প্রথম পাতা

সিরামের ভ্যাকসিন আসছে কাল

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৪৩ অপরাহ্ন

আগামীকাল বুধবার ভারত থেকে ২০ লাখ  ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা আসবে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেবে ভারত সরকার। এই টিকা তৈরি হচ্ছে সিরাম ইনস্টিটিউটে। সোমবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারকে টিকা উপহার দেয়ার ব্যাপারে চিঠি দিয়েছে। তিনি বলেন, চিঠিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কাল ২০শে জানুয়ারি এই টিকা আসার কথা।
ওদিকে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ভারত কিছু টিকা উপহার হিসেবে দেবে। আগামী ২৫ থেকে ২৬শে জানুয়ারি সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী ভ্যাকসিন আসবে। উপহারের চালান ওই চালানের আগেই আসতে পারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো জানান, বেসরকারিভাবেও টিকা আমদানি ও প্রয়োগ করার অনুমোদন দেয়া হবে। এ জন্য নীতিমালা করা হয়েছে। তার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২৫ বা ২৬শে জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ধাপের টিকার লট বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। পরবর্তী এক সপ্তাহ পরেই আমাদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে। এ জন্য ৪২ হাজার টিকা প্রদান কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ঢাকায় ৩০০টি চিকিৎসাকেন্দ্রে টিকা প্রদান কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। ১৮ বছরের নিচের কাউকে টিকা দেয়া হবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রথম ধাপে ডাক্তার, নার্স, টেকলোজিস্ট, সাংবাদিক, পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণের মধ্যে ৫৫ বছর বা তার উপরের বয়সের মানুষকে প্রথম ধাপে করোনার টিকা দেয়া হবে। করোনার ভ্যাকসিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে জনসাধারণকে সবধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেটা আছে, সেটি গুরুতর নয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এ জন্য আমি মনে করি, জনগণকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মেনে নিয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো ওষুধের কিংবা ভ্যাকসিনের সাইড ইফেক্ট থাকতে পারে। আমরা একটি ওষুধ গ্রহণ করলেও সেটার গায়ে লেখা থাকে, কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। আবার নাও হতে পারে। বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনেও হয়েছে। আমরা ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে জনসাধারণকে সবধরনের চিকিৎসা সহায়তা দেবো। তিনি বলেন, এ যাবৎ আমরা বাংলাদেশে যেসব ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি সেখানেও কিন্তু সাইড ইফেক্ট আছে। কাজেই আমি মনে করি, এটাতে বড় কোনো সমস্যা হবে না।
জাহিদ মালিক অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা ৪ ডলার করে সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে টিকা কিনছি। আর পরিবহনসহ সংরক্ষণে যে এক ডলার খরচ, সেটাও দেয়া হচ্ছে। আমাদের চুক্তি আছে যে, ভারত সরকার কম দামে কিনলে আমাদের কম দামে দেবে। বেশি দাম হলে আমরা সেই দামে নেবো না, আমরা কম দামেই নেবো। আমাদের কাছে যদি ২৫ থেকে ২৬শে জানুয়ারি ভ্যাকসিন চলে আসে, তারপরও আমাদের প্রিপারেশনের জন্য টাইম দরকার। আশা করি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করতে পারবো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গ্লোব বায়োটেককে আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা একটি ভ্যাকসিন ডেভেলপ করেছে। একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করতে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তাদের সেগুলো অনুসরণ করে আসতে হবে। আমরা দেখবো, আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যদি মানসম্পন্ন হয়, আমরা সব সময় সেটি গ্রহণ করে থাকি। আমাদের কাছে যখন যেটা সাহায্য চাইবে আমরা দেবো।
বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিনের মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিন আনার অনুমতি দেবো। একটি ভ্যাকসিনের দাম যেটা হবে, সেটি নির্ধারণ করার জন্য সরকারি প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা দামও নির্ধারণ করে দেবো। ভ্যাকসিনের যে নীতিমালা সেটিও করা হয়েছে, নীতিমালা ফাইনাল করে দেয়া হবে। সেই নীতিমালা অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সব ভ্যাকসিনের দাম এক হবে না। দেশ ভিন্নতায় ভ্যাকসিনের দাম ভিন্ন ভিন্ন হবে। কাজেই সেদিক লক্ষ্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করে দেবো। যেভাবে আমরা টেস্টের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি, সেভাবে ভ্যাকসিনের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, সিরামের পাশাপাশি ভারত সরকার আমাদের কিছু টিকা উপহারস্বরূপ দেবে। সেটি প্রথম চালানের আগে আসতে পারে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা উপহার হিসেবে দেয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের টিকার প্রস্তাব পেয়েছি তার উত্তর আমরা ইতিমধ্যে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে ৮ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এই ভ্যাকসিন রাখার জন্য আমাদের কিছু ফ্রিজ আছে, ইউনিসেফের মাধ্যমে আরো কিছু ফ্রিজ আনা হবে। ফাইজারের ভ্যাকসিন রাখতে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে সভাপতি মুরসালিন নোমানী এবং সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে সংগঠনের সদস্যদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির আহ্বান জানান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রত্যেক সাংবাদিক করোনার টিকা পাবেন। সারা দেশের সাংবাদিকরা টিকা পাবেন।
কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০২০ মোড়ক উন্মোচন: এদিকে, গতকাল বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য বুলেটিন-২০২০ মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সকলেই টিকা পাবেন। ১৫ কোটি টিকা রাখার ব্যবস্থা আছে। বিশ্বে যত টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি রয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, টিকা প্রদানের নিবন্ধনের জন্য অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এই সফটওয়্যারটি আগামী দুইদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। আগামী ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এটা দেয়া হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের ও বিএমআরসি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, করোনায় চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই পর্যন্ত ৩১ জনকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র একজন চিকিৎসক। বাকি ৩০ জনই আমলা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএমএ’র সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status