প্রথম পাতা

ভ্যাকসিন প্রস্তুতি জোরদার দুই-একদিনের মধ্যে অ্যাপ হস্তান্তর

সিরাজুস সালেকিন

১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৯:২১ অপরাহ্ন

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা ভ্যাকসিন দেশে আসার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই ডেটলাইনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দপ্তরসমূহ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাকসিন আসার পর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে স্বচ্ছতার সঙ্গে তা বিতরণ। এজন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফরম নির্মাণ করেছে আইসিটি অধিদপ্তর। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এই অ্যাপ হস্তান্তর করা হতে পারে। প্রস্তুতি পর্বের সবগুলো ধাপ শেষে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দেশে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে অতিরিক্ত সচিব (জনসংখ্যা অনুবিভাগ) মো. মুহিবুর রহমান জানান, করোনা ভ্যাকসিন বিতরণ কার্যক্রমের জন্য আইসিটি অধিদপ্তর অ্যাপ তৈরি করছে। দ্রুত সময়ে ভ্যাকসিন কীভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় সে লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণের আবেদনের অ্যাপ প্রস্তুতির কাজ শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে টেস্টিং ও ডিপ্লয়মেন্টের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই অ্যাপটি উন্মুক্ত করা যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রথমে অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে হবে। সেখানে ১৯টি ক্যাটাগরি থেকে ব্যবহারকারীর ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। এরপর ব্যবহারকারীকে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রদান করতে হবে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর সকল তথ্য গ্রহণ করবে। এরপর ব্যবহারকারীকে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু তথ্য সরবরাহ করতে হবে। ভ্যাকসিন গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তির ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা অন্য কোনো জটিল অসুখ আছে কিনা তা জানতে চাইবে। এসব তথ্য দেয়ার পর আবেদনকারীকে তার বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হবে। ওই নম্বরে একটি সাময়িক পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হবে। এই ওটিপি দিয়ে অ্যাপে প্রবেশের পর আবেদনকারী একটি ভার্চ্যুয়াল কার্ড দেখতে পাবেন। সেখানে কখন ও কোথায় আবেদনকারীকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে সেই তথ্য থাকবে। ভ্যাকসিন গ্রহণের পর আবেদনকারীকে একটি সার্টিফিকেটও প্রদান করা হবে অ্যাপের মাধ্যমে। বিভিন্ন দূতাবাস ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ওই সার্টিফিকেটটি যাচাই করে দেখতে পারবেন যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন কি-না। অ্যাপের বিকল্প একটি ওয়েবসাইটও থাকছে যেখানে একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ভ্যাকসিনের জন্য আবেদন করা যাবে। গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে ‘ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ভ্যাকসিনেশন প্ল্যান ফর কোভিড ভ্যাকসিন ইন বাংলাদেশ’ ডকুমেন্টের বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ভ্যাকসিনের নিবন্ধ প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় বলা হয়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ প্রদানে আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মাধ্যমে সুরক্ষা ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে। ভ্যাকসিন নিতে হলে নাগরিকদের অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর যথাযথ নিয়ম মেনে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা যাবে। একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অন্যদিকে, ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য ৪২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে টেকনোলজিস্ট, নার্স, মিডওয়াইফ ও ভলান্টিয়ার রয়েছে। সভা শেষে মন্ত্রী জানান, আগামী ২৫-২৬ জানুয়ারির মধ্যে সিরামের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রথম লট আসার কথা। ভ্যাকসিন আসলে তা ট্রান্সপোর্ট ও স্টোরেজ করার ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক জেলায় যে স্টোরেজের ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে ৭ লাখ ডোজের বেশি ভ্যাকসিন রাখা সম্ভব হবে। উপজেলা পর্যায়ের স্টোরেজে আমরা দুই লাখের অধিক ডোজ রাখতে পারবো। ভ্যাকসিন প্রয়োগ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। মুখ্য সচিব এই কমিটির প্রধান থাকবেন। তার নেতৃত্বে ভ্যাকসিন কমিটি কাজ করবে। জেলা, উপজেলা পর্যায়েও কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রথম ছয় মাসে দেড় কোটি মানুষের প্রতিজনকে দুই ডোজ করে মোট ৩ কোটি ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশে সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকার ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা সরবরাহ করবে। অক্সফোর্ডের তৈরি এ ভ্যাকসিন প্রত্যেককে দুই ডোজ করে দিতে হয়। সে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল প্রথম চালানের ৫০ লাখ ভ্যাকসিনের অর্ধেক ২৫ লাখ মানুষকে দিয়ে তাদের জন্য বাকি টিকা সংরক্ষণ করা হবে। তবে সে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার নতুন তথ্যানুযায়ী প্রথম ডোজ দেয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে। সে কারণে প্রথম চালানে পাওয়া ভ্যাকসিন প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status