শেষের পাতা

হেলিকপ্টার ভাড়া করে মানুষ ঠকায় রুবেল

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩৮ অপরাহ্ন

পরিচয় দেয় আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর। এই পরিচয়ে ফান্ড তৈরির প্রলোভন দেখায়। আর এই ফান্ড ছাড় দিতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় সে। এরপরই চম্পট। খুঁজে পাওয়া যায় না তাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি আরো চমকপ্রদ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে হেলিকপ্টার ভাড়া করে যাতায়াত করতো রুবেল আহম্মেদ। জানা গেছে, শুধুমাত্র টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সহজেই আস্থা অর্জন করতেই এই পন্থা অবলম্বন করতো এই প্রতারক। রুবেলের টার্গেট ছিল ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি।
গত রোববার রাতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ইকোনমিক অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিমের সদস্যরা তাকে উত্তরা এলাকা থেকে  গ্রেপ্তার করে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ  তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অভিনব কৌশলে রুবেল আহম্মেদ সাধারণ মানুষের সঙ্গে  প্রতারণা করতো। তার টার্গেট ছিল প্রতিনিধি। তার কাছ থেকে বিদেশি একটি সংস্থার ভুয়া কাগজপত্র, সিল, প্যাড উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সিটিটিসি সূত্র জানায়,  প্রতারক রুবেল আহম্মেদ সমপ্রতি কুষ্টিয়া জেলার  খোকসা উপজেলার ৩ নং  বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করে সেখানে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, দরিদ্রপীড়িত   লোকের তালিকা প্রস্তুত করে। এ জন্য সে স্থানীয় ইউপি  চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। ইউপি চেয়ারম্যানকে  প্রতারক রুবেল আহম্মেদ জানায়, তার কাছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার একটি অনুদান রয়েছে। এই অনুদানের অর্থ দিয়ে সে  গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ও  দরিদ্র  লোকদের আবাসন নির্মাণ, স্কুল নির্মাণ, নদী ভাঙন রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, কৃষকদের ডিপ টিউবওয়েল  প্রদান, দুস্থদের চিকিৎসাসেবা  প্রদান করবে। স্থানীয়  জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তার কথায় আস্থা অর্জন করে এলাকার দরিদ্র পরিবারদের মধ্যে দুইশ’ জনের একটি তালিকা তৈরি করে। জানা গেছে, এলাকার মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য  সে প্রাথমিকভাবে কিছু ইট ক্রয় করে এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির জমি ক্রয়ের জন্য  দেড় লাখ টাকা বায়নাও করে। এসব কাজ তদারকি ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মিটিং করার জন্য সে ঢাকা  থেকে তিনবার হেলিকপ্টার নিয়ে কুষ্টিয়ায় ভ্রমণ করে। পরবর্তীতে  প্রজেক্টের অর্থ ছাড় করার জন্য আড়াই শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনজিও  ব্যুরোর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানায়। একই সঙ্গে প্রজেক্ট  থেকে অর্ধেক অর্থ ব্যয় করে বাকি অর্ধেক তাদের মুনাফা হিসেবে ভাগ করে নিতে পারবে বলে প্রলোভন  দেখায়। প্রতারক রুবেলের এই  প্রস্তাবে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি দুই দফায় এই  প্রতারকের হাতে ৪৩ লাখ টাকা তুলে দেয়। টাকা হাতে পাওয়ার পর প্রতারক রুবেল আহম্মেদ মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
সিটিটিসি’র একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতারক রুবেল আহম্মেদ নিজেকে কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল  কো-অপারেশন নামে একটি কথিত সংস্থার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দিতো। উত্তরার একটি হোটেল কাম বাসার কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতো। কুষ্টিয়া  থেকে যারা আসতো তাদের সঙ্গে ওই কক্ষেই সে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করতো। রাজধানীর উত্তরার ১৮ নম্বর  সেক্টরের একটি বাসায় থাকতো। লিটন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি এনজিওতে কিছুদিন চাকরি করেছে  সে। ওই এনজিওতে চাকরি করার সময়  প্রতারণার এই অভিনব  কৌশল তার মাথায় আসে।
পুলিশ জানায়,  প্রতারক রুবেল একই কৌশলে এর আগে মাগুরা ও খাগড়াছড়ি  থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ  প্রতারণা করে আত্মসাৎ করে।  সে ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেড় বছর অবস্থান করার পর  দেশে চলে আসে। তার  গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। রাজধানী ছাড়াও কুষ্টিয়া, মাগুরা ও খাগড়াছড়িতে তার বিরুদ্ধে একাধিক  প্রতারণা মামলা রয়েছে। তার কাছ  থেকে যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে তাতেও বাবার নাম দুই ধরনের পাওয়া গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও পাসপোর্টে নিজের খালুর নাম বাবার নামের জায়গায় বসিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে রুবেল জানিয়েছে, সে ইচ্ছা করেই পাসপোর্টে বাবার নাম ভুল দিয়েছিল। যাতে  প্রতারণা করে দেশের বাইরে চলে গেলে তাকে আর কেউ খুঁজে বের করতে না পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status