অনলাইন

অশ্লীলতা রোধ এবং রাজস্ব আদায়ে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৮:৩৬ অপরাহ্ন

আন্তর্জাতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ওভার দ্য টপ (ওটিটি) প্ল্যাটফরম নির্ভর কনটেন্ট প্রকাশ ও পরিবেশনের ওপর তদারকি, নিয়ন্ত্রণ, অশ্লীলতা রোধ এবং রাজস্ব আদায়ে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে তথ্য সচিব ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বিটিআরসি’র প্রতিবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। আর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-মহাপরিদর্শকের দেয়া প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। রিটকারীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ। পরে রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, পূর্ব নির্দেশনা অনুসারে আদালতে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান এবং সাইবার পুলিশ সেন্টারের পক্ষ থেকে দুটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। বিটিআরসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হইচই, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, বঙ্গবিডির মতো প্লাটফরম থেকে দেশে কোনো রাজস্ব আদায় হয় না। কোনো ধরনের রেগুলেশন না থাকায় সেটি আদায় হচ্ছে না। আর সাইবার পুলিশ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পর্নোগ্রাফি আইন থাকলেও প্ল্যাটফরম থেকে অশ্লীলতা রোধে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নাই। যার ফলে সব সময় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ কারণে যদি এই ধরনের একটি নীতিমালা হয় তাহলে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সুবিধা হবে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালত একটি খসড়া নীতিমালা করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বছর ১২ই জুলাই, ওটিটি-নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন রোধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ।

গত ৮ই সেপ্টেম্বর শুনানির পর আদালত রুল জারি করে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য সচিব, সংস্কৃতি সচিব, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় বিটিআরসি ও পুলিশের পক্ষ থেকে  সোমবার দু’টি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
বিটিআরসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ওটিটি প্ল্যাটফরমের সঙ্গে বিটিআরসি’র কোনো চুক্তি হয়নি এবং আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফরমগুলো বিটিআরসি’র লাইসেন্সপ্রাপ্তও নয়। বিটিআরসি এসব ওটিটি প্ল্যাটফরম থেকে কোনো রাজস্ব সংগ্রহ করে না। ফলে আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফরমের ওপর বিটিআরসি’র কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা আরোপের সুযোগ নেই। আর পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওটিটি-নির্ভর এ ধরনের প্ল্যাটফরমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এসব প্ল্যাটফরম কোনো টিরেসট্রিয়াল চ্যানেল ব্যবহার না করে সরাসরি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে। ফলে একজন দর্শক কোনো ধরনের ক্যাবল অথবা ডিশ অ্যান্টেনা ছাড়াই শুধু ইন্টারনেট এবং স্মার্ট টিভি/ফোন ব্যবহার করে এসব ওয়েব কনটেন্ট দেখতে পারে।

ফলে ওটিটি-নির্ভর প্ল্যাটফরমগুলো বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল দেশেই দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বাংলাদেশের বাইরে এ ধরনের বেশকিছু বিখ্যাত ওটিটি প্ল্যাটফরম হচ্ছে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, জি-ফাইভ, হটস্টার, আড্ডা টাইমস এবং হইচই। এর বাইরেও শত শত আঞ্চলিক প্ল্যাটফরম রয়েছে। এসব প্ল্যাটফরমে যেকোনো দেশের জনগণ সাবস্ক্রিপশন কেনার মাধ্যমে কনটেন্ট দেখতে পারে। সুতরাং এ ধরনের শত শত ওটিটি-নির্ভর প্ল্যাটফরমের হাজার হাজার কনটেন্ট রয়েছে, যাতে এমন অনেক অনৈতিক বক্তব্য, ছবি ও ভিডিওর ব্যবহার রয়েছে, যা আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬৯ (ক), (খ) এবং ৭৮ ধারার উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ সরাসরি এ ধরনের ঘটনা অনুসন্ধান বা তদন্ত করতে পারে না। একমাত্র কমিশনের লিখিত অনুমোদন সাপেক্ষে পুলিশ তদন্ত করতে পারে। তবে সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার মনিটরিং টিম সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়ার পাশাপাশি এসব ওটিটি প্ল্যাটফরমের ওপরও নিয়মিত নজর রাখছে জানিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, “সাইবার পুলিশ তাদের নিকট এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ, মামলা অথবা উপরিল্লিখিত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে দ্রুত উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্মিত যেকোনো চলচ্চিত্র প্রচার বা প্রদর্শনের আগে জাতীয় সেন্সর বোর্ডের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফরম ছাড়াও কেবল টেলিভিশনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণÑ তা দেখার জন্য কার্যকর কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। এ ধরনের যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ থাকলে এ ধরনের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status