মত-মতান্তর

নেতা আর জনতা

শামীমুল হক

১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

আচ্ছা কোন জিনিস যত্ন করে রান্নার পরও না খেয়ে ফেলে দেয়া হয়? যদি ফেলে দেয়াই হবে তাহলে রান্নারই বা কি দরকার ছিল । হ্যাঁ দরকার ছিল, আর দরকার ছিল বলেই রান্নাকরা হয়েছিল। এবং দরকার ছিল বলেই ফেলে দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৯ বছর পর এসেও আমরা জনগণ ওই প্রয়ােজনীয় জিনিসটির মতােই কখনও এক ধরনের রাজনীতিবিদদের হাতে নিগৃহীত হই। আবার কখনও তাদের পূজনীয় হই। আচ্ছা বলুনতাে কখন ১১-এর সঙ্গে ২ যােগ করলে ১ হয়। উওর নিশ্চয়ই ভুল করলে? না এখানে বলা হয়েছে। ঘড়ির কাটার কথা। ঘড়ির কাটায় ১১-এর সঙ্গে ২ যােগ করলে ১ হয়। ঘড়ির কাঁটার এ হিসাব জীবনের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে ফেললে নিশ্চয়ই সবকিছু ওলট পালট হয়ে যাবে। এ জন্যই যেখানে যে হিসাব সেখানে সে হিসাব মেলাতে হয়। আচ্ছা- আমাদের রাজনীতিকরা কোন হিসাব মেলান ? ১/১১ আমাদের জীবনের সব হিসাব গুলিয়ে দিলেও রাজনীতিকরা কি এখন সেই হিসাব মেলাচ্ছেন? নানা প্রশ্ন এখন সমাজে। রাস্তা- ঘাটে , হাটে- বাজারে, বাসে-ট্রেনে সর্বত্রই প্রশ্ন শােনা যায় ১/১১ আমাদের কি দিয়েছে । রাজনীতিকরা এ থেকে কি শিক্ষা পেয়েছেন? এখনওতাে কান পাতালে সমুদ্রের গর্জন , এখনওতাে খবরের পাতা সেই আগের চেহারায়। এখনওতাে দ্রব্যমূল্যের ঝাঁঝে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। এখনও সেই দুই মাতালের গল্পই বলতে হচ্ছে। কোন কিছুইতাে বদলায়নি। শুধু বদলেছে শাড়ি। দুই মাতালের গল্পটি এখন শুনে নেই । গভীর রাত। ফাঁকা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দুই মাতাল। হাঁটতে হাঁটতে তারা গিয়ে দাঁড়ায় একটি ৫ তলা বিল্ডিংয়ের কাছে। একজনের নজরে পড়ে বিল্ডিংটি। সঙ্গে সঙ্গে অপর মাতালকে বলে ওঠে এই চল এই বিল্ডিংডা আমাগ মহল্লায় নিয়ে যাই। আমাগ মহল্লায়তাে কোন বিল্ডিং নাই , এইডা নিলেতাে ভালই অয়। দু'জনে শলা- পরামর্শ করে এবার ওঠে দাঁড়ায়। বিল্ডিং - এর পাশে গিয়ে একসঙ্গে ধাক্কাতে থাকে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে হয়রান। একজন বলে ওঠে ওই আমরা যে ধাক্কাইতাছি , দেখতে কতদূর আগাইছি ? অপরজন বলে অনেকদূর। ওই মাতাল বলে তুই কেমনে বুঝলি ?
আরে বােকা , আমরা যখন ধাক্কানাে শুরু করি , তখন চাঁদটা ছিল ওই খানে। এখন দেখ চাঁদটা কই ? নিশ্চয়ই আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এই রাইতের মধ্যেই ঠেইল্লা লইয়া যাইতে হইব। তাড়াতাড়ি ঠেল। আবার শুরু হলাে ঠেলা। এভাবে ঠেলতে ঠেলতে দু' মাতালই ঘেমে অস্থির। আবারও দু'জন দাঁড়াল। এবার কাপড় খুলে পেছনে রেখে শুরু করল ঠেলা। ঠেলতে ঠেলতে অনেকক্ষণ পার। এবার একজন অপরজনকে জিজ্ঞেস করছে , ওই দেখ আমরা কতদূর আইছি। অপরজন পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের রাখা কোন কাপড়ই নেই। ভাবছে কাপড় যেখানে রেখেছিলাম সেখানেই রয়েছে। আমরাতাে অনেক দূর এগিয়েছি। আসলে দুই মাতাল যখন বিল্ডিং ধাক্কাচ্ছে , তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক চোর। সে তখন তাদের রাখা কাপড় নিয়ে পালিয়ে যায়। ওদিকে মাতাল ভাবছে , কাপড় যেখানে রেখেছিল সেখানেই রয়ে গেছে । তারা বিল্ডিং নিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। রাত প্রায় শেষ এর মধ্যেই বিল্ডিং ঠেলে নিতে হবে মহল্লায় । কাজেই বসে থাকার সময় নেই। তারা আবার ধাক্কাতে শুরু করে। ধাক্কাতে ধাক্কাতে ভাের হলো। একি আমরা যেখানে আছি , সেখানেই রয়েছি। একটুও এগােয়নি। মাঝখানে হারাল তাদের কাপড়। আমাদের রাজনীতেও চলছে একই অবস্থা। অর্থাৎ আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়েছি। মাঝখানে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ৪৯। এই হলাে অবস্থা। রাজনীতিতে গুনগত কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। কোথায় পরিবর্তন নেই। আগের মতােই চলছে সব। কোন কোন ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেছে। এসব দেখেই ওই বােকা ছেলের মতাে সেই কথাই বলতে হচ্ছে। এখানে বােকা ছেলে কেন ? আরে বােকা ছেলেই এখানে নায়ক। এক গ্রামে এক বােকা ছেলে ছিল। আর ওই ছেলের জন্যই অনেক দেখে শুনে তার মা বিয়ে ঠিক করেছে। বিয়ের দিন বােকা ছেলেকে বরের সাজে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মার কাছে। মাকে ছালাম করে বিদায় নিবে বরযাত্রী নিয়ে। মাকে ছালাম করার পর মা ছেলের হাত ধরে বলে বাবারে তুইতাে আমার বােকা ছেলে । আজ বিয়ের দিন। বিয়ে বাড়িতে অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুই কিছুতেই উওর দিতে পারবি না। খবরদার। যদি উওর দিতেই হয়, তাহলে তাের দুলাভাই দিবে। বরযাত্রী গিয়ে পৌছাল কনের বাড়ি। যথারীতি কাজী এসেছে বিয়ে রেজিস্ট্রি করাতে। হুজুর এসেছেন বিয়ে পড়াতে। বরের সামনে হুজুর গিয়ে বললেন , অমুকের মেয়ে অমুককে এত হাজার টাকা দেনমােহরানায় আপনার সঙ্গে বিয়ে

দিলাম। আপনি বলুন কবুল। বোকা ছেলে তখন মার কথা মনে পড়ে যায়। মা বলে দিয়েছে অনেকে অনেক কথা বলবে , কিছুতেই যেন - সে কিছু না বলে। এ কারণে বোকা ছেলে চুপ করে বসে আছে। বর কবুল বলছে না দেখে হুজুর ফের তাগাদা দিলেন। এভাবে ৩ বার বলার পর বােকা ছেলে বলে ওঠে না না আমি নই, যা বলার দুলাভাই বলবে। আমরা জনগনও বােকা ছেলের ফাঁদে পড়ে গেছি। চারদিকে নেই আর আছের মধ্যে পড়ে জনগনের ত্রাহি অবস্থা।  কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। জনগনের জীবন আর তেজপাতা যেন এক। আরে পেয়েছি। হ্যাঁ পেয়েছি। হুররে পেয়েছি। তেজপাতাইতাে সুন্দর করে রান্নার পর না খেয়ে ফেলে দেয়া হয়। সত্যিই তেজপাতা আর জনগনের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি ? রান্না সুস্বাদু করতে যেমন তেজপাতা দিতে হয়। তেমন নেতার প্রয়োজনে  জনগনকে তােয়াজ করতে হয়। রান্নার পর খাবার প্লেট থেকে তেজপাতা যেমন ফেলে দেয়া হয়। তেমনি প্রয়োজন ফুরালে নেতাও জনগণকে ছুড়ে ফেলে দেন।  যুগ যুগ ধরে তা চলে আসছে। চলবে। এর কোন হেরফের হবে না। নিশ্চিত করে তা বলা যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status