বাংলারজমিন

অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

ম্যানেজার-ক্যাশিয়ার গ্রেপ্তার

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২১ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:১২ অপরাহ্ন

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী এলাকায় ভুয়া ব্যবসায়ী সঞ্চয় সমিতির নামে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা কথিত পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের ম্যানেজার ও ক্যাশিয়ারকে  গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। মঙ্গলবার গ্রেপ্তারকৃতদের  আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঘিওর থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- কথিত ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম পরশ শিকদার সুমন ও ক্যাশিয়ার সম্রাট ওরফে বাদল। সিরাজুলের বাড়ি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় এবং সম্রাটের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সোনাকানিয়া গ্রামে।  মূল আসামি জাহাঙ্গীর হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব। এক সপ্তাহ আগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ভুয়া ব্যবসায়ী সঞ্চয় সমিতির সদস্য বানিয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষজনকে প্রতারণার মাধ্যমে ধোঁকার জালে ফেলে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে কথিত ওই সমিতির পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার সহযোগী গ্রেপ্তারকৃত ওই দুইজন।  

পরিচয় ও ঠিকানা গোপন রেখে জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার দুই সহযোগী চলতি মাসের ১লা জানুয়ারি বানিয়াজুরী এলাকার আব্দুস সালাম মিয়ার সঙ্গে প্রতারণা করে তার বাড়ির  দোতলা ভবনের নিচ তলায় কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এরপর এলাকার ফার্নিচারের দোকান থেকে আসবাবপত্র ক্রয় করে অফিসটি  ডেকোরেশনের মাধ্যমে পরিপাটি করে তোলে। অফিসে এবং মাঠকর্মী হিসেবে তড়িঘড়ি করে বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে চাকরি দেয়া হয়। সহজ সরল ওই নারীদের দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণার জাল ফেলে জাহাঙ্গীর। মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে আকাশ ছোঁয়া লোভের জালে কয়েকশ’ নারী-পুরুষকে সদস্য বানিয়ে বেঁধে ফেলে। এসব সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগই হতদরিদ্র ও ক্ষুদে ব্যবসায়ী। তাদের বড় অঙ্কের লোন দেয়ার কথা বলে একেক জনের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৮ হাজার  থেকে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এরপর ১৫ই জানুয়ারি অফিস উদ্বোধন ও আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সদস্যদের মাঝে এক লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেয়ার কথা ছিল। অফিস সাজানো থেকে শুরু করে দুপুরের খাবারের জন্য প্যান্ডেল করা হলেও শেষমেশ একদিন আগে সমস্ত টাকা পয়সা গুটিয়ে লাপাত্তা হয় সমিতির কথিত পরিচালক জাহাঙ্গীর ও তার দুই সহযোগী।
প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা খুইয়েছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ক্ষুদে দোকানি, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ ছাড়া যার বাড়িটি সমিতির অফিস হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছিল সে বাড়ির মালিক সালাম মিয়াও জানেন না ওই প্রতারকের ঠিকানা। ভাড়া দেয়ার আগে যেসব নিয়মকানুন থাকার কথা তার কোনোটাই বাড়ির মালিক অবগত হননি।   
ঘটনার পর ১৫ই জানুয়ারি ভুয়া ওই সমিতির মাঠকর্মী নিশা রানী বাদী হয়ে ঘিওর থানায় একটি মামলা করেন। নিশা রানীর কাছে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলায়। চাকরির সুবাদে তরা গ্রামে বাসা ভাড়া করে থাকেন। ১০ হাজার টাকা বেতনে মাঠকর্মী হিসেবে এখানে কাজ করছিলেন। তার মাধ্যমে ৬২ জনকে সদস্য বানানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তিনি সব টাকাই তুলে দেন অফিসের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেনের হাতে। একেক জনকে এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা লোন দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই টাকা পয়সা নিয়ে জাহাঙ্গীর পালিয়ে গেছে। শুধু সদস্যদেরই ধোঁকা দেয়নি তার মতো আরো বেশ কয়েকজন নারী এখানে চাকরি করছেন, তাদেরও ধোঁকা দিয়েছে। তার অন্য মাঠকর্মীরাও লাখ লাখ টাকা তুলে জাহাঙ্গীরের হাতে দিয়েছে। কেউ বুঝে উঠতে পারেননি সবাই এভাবে প্রতারণার শিকার হবে। ভুক্তভোগীরা এখন  তাদেরকে দোষারোপ করছেন বলে নিশা রানী জানান।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, গত ১৫ই জানুয়ারি কথিত ও ভুয়া ওই সমিতির মাঠকর্মী নিশা রানী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার  পরপরই আমরা প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে অবশেষে সোমবার রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই সদস্যকে আশুলিয়া থেকে আটক করা হয়। রিমান্ড চেয়ে মঙ্গলবার তাদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।  প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের কথা তারা স্বীকার করেছে। আশা করছি, খুব শিগগিরই মূল প্রতারক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status