প্রথম পাতা

ভ্যাকসিন নিতে অনীহা কেন?

নূরে আলম জিকু, আলতাফ হোসাইন ও পিয়াস সরকার

২৩ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

করোনার ভ্যাকসিন দেশে চলে এসেছে। এখন শুধু অপেক্ষা তা প্রয়োগের। চলছে প্রস্তুতি। আগামী মাসের প্রথমেই শুরু হবে গণ টিকাদান কর্মসূচি। এই টিকাদান কর্মসূচিকে সামনে রেখে কি ভাবছে সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে মানবজমিন। কথা বলে জানা গেছে- বেশিরভাগ মানুষই টিকা নিতে চান। তবে তাদের প্রায় সবারই প্রশ্ন টিকা নেয়ার পর কতোটুকু সুরক্ষা পাওয়া যাবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হবে। কোথায় কখন পাওয়া যাবে টিকা। এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের ধারণা অনেক কম। অনেকে বলছেন, সাধারণ মানুষের এসব ধারণা পরিস্কার করতে সরকারিভাবে প্রচারণা বাড়ানো উচিত। মানুষ যাতে টিকা নিতে সাহস পায় সেজন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আগে প্রকাশ্যে টিকা নেয়া উচিত।

মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের পাশে মাছ বিক্রি করেন আবু বক্কর সিদ্দীক। তিনি মানবজমিনকে বলেন, মিডিয়া ভ্যাকসিন নিয়ে সংবাদ প্রচার করছে। তবে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। আমাদের চিন্তা কি করে কিছু আয়-রোজগার করে কোনোমতে খেয়েপরে বেঁচে থাকা যায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আলাউদ্দিন মৃধা। আপাতত ভ্যাকসিন নেবো কি-না চিন্তা করিনি। আগে দেখি কি হয়। আমরা আগে দেখতে চাই যে, ভ্যাকসিন পজেটিভলি কাজ করছে কি-না। যদি কাজ করে অবশ্যই নেব। টাকা লাগলেও নেবো যদি ভ্যাকসিন নিলে আর করোনা হওয়ার ভয় না থাকে।

মোহাম্মদপুরের সবজি বিক্রেতা তারু মিয়া বলেন, ভ্যাকসিন আসছে কি-না জানি না। যদি আসে তাহলে তো নেয়া যায়। কিন্তু এটা বিনামূল্যে দিলে নিতে পারবো। টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নেয়ার সামর্থ্য নেই। আমার এখন পর্যন্ত করোনা হয়নি। তবে ভ্যাকসিন নিলে হয়তো করোনা হওয়ার ভয় থাকবে না। কিন্তু আগে দেখবো এটা কতোটা কার্যকরী।

মুদি দোকানি উজ্জল বলেন, শোনা যাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন নিলে নাকি শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবার শুনলাম ভারত আমাদের দেশে ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে ট্রায়ালের জন্য। এখন ট্রায়ালে বা কেমন হয় সেটা তো বলতে পারছি না। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আসলে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। আমার আশেপাশের মানুষদের ভ্যাকসিন নিতে তেমন আগ্রহ দেখি না। আমি নেবো যদি দেখি এটা কাজ করছে।

বাসচালক মাহিন বলেন, ভ্যাকসিন যদি ১০০ ভাগ কাজে দেয় তবে নিয়ে রাখা ভালো। এমন যদি হয় যে- একবার ভ্যাকসিন নিলে আর করোনা হওয়ার ভয় থাকবে না। আর যদি কাজ করে তাহলে আমি নেবো।
রাজধানীর বাংলামোটরের ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। যেহেতু এটি দেশে এসে পৌঁছেছে। সরকার আমাকে ভ্যাকসিন দিলে অবশ্যই নেবো। তবে সরকারকে আগে দেখতে হবে এই ভ্যাকসিনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা। শরীরে ভ্যাকসিন নেয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। রাসেল আহমেদ নামের এক যুবক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন নেবো না। আগে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া হোক। ভারত থেকে আসা উপহারের টিকা আগে সরকারি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের শরীরে প্রয়োগ করে এটির প্রতি দেশের জনগণের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। তবেই করোনার ভ্যাকসিন নিতে মানুষ উৎসাহিত হবে। অন্যথায় কেউ ভয়ে নিতে চাইবে না।

মোটরযান চালক মোস্তাক শাহীন বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে নানা নেতিবাচক তথ্য শুনতে পাচ্ছি। আসলে ভ্যাকসিন সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এটি যদি করোনা ঠেকাতে পারে তাহলে নিতে পারি। আমি একা ভ্যাকসিন নিলে তো হবে না। আমার পরিবারে ৬ জন সদস্য আছেন। তারা কেউ ভ্যাকসিন নেবে না বলে বাসায় আলাপ-আলোচনা করেছে। এখন সরকারকে উদ্যোগী হবে হবে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সাধারণ মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে।
রিকশাচালক মোতালেব জানান, আমাদের উপর আল্লাহর রহমত আছে। আমাদের করোনা হবে না। টিকা নেয়া লাগবে না।

মগবাজার চৌরাস্তায় রুবেল হোসেন নামের এক পথচারী জানান, শুনেছি করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন দেশে অনেক লোক মারা গেছে।  ভারতেও অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হলে আসল ঘটনা জানতে পারবো। ভ্যাকসিন নেবো কিনা এখনো বলতে পারি না। আরো ভাবতে হবে।

শহিদুল্লাহ নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট। যেহেতু অক্সফোর্ডের মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। সেহেতু ভ্যাকসিন অবশ্যই ভালো হওয়ার কথা। প্রথম ধাপের টিকা পেলে আমি নেবো। আমার পরিবারের সবাই ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে।

বসুন্ধরা শপিং মলের বাইরে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থী অনামিকা চৌধুরী বলেন, ভ্যাকসিন এখনি নেবো না। ভরসা করবার মতো কোনো তথ্য মিলছে না। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভরসা দেবার মতো কিছু মিললে এরপর নেবো ভ্যাকসিন।

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আদিত্য আরাফাত বলেন, আমাদের শরীরে অধিকাংশরই এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। ভ্যাকসিন অবশ্যই নেবো যখন দেখবো সকলেই নিচ্ছেন। আর ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু হোক আগে দেখি উচ্চপদস্থরা নিচ্ছেন এরপর ভরসা মিলবে। অর্থমন্ত্রী ভ্যাকসিন নিতে চেয়েছেন কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী এখনো ঘোষণা দিলেন না। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তো প্রথম তার ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল।

সুমন রায় এসেছেন বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে শপিং করতে। বয়সের ভাড়ে কাবু তারা। তিনি বলেন, করোনার ভয়তো এখন নেই বললেই চলে। ভয়ের সময়টায় বাবা-মাকে নিরাপদে রাখতে পেরেছি। এখন দেখে শুনে ভ্যাকসিন নেবো।
সুমন রায় আরো বলেন, ভারতে আমার আত্মীয় আছে। কথা হলো ক’দিন আগে। তারা বলেন, কলকাতায় অধিকাংশই ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছেন না। এমনকি অনেককে বাধ্য করা হলেও তারা পিছপা হচ্ছেন। আরো আমাকে জানান, সেখানকার চিকিৎসকরাও ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছেন না।

ভ্যাকসিনের কারণে থমকে নেই কিছুই। ভ্যাকসিন অবশ্যই নেবো। যখন দেখবো অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ। দেশে এখনো ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়নি। আবার শুনলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দেয়া হচ্ছে। মার্কেট, অফিসসহ সবই খোলা। ভ্যাকসিন দেবার আগেই যদি নিরাপদ মনে করে সরকার তবে অপেক্ষা করে দেখে শুনেই ভ্যাকসিন নেবো। এমনটাই মন্তব্য করেন ব্যবসায়ী ইবাদত হোসেন।

ভ্যানে করে আইসক্রিম বিক্রেতা মো. আলিম। তিনি বলেন, গরিব মানুষের ভ্যাকসিন লাগে না। গরিব মানুষ করোনায় আক্রান্তও হয় না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status