অনলাইন

‘আপেল’র বিনিময়ে সর্বস্ব দিতে চান তরুণী

স্টাফ রিপোর্টার

২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১২:২৮ অপরাহ্ন

প্রতীকী ছবি

বান্ধবী তৃণার হঠাৎ পরিবর্তন। একদম মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো। হঠাৎ করেই বন্ধু সাদিককে বলছিলেন, ‘তুমি যা চাও, তাই হবে। ভার্সিটি বন্ধ। যখন যেখানে চাইবে চলে আসবো তোমার কাছে। দু’ঘণ্টা থাকবো। বিনিময়ে আমাকে ৫টি আপেল দিতে হবে। নিয়মিত দিতে পারবে?’
আপেল। একটি ফলের নাম। শব্দটি বেশ চেনা হলেও থমকে যান আবদুস সাদিক। এটা নিশ্চয়ই চিরচেনা সেই আপেল না। বিস্ময় প্রকাশ করে তৃণার কাছে জানতে চান, আপেল? এবার ‘হা হা হা’ করে হাসতে হাসতে বুঝিয়ে বলেন তৃণা, ‘আরে গাধা, এটা সেই আপেল না। এটা বাবা। ট্যাবলেট।’ এবার পুরোটাই বুঝতে পারেন সাদিক। তারপরও বিস্ময়ের শেষ নেই। এতটা অধ:পতন হলো কী করে? ছয় মাস আগেও তৃণা এরকম ছিলেন না। উচ্চ বিলাসী ছিলেন বটে। সময়-সময় দামি পোশাক, দামি পারফিউম ব্যবহার করতেন। অভিজাত পার্লারে, রেস্টুরেন্টে যেতে পছন্দ করতেন। তবে কথা কম বলতেন। আত্মীয় এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ওই যুবক ছাড়া কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না। ভার্সিটির বন্ধু বলতে সাদিক। অন্যদের সঙ্গে হাই হ্যালো ছাড়া তেমন কথা হতো না।

বাবার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সাদিক। তৃণার সঙ্গে দেখা হতো কম। ভার্সিটির ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে গেলেই দেখা হতো দু’জনের। তবে ফোনে কথা হতো মাঝে-মধ্যেই। এবার কৌতূহল থেকেই তৃণার খোঁজ নিতে থাকেন। একটি ফ্ল্যাট বাসায় তৃণাসহ তিন বান্ধবী থাকতেন। হঠাৎ করেই কয়েক মাস আগে বাসা ছেড়ে দেন। ব্যবসায়ী ওই প্রেমিকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা নেন মোহাম্মদপুরে। তৃণাকে অবশ্য শুরুতেই রোশান বলেছেন, কখনও বিয়ে করবেন না তাকে। তবে তৃণার সকল ব্যয় বহন করবেন তিনি। সবকিছু গোপন রাখার শর্তে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তৃণা রাজি হয়ে যায়।
রাজিয়া সুলতানা রোডের তৃতীয় তলার একটি বাসায় রোশান-তৃণার আড্ডা হতো। প্রেমিক রোশান বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা বসাতেন। সপ্তাহে অন্তত এক রাতে আড্ডা হতোই। শহরের কয়েক পরিচিতমুখও হাজির হতো এই আড্ডায়। মদ ও ইয়াবায় বুঁদ হতো অংশগ্রহণকারীরা। রোশান দীর্ঘদিন থেকেই ইয়াবায় আসক্ত। তৃণা প্রথমে বাধা দিতেন। রোশান চেষ্টা করতেন তৃণাকেও ইয়াবায় আসক্ত করতে। এতে সুবিধা হয়। বাধা-বিপত্তি থাকে না। কয়েক মাসের মধ্যেই রোশান বদলে যেতে থাকেন। কমবয়সী এক মেয়ের প্রেমে ডুবে যান রোশান। তৃণা একা হয়ে যান। বাসা ভাড়া, নিজের ব্যয় বহন করা দুষ্কর। এরমধ্যেই যোগ হয়েছে নেশা। ইয়াবা ছাড়া একটা দিনও চলে না। সেবন না করলে তীব্র একটা অভাব বোধ করেন। রোশানকে ভুলে থাকতে ইয়াবাতেই মজে থাকতে চান তিনি। ভাড়া দিতে কষ্ট হচ্ছিলো, তাই বাসা ছেড়ে এক নারীর সঙ্গে সাবলেটে ওঠেন এবার। ময়মনসিংহের বাড়িতে থাকা মা-বাবার কাছ থেকে মিথ্যা কথা বলে বারবার টাকা আনেন। ভার্সিটির টিউশন ফি বকেয়া হয়ে যায়। এতে খেয়াল নেই তার। এখন ইয়াবা ছাড়া কিচ্ছু চান না তিনি। মাদকের নেশায় বেপরোয়া হয়ে যান তৃণা। মিথ্যা বলে বলে ধার-দেনা করেন। পরিচিত বন্ধুদের স্বেচ্ছায় কাছে ডাকেন। তাদের প্রমোদ ভ্রমণে সঙ্গী হন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার..। বিনিময়ে টাকা নেন। ইয়াবা নেন।
শেষপর্যন্ত বন্ধু সাদিকের মাধ্যমে মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। সম্প্রতি তৃণার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দর উজ্জ্বল পথ হারিয়ে কিভাবে ঘোর অন্ধকারে হারিয়ে যান তিনি। অবশেষে ভুল বুঝতে পেরেছেন। এখন সুস্থ, সুন্দর জীবনে ফিরতে চান এই তরুণী। তৃণার পাশে দাঁড়িয়েছে তার পরিবার ও বন্ধু লালমাটিয়ার বাসিন্দা আবদুস সাদিক। তৃণা ছদ্ম নামের এই তরুণী অন্ধকার অতীত ভুলে থাকতে চান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status