শেষের পাতা
সিলেটে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার বিদ্রোহী বহিষ্কার
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ৯:৩৭ অপরাহ্ন
সিলেটে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চার বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর ওপর দলের শাস্তির খড়গ নেমেছে। চারজনকেই করা হয়েছে বহিষ্কার। তবে- এই বহিষ্কারের চিন্তা মাথায় নেই তাদের। এখন তাদের লক্ষ্য নির্বাচনে জয়লাভ করা। শাস্তি হবে জেনেই তারা নির্বাচনী মাঠে নেমেছিলেন। এবং নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন। এদিকে- সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। তৃতীয় ধাপে সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও জকিগঞ্জ পৌরসভায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচন। ইতিমধ্যে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করে ভোট প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। দুটি পৌরসভায়ই এবার নৌকার প্রার্থীরা নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। গোলাপগঞ্জে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন- পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ। তিনি একেবারেই নবাগত প্রার্থী। ক্লিন ইমেজ থাকলেও ভোটের মাঠে নতুন হওয়ায় নিজ দলের দুই বিদ্রোহীর কারণে সুবিধা করতে পারছেন না। দুই বিদ্রোহী হচ্ছেন অনেক শক্তিশালী প্রার্থী। গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় পরপর দুইবার নৌকা নিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। তিনি ছাত্র জামানা থেকে উপজেলার জাঁদরেল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। দুইবার নৌকা নিয়ে প্রার্থী হলেও এবার তিনি হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ভোটের মাঠে অতি পরিচিত জাকারিয়া আহমদ পাপলু পুরাতন হওয়ায় তার শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। এবারের নির্বাচনে নৌকা ছাড়া আরো শক্তি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। একই ভাবে পাপলুর মতোও শক্তিশালী প্রার্থী বর্তমান মেয়র পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাবেল। তিনি গত উপ-নির্বাচনে বিদ্রোহী হয়ে নৌকার প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি নৌকার মনোনয়নের জন্য লড়াই করলেও পাননি। অবশেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই ভোটের মাঠে নেমেছেন। রাবেল জানিয়েছেন, পৌর মেয়র থাকাকালে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন তাতে জনগণ তার পক্ষে রয়েছে। বর্তমান মেয়র হওয়ার কারণে তাকে ভোটের মাঠেই থাকতে হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে বিদ্রোহী হয়ে মাঠে থাকার কারণে পাপলু ও রাবেলকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সকালে এক বৈঠকে তাদের বহিষ্কার করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেটের নেতারা। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাবেল ও একই কারণে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ পাপলুকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানান তারা। সিলেটের জকিগঞ্জে এবার ভোটের সমীকরণ ভিন্ন। কারণ পৌর শহর হলেও জকিগঞ্জের উন্নয়ন তেমন ঘটেনি। ফলে এবার উন্নয়নের নায়ককে খুঁজছেন জকিগঞ্জের মানুষ। গোলাপগঞ্জের মতো জকিগঞ্জের আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। আওয়ামী লীগ এবার পৌরসভায় নৌকার মনোনয়ন দিয়েছে বর্তমান মেয়র হাজী খলিল উদ্দিনকে। খলিল উদ্দিনকে নিয়ে জকিগঞ্জ আওয়ামী লীগে ঘটেছে অনেক নাটকীয়তা। জকিগঞ্জের সাবেক পৌর মেয়র ছিলেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সোনা উল্লাহ। পৌর শহরে তার অবস্থান ছিল একচেটিয়া। সোনা উল্লাহর মৃত্যুর পর জকিগঞ্জ পৌর শহরে আওয়ামী লীগ বহুভাবে ভাগ হয়েছে। তবে বড় অংশটি এখনো সোনা উল্লাহর পরিবারের সঙ্গে আছে। সোনা উল্লাহ’র ছেলে আব্দুল আহাদ উপজেলা যুবলীগের বর্তমান আহ্বায়ক। পৌর শহরে রয়েছে তার দাপট। এ কারণে এবারের পৌর নির্বাচনে আব্দুল আহাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন। এরই মধ্যে তিনি প্রচারণা শুরু করেছেন। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বড় অংশের নেতারা রয়েছেন। ইতিমধ্যে তারা বৈঠক করে আব্দুল আহাদকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে দলীয় শাস্তির খড়গ আব্দুল আহাদ জানতেন। আর জেনেই তিনি পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। জকিগঞ্জে আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ। তিনিও এবার আটঘাট বেঁধে প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, জকিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ ও জকিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আব্দুল আহাদের বিষয়ে সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আওয়ামী লীগের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দির খান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্ত না মেনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সুপারিশের ভিত্তিতে সিলেটের জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জের ৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।