বাংলারজমিন

খুলনায় ফের পুলিশ সোর্স খুন

মৃত্যুর আগে হামলাকারীদের বর্ণনা দেন মামুন

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:০৯ অপরাহ্ন

 খুলনায় ১১দিনের মাথায় ফের পুলিশ সোর্সকে হত্যা করা হয়েছে। ২৩শে জানুয়ারি রাতে জেলার দিঘলিয়ার সেনহাটি মধ্যপাড়ার বাসিন্দা মো. মামুন মোল্লা (২৬) নামের পুলিশের এক সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। এর আগে ১২ই জানুয়ারি রাতে মহানগরীর লবণচরায় মাদক ব্যবসায়ীদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে পুলিশের সোর্স শফিকুল ইসলাম (৩৫) খুন হন। দিঘলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক রিপন কুমার জানান, শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বার্মাশীল খেয়াঘাটের সমিলের পাশে মামুনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। আসামি ধরার জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, নিহত মামুন পরিবারসহ খুলনা শহরের কাশিপুর এলাকায় থাকতেন, সেখানে ডিবি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। পরে তিনি পরিবারসহ দিঘলিয়ার সেনহাটি গ্রামের শরিষাপাড়া এলাকায় বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন। মৃত্যুর আগে আহত মামুনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তার ওপর হামলাকারী হিসেবে স্থানীয় কনডম রিপন ও কানা মাঝির নামোল্লেখ করতে শোনা যায়। তিনি সেই ভিডিওতে বলেন, একজন তার মুখে টেপ মেরে ফাঁকা জায়গা নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় এবং জিআই পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়।
জানা গেছে, রাতে সন্ত্রাসীরা মামুনকে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে সাজেল মাঝি নামের একজন লোক তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা নেয়া হচ্ছিল। পথিমধ্যে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মামুন মারা যায়। ২৪শে জানুয়ারি সকালে দিঘলিয়া থানা পুলিশ কর্মকর্তা ইনচার্জ আহসানউল্লাহ চৌধুরী এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেন। মৃত মামুন ডিবি পুলিশের সোর্স ও মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল।
এদিকে লবণচরায় মাদক ব্যবসায়ীদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে পুলিশের সোর্স শফিকুল ইসলাম (৩৫) খুন ও কয়েকজন জখম মামলার এজাহারভুক্ত আসামি দুলাল তরফদার (২৮) গত ৯ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি। উদ্ধার হয়নি ঘাতকদলের ব্যবহার করা ধারালো অস্ত্র। একই সময়ে ঘটে যাওয়া পুলিশের ওপর হামলা, জখম ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার আসামি মো. নাইমুর রহমান আকাশ (১৯) বৃহস্পতিবার আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সেসহ তিন আসামিকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত রোববার আদালতে সোপর্দ করা হয়। মামলাটিতে শ্যোন অ্যারেস্ট হয়ে সিয়াম ওরফে সিনবাদ শেখ (১৯) নামে একজন কারাগারে আছে। সেও প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সন্দেহভাজন আসামি মো. বাপ্পী মোল্লা (২৩), মো. তরিকুল ইসলাম তারেক (২২) এবং মো. নাইমুর রহমান আকাশ (১৯) কে রোববার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গত ১৮ই জানুয়ারি র‌্যাব-৬ সদস্যরা আসামিদের গ্র্রেপ্তার করেছিল। তিন ঘণ্টা টাইম অফ রিফলেকশন শেষে আকাশ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মহানগর হাকিম তরিকুল ইসলাম ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালতের এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
একই সময়ে ঘটা আলাদা অপরাধের পৃথক দু’মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. বদরুজ্জামান মোল্লা বলেন, পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যা যাচাই-বাছাই চলছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্র্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের ব্যবহার করা বাকি ধাঁরালো অস্ত্রগুলোও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। থানা-পলিশের হাত ঘুরে আসা সোর্স শফিকুল খুন ও কয়েকজনকে জখমের মামলার কেস ডকেটের পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ওই তিন জনকে হত্যা মামলাটিতে শ্যোন এ্যরেস্ট দেখানোর জন্য আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি চলছে।
অপরদিকে গত ১২ জানুয়ারি রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম লবণচরা থানাধীন বান্দাবাজার এলাকায় মাদক দ্রব্য উদ্ধার অভিযানে যায়। সাথে ছিল তিন জন সোর্স। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৮-১০ জন মাদক বিক্রেতার একটি দল অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। তারা চাইনিজ কুড়াল, ছুরি ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত শুরু করে। এতে তিন সোর্স ও ডিবি পুলিশের একজন এএসআই জখম হন। তাদেরকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিকুলকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অকুস্থল থেকে একটি চাইনিজ কুড়াল ও একটি মোবাইল ফোন আলামত হিসেবে জব্দ হয়েছে। খুন-জখমের ঘটনায় নিহতের ভাইপো মো. মামুন বিশ্বাস একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুলাল তরফদার (২৮) নামে একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আট-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের ওপর হামলা, জখম ও সরকারি কর্তব্য-কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে ডিবি’র উপ-পরিদর্শক তপন কুমার পাল একজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আট-১০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status