুয়ারি ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে সারা দেশে।

যেভাবে হবে করোনা ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন
দেশে করোনা ভ্যাকসিন কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে আগামীকাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে সবার আগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে মোট ৬৯০ জনকে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। দেশব্যাপী ভ্যাকসিনেশন শুরুর সম্ভাব্য তারিখ ৮ই ফেব্রুয়ারি। প্রথম মাসেই ৬০ লাখ জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তার আগে এটা পেতে সবাইকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ নামে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অ্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখানো হয় কীভাবে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনার বিশদ বর্ণনা করা হয়। করোনাভাইরাসের টিকা পেতে আগ্রহীরা সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে গিয়ে অথবা মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধনের কাজটি সারতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, যাদের ইন্টারনেট সুবিধা বা অ্যাপ ব্যবহারের মতো ডিভাইস নেই, তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগ্রহীদের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ফ্রি নিবন্ধন করার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, এই টিকা নিতে ‘রিয়েল টাইম’ অ্যাপটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে (িি.িংঁৎড়শশযধ.মড়া.নফ)। নিবন্ধনের পর সেখান থেকেই জানা যাবে, কবে কখন টিকা নিতে হবে। তবে শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষেরা এই টিকা নিতে পারবেন এবং নিবন্ধন করতে পারবেন। কারণ অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ওপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়নি। পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে। যার একটি নির্বাচন করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, যারা নিবন্ধন করে প্রথম ডোজ নিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে ব্যর্থ হবেন তাদের বিষয়ে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আপাতত নেই। অর্র্থাৎ যে কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেবেন তাকে সেই কেন্দ্রেই দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। তা না হলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন নষ্ট হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, নিবন্ধন অনুযায়ী টিকা কেন্দ্রে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে।   

ভ্যাকসিন নিতে হলে যা যা করতে হবে
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী টিকাদান প্রক্রিয়া ছয় ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথমে এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে নিবন্ধন।  অনলাইন পোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ। এরপর ভ্যাকসিন দেয়ার তারিখ ও তথ্য পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া হবে এবং প্রথম ডোজ টিকা দেয়ার দুই মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে পরবর্তী ডোজ টিকা দেয়া হবে। দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর সুরক্ষা প্ল্যাটফরম থেকে ভ্যাকসিন সনদ দেয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রথমে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে প্রথমেই আছে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধনের ট্যাব। সেখানে ক্লিক করে দেখা যাবে পরিচয় যাচাইয়ে এই অ্যাপ্লিকেশনে ১৮টি শ্রেণি করা হয়েছে। যার একটি সিলেক্ট করার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে নিবন্ধন শুরু করতে হবে। এই ১৮টি শ্রেণির মধ্যে রয়েছে নাগরিক নিবন্ধন, সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অনুমোদিত সব বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সব সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তা-কর্মচারী, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখসারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধা সামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনী, সম্মুখসারির সংবাদকর্মী, প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মীরা। এ ছাড়া রয়েছেন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবার সম্মুখসারির কর্মী, রেলস্টেশন, বিমানবন্দর ও নৌবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা ও উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর যাচাই হওয়ার পর স্ক্রিনে নিবন্ধনকারীর নাম দেখানো হবে বাংলা ও ইংরেজিতে। সেখানে একটি ঘরে একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে যে নম্বরে টিকাদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএস করা হবে। মোবাইল নম্বর দেয়ার পর একটি ঘর পূরণ করতে হবে, যেখানে জানাতে হবে নিবন্ধনকারীর কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগ  আছে কিনা, থাকলে কোন কোন রোগ আছে। সেখানে আরেকটি ঘরে জানাতে হবে পেশা এবং তিনি কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কাজে সরাসরি জড়িত কিনা। এরপর বর্তমান ঠিকানা ও কোন কেন্দ্র থেকে টিকা নিতে ইচ্ছুক তা নির্বাচন করতে হবে। সব শেষে তথ্য সংরক্ষণ করলে নিবন্ধনকারীর মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি)। সেই ওটিপি দিয়ে ‘স্ট্যাটাস যাচাই’ বাটনে ক্লিক করলে নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে। নিবন্ধন হয়ে গেলে টিকার প্রথম ডোজের তারিখ ও কেন্দ্রের নাম এসএমএস এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।

নিবন্ধনের পরের ধাপ
এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ দিয়ে লগইন করে এসএমএস এর মাধ্যমে পাওয়া ওটিপি কোড দিয়ে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে। এসএমএস-এ যে তারিখ দেয়া হবে, সেই তারিখে টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে কোভিড-১৯ এর টিকা নিতে পারবেন নিবন্ধনকারীরা। এভাবে দুটি ডোজ শেষ হলে সুরক্ষা প্ল্যাটফরমের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির সনদ সংগ্রহ করা যাবে।

ভ্যাকসিনেশনের সেন্টার
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। টিকা দেয়ার জন্য ৭৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এরমধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবার কল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status