অনলাইন

বিনামূল্যে করোনা টেস্টের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন

দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই করোনা শনাক্তের হার কমছে। এই অবস্থায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই পরীক্ষা কেন্দ্রে ১০০ টাকা ফি-এর পরিবর্তে পুনরায় বিনামূল্যে টেস্ট করানোর সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। সোমবার (১৮ই জানুয়ারি) কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ২৫তম সভায় এই সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ হারের নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে লক্ষণবিহীন সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পরীক্ষার জন্য বর্তমানে ১০০ টাকা ফি নেয়া হয়, এটি বিনামূল্যে করার সুপারিশ করছি। সভায় নতুন পদোন্নতি পাওয়া জুনিয়র কনসালটেন্টদের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়, তারা বর্তমানে যেসব হাসপাতালে কর্মরত আছেন সেখানেই তাদের রাখার জন্য। কমিটি মনে করে, জুনিয়র কনসালটেন্টদের পদায়ন করা হলে এবং তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেলে কোভিড-১৯ রোগীদের যেসব হাসপাতাল চিকিৎসা দিচ্ছেন সেখানে শূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত না করা পর্যন্ত তাদের পদোন্নতি দিয়ে বর্তমানে যেখানে কর্মরত আছেন, সেখানে রাখা ভালো।

কমিটির সভায় বলা হয়, কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘোষিত আর্থিক সহায়তা এখনও পাননি। এজন্য চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা দরকার।

কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামশর্ক কমিটির ২৫তম অনলাইন সভা কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় পরামশর্ক কমিটির সদস্যসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার আমানুল হক উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের মার্চে বিনামূল্যেই নমুনা পরীক্ষা করছিল সরকার। কিন্তু গত ২৯ জুন নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়। যাতে করে হাসপাতাল বা নির্ধারিত বুথে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালে ২০০ টাকা এবং বাড়ি থেকে নমুনা নিয়ে এলে ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে সরকার। এরপর গত ১৯শে আগস্ট সরকারিভাবে করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় ফি ২০০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা এবং বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সভায় যুক্তরাজ্য থেকে বিমানে আগত যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে চারদিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর কোভিড-১৯ টেস্ট করে নেগেটিভ হলে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই রোগের সুপ্তিকাল ১৪ দিন, ফলে ১৪ দিনের মধ্যে যে কোন সময় তাদের সংক্রমিত হওয়ার এবং তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয় পরামশর্ক কমিটি এই সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করে। অধিকন্তু কোভিড-১৯ এর নতুন স্ট্রেইন এর জীবাণু অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য সকল দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরকেও ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ব্যবস্থার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়।

সভায় ভ্যাকসিন সারা দেশে দেয়ার যে পরিকল্পনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করেছে তার রূপরেখা তুলে ধরা হয়। কমিটি এ পরিকল্পনায় সন্তোষ প্রকাশ করে বেশ কয়েকটি মতামত প্রদান করেছে। ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করার জন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

ক) ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বড় বড় নগরীতে ভ্যাকসিন প্রদান কিছুটা চ্যালেঞ্জিং বিধায় এই সব এলাকায় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে সিটি করপোরশেনসহ সকল সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

খ) রেজিস্ট্রেশন-এর জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা দরকার। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।

গ) ভ্যাকসিন দেয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

ঘ) ভ্যাকসিন কার্যকরী হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য এন্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যথাযথ স্যাম্পলিং-এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার পর এন্টিবডি দেখা দরকার। ফার্মাকোভিজিল্যান্স এর জন্য প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

ঙ) কোভিড-১৯ টিকা পরবর্তী বছরগুলোতেও লাগার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরণের নতুন মহামারী সৃষ্টি হতে পারে বলে বৈজ্ঞানিকরা আশঙ্কা করছেন। অন্যান্য প্রচলিত রোগের জন্য শিশু ও বয়ষ্কদের টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি সক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বেসরকারি উদ্যোগের অনিশ্চয়তা ও দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা গড়ে তোলারও সুপারিশ করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status