বাংলারজমিন
ধর্ষণ মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অজুহাত
স্টাফ রিপোর্টর, চট্টগ্রাম থেকে
১৭ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ৮:৪২ অপরাহ্ন
পুলিশের খাতায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ধর্ষণ মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি মোহাম্মদ এনাম। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজীদ থানার আতুরার ডিপো এলাকায় সম্প্রতি তার খোঁজ পান মামলার বাদিনী। আর তাকে গ্রেপ্তারে রাতভর পাহারা দিয়েও পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাননি তিনি। গতকাল সকালে এ তথ্য জানান মামলার বাদিনী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরোয়ানাভুক্ত আসামি এনামকে গ্রেপ্তারে নগরীর বায়েজীদ থানা ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক প্রদীপ দে কে ফোন করে এবং থানায় গেলেও নানা অজুহাত দেখান তারা। তিনি বলেন, আমার কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ২০২০ সালের ১৯শে জানুয়ারি তিন আসামি আল-আমীন, ফরিদা ইয়াছমিন ও মোহাম্মদ এনামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কিন্তু বিগত এক বছরেও তিন আসামির একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। বাদিনী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর আতুরার ডিপো এলাকার শান্তিনগর কলোনিতে মামলার অন্যতম আসামি মো. এনামের অবস্থান নিশ্চিত হই। এরপর বিষয়টি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রদীপ দে-কে জানানো হয়। উত্তরে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, আমি গুরুত্বপূর্ণ ডিউটিতে আছি। তাছাড়া আসামির অবস্থান বায়েজীদ বোস্তামি থানা এলাকায়। আসামি ধরতে ওই থানা এলাকায় যেতে হলে ওসির অনুমতি লাগবে। বিষয়টি হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব শর্মাকে জানালে তিনি আমাকে থানায় যেতে বলেন। শেষে কয়েকজন মিলে কৌশলে আসামি এনামকে পাহারায় রেখে আমার স্বামী রাত ১২টার দিকে ছুটে যান হাটহাজারী থানায়। সেখানে যাবার পর রাজীব শর্মা সই করে আসামির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপি আমার স্বামীকে ধরিয়ে দিয়ে বায়েজীদ বোস্তামি থানায় যেতে বলেন। সেখানে গিয়ে পরোয়ানার কপিটি ওসি প্রিটন সরকারকে দেন। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য ডিউটি অফিসারের কাছে পাঠান। ডিউটি অফিসার বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা না এলে আসামি ধরা সম্ভব হবে না। তাছাড়া ওয়ারেন্টের কপিও ফটোকপি। আসলটা লাগবে। এ বিষয়ে ফোন করে পুনরায় আসামিকে ধরতে প্রদীপ দে-কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি বলেন, আমি ওয়ারেন্টে সই করে দিয়েছি। বায়েজীদ থানা পুলিশ চাইলে আসামি ধরতে পারবেন। এরপর কলোনিতে একজনের ঘরে অবস্থান নিয়ে রাতভর আসামিকে পাহারা দেয়া হয়। কিন্তু রাত পেরিয়ে ভোর হলেও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে যাননি পুলিশ। বায়েজীদ বোস্তামি থানার ওসি প্রিটন সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, অন্য থানার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে কিছু নিয়ম আছে। সেটা আমাদের মেনে চলতে হবে। তবে হাটহাজারী থানা থেকে আসামি ধরতে বললে আমি ব্যবস্থা করতাম। তাছাড়া তারা নিজেরা এসে তো ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন। হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব শর্মা বলেন, ওই রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রদীপ দে ডিউটিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাছাড়া আমি তো ওয়ারেন্টে সই করে বাদীকে বায়েজীদ থানায় পাঠিয়েছি। তারা চাইলে তো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারতেন। উল্লেখ্য, কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে ২০১৯ সালের ৫ই মে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে মামলা করেন ভিকটিমের মা। আদালত সংশ্লিষ্ট আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।