বাংলারজমিন

বগুড়ায় ইউএনও-এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মামলা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৩ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৮:০৫ অপরাহ্ন

গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে বগুড়ায় একের পর এক কেলেঙ্কারি হচ্ছে। সদরের দশটিকা এলাকার ঘরগুলোতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার হয়। এমন একটি সংবাদ মানবজমিনে প্রকাশ হয়। এবার একই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্যের জমিতে জোর করে সরকারি প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান এবং এসিল্যান্ড বীর আমির হামজা জোর করে স্থানীয় আবুল হোসেন এবং সাইফুল ইসলামের পৈতৃক জমিতে জোর করে ঘর নির্মাণ করছেন। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে সমাধান না হওয়ায় জমির মালিক দুই ভাই বাদী হয়ে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুর রহমান, সদর এসিল্যান্ড বীর আমির হামজা এবং সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ার শফিকের বিরুদ্ধে আদালাতে মামলা করেছেন। আদালাত উভয় পক্ষকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের সেই নির্দেশকে অমান্য করে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড পুলিশের সহযোগিতায় দিব্যি ঘর নির্মাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে যে কোন সময় ওই জমির মালিকদ্বয়ের সাথে প্রশাসনের বিরোধ চরম আকার ধারণ করতে পারে। গতকাল শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ঘরগুলো দ্রুত নির্মাণ শেষ করতে মিন্ত্রিরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। জমির মূল মালিক দাবিদার আবুল হোসেন এবং সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আইনের লোক হয়ে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড কিভাবে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেটি তাদের বোধগম্য নয়। তারা আরো বলেন, জমিটি আমাদের বাপ-দাদার সম্পত্তি। দীর্ঘ এক-দেড়শ’ বছর ধরে আমরা এই জমিগুলো ভোগদখল করে আসছি। হঠাৎ করে ইউএনও এবং এসিল্যান্ড এসে বলে এই জমি খাস খতিয়ানের। এই বলে তারা জমিতে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। আমরা কাগজপত্র দেখাতে চাইলে ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাগজ দেখার প্রয়োজন নেই। আদালতে গিয়ে দেখান। তখন আমরা উপায় না পেয়ে আদালতে মামলা করি। আদালাত আমাদের কাগজপত্র দেখে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরে কিছু দিন কাজ বন্ধ রাখেন তারা। কিছু দিন পর ওই জমিতে পুলিশ নিয়ে এসে পুনরায় কাজ শুরু করেন। আমরা অসহায় হয়ে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি আর ভাবছি দেশের আইন বলে কি আর কোন কিছুর অবশিষ্ট থাকলো না?
আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারিকৃত জমিতে সরকারি প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করার কোন বৈধতা আছে কি না জানতে চাইলে বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ওই জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে সেটি জানি। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তিনি জানেন না। কাজ চলছে কি না সেটিও জানানে না বলে নিজেকে দায় মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। অথচ আদালত নিষেধাজ্ঞার নোটিশ চার বিবাদীর কাছেই পাঠিয়েছে। আর বিরোধপূর্ণ জায়গায় ঘর নির্মাণের বিষয়টি বগুড়ায় আলোচিত হলেও কেন তার জানার বাইরে সেটিও বোধগম্য নয়। মুঠোফোনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বরাবরের মতোই এই প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেন ন। পরে ক্ষুদেবার্তা দিলেও কোন উত্তর দেননি। তবে সদরের এসিল্যান্ড বীর আমির হামজা বলেছেন, ওই জমি এক নম্বর খাস খতিয়ানের। দীর্ঘদিন ধরে একপক্ষ দখল করে আসছিলো। পরে তারা আদালতে মামলা করে। আদালতের বিচারক আমাদের শুনানির সুযোগ না দিয়েই স্ট্যাটাসকো দিয়েছে। পরে আমরা শুনানি করলে আদালত দখল বিষয়ক স্থিতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যেহেতু এখন আমাদের দখলে তাই আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
অথচ এসিল্যান্ডের বক্তব্যের বিপরীতে আদালতের আদেশ কপিতে স্পষ্ট লেখা আছে- ‘এতদ্বারা অত্র মোকাদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া কালতক উভয়পক্ষদ্বয়কে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ প্রদান করা হলো’। আদালতের এই নোটিশ জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো আছে। বিষয়টি সরজমিন দেখতে শুক্রবার বগুড়া সদরের শেখেরকোলা ইউনিয়নের নুরইল এলাকায় গেলে দেখা যায় ফসলি ওই জমিতে প্রধানমন্ত্রীর এ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। চারদিকেই ফসলি জমি। ওই জমিতেও কিছু দিন আগে মূলা চাষ হয়েছে। ঘরের কাজ না হলে এখন আলু চাষ হতো ওই জমিতে। চার পাশের সব জমিতে আলুর গাছ শোভা পাচ্ছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহান, রফিক, আব্দুল লতিফসহ বেশ কিছু বয়স্ক মানুষের সাথে কথা বললাম। তাদের কাছে জমিটির মূল ঘটনা জানতে চাই। তারা অকপটে বললেন, আমরা সাক্ষী। ওই জমি একশ’ বছরের বেশি সময় ধরে আবুল হোসেনের বাপদাদারা ভোগদখল করে আসছে। হঠৎ সরকারের লোকজন কোন কথা না শুনেই এখনে জোর করে ঘরগুলো নির্মাণ করছে। এদিকে বগুড়া সদরের ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের নানামুখী বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বগুড়ার সাধারণ মানুষ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এর আগে সদরের দশটিকা এলাকার প্রকল্পের সংবাদ সংগ্রহের জন্য দুই সাংবাদিক গেলে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের কিছু মুখচেনা নেতা তাদের পিটিয়ে আহত করে। ওই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের আঙ্গুল তাদের দিতেই উঠেছিলো। বিষয়টি এখন ধামাচাপা পড়ে আছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status