মত-মতান্তর

ও-লেভেলের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা: সমস্যার ‌উৎসমূলে‌ যাওয়া দরকার

ড. মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন

১৬ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

ক’দিন আগে রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ও-লেভেলের এক ছাত্রী তার বন্ধুর বাসায় ধর্ষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। অভিযোগ আছে, গ্রুপ স্টাডির কথা বলে মেয়েটিকে ডেকে নেয়া হয়। প্রাথমিক ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মেয়েটি বিকৃত যৌনাচারের শিকার হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে হাইপোভোলেমিক শকে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেয়েটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে ধর্ষণকারী ওই বন্ধুই হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ বাসায় ওই মুহুর্তে অভিযুক্ত ছেলেটির আরও কিছু বন্ধু অবস্থান করছিল। ওরাও ধর্ষণে জড়িত ছিল কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। আদালত ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন। ফরেনসিক বিভাগ ও পুলিশ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ঘটনার সাথে একাধিক ব্যক্তির সংশ্লেষ থাকলে তা ডিএনএ পরীক্ষায় বেরিয়ে আসবে।

এ ঘটনায় যথারীতি সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঘটনার বিভৎসতায় ক্ষোভে-বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ে সারাদেশ। এই নিষ্ঠুরতার প্রতিবাদে এবং সংঘটিত অপরাধের কঠোর শাস্তির দাবিতে মাঠে নামে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পর থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্বলন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ইত্যাকার নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এরূপ কোন ঘটনা ঘটলে যা হয় আর কি! একেকটি ঘটনা ঘটে আর চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধী ধরাও পড়ে। বিচার-আচার হয় এবং শেষাবধি অপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। এখানেও হয়তো এগুলো সবই হবে। মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে। আশা করা যায়, বিচারও হবে। এতে হয়তো ভিকটিমের বাবা-মা, আত্মীয়-পরিজন, সতীর্থ-শুভানুধ্যায়ী এবং সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষ এক ধরণের মানসিক সান্তনা পাবে। কিন্তু, যে মেয়েটি তার সম্ভ্রম হারাল, অব্যক্ত যন্ত্রণার শিকার হয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল সে কি আর ফিরে আসবে? আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ব্যবস্থা নেয়াতে কি এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হচ্ছে বা হবে? না হয়ে থাকলে কেন?

এদেশে আবহমান কাল থেকে কিছু প্রবাদ-প্রবচন চালু আছে। এসব প্রবাদ-প্রবচন যুগের পর যুগ বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে মানুষের অর্জিত ও সঞ্চিত অভিজ্ঞতাকে প্রতিফলিত করে। এমনই একটি প্রবচন: ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ।’ রবি ঠাকুরের ‘পুরাতন ভৃত্য’ শীর্ষক কবিতার এই কবিতাংশটুকুও হয়ত একই রকম অর্থ বহন করে: ‘যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর!’। এদেশে যখন কোন কিশোরী-তরুণী যৌন নিপীড়নের শিকার হন, কিছু লোক অতি সহজে এ অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব চাপানোর জন্য দুটো সহজ টার্গেট বেছে নেন। এক,  ভুক্তভোগী মেয়ে ও তার অভিভাবক। আপনি দেখে থাকবেন, মেয়ের চরিত্র ভালো নয়, অভিভাবকরা মেয়েকে দেখে-শুনে রাখেননি কেন-  এধরণের কথা-বার্তা জনে জনে মুখে মুখে ফিরছে। দুই, সরকার, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ। এদের অকর্মন্যতাই যে সব নষ্টের মূল, আমাদের কিছু বন্ধু অতিদ্রুত প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এ রায় দিয়ে ফেলেন।

আমি জানি, আমাদের কিছু বন্ধু এরই মধ্যে আমাকে ভুল বুঝে বসে আছেন। বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলা দরকার। আমার মনে হয়, বাড়ন্ত বয়সের মেয়েদের সাবধানে চলা এবং তাদের প্রতি অভিভাবকদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা যে জরুরি, এ বিষয়ে কেউই দ্বিমত পোষণ করবেন না। কিন্তু, এটা বলার সময়ে আমরা অনেকেই এ বয়েসি ছেলে-মেয়েদের সুপথে রাখতে ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সমাজ এবং রাষ্ট্রেরও যে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে, সেটা বেমালুম ভুলে যাই। বেপথু ছেলে-মেয়ে এবং তাদের অভিভাবক ও পরিবার-পরিজনের সমালোচনা করেই আমরা আমাদের দায় সেরে ফেলি। সামগ্রিক পরিবেশের সুস্থিতি নিশ্চিতে আমাদের যে একটি কার্যকর সামষ্টিক ভূমিকা রাখা প্রয়োজন তা নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবছি কিংবা কতটুকু করতে পারছি সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়ার সময় এসেছে। আধুনিক যুগে আমরা যখন ছেলে-মেয়েদের সবাইকে স্কুল- কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছি, এ ছেলে-মেয়েগুলো কতক্ষণই বা মা-বাবার চোখের সামনে থাকে? বাসার বাইরে কোন ছেলে বা মেয়েকে যদি সমাজের চোখে অগ্রহণযোগ্য কর্মে ব্যাপৃত হতে দেখা যায় তাকে নিবৃত করা এবং প্রয়োজনে বিষয়টি অভিভাবকদের গোচরে আনা কি সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না?

এবার অন্য একটি দিক ভেবে দেখুন। বাবা-মা দু’জনই যখন চাকুরিজীবি, তাদের স্কুলগামী ছেলে-মেয়েগুলোর দেখ-ভাল করবে কে? গাঁও-গেরামে একান্নবর্তী পরিবারে এই সাপোর্টটুকু দেয়ার জন্য কাউকে না কাউকে পাওয়া যায়। শহরাঞ্চলে ফুল-টাইম কাজের বুয়া রাখা ছাড়া আর ভালো কোন বিকল্প আছে কি? আমাদের দেশে এ ধরণের সার্ভিস দেয়ার জন্য চাইল্ড কেয়ার টাইপের তেমন কিছু কি গড়ে ওঠেছে? কাজের বুয়া পাওয়াও ত এখন অনেক মুশকিল হয়ে পড়েছে। একদিকে তাদের নিজেদেরও ছেলে-পুলে, ঘর-সংসার আছে, অন্যদিকে গার্মেন্টস শিল্পের সুবাদে এদের অনেকের এখন অপেক্ষাকৃত ভালো মাইনেতে বিকল্প কর্মসংস্থান জুটছে। বাদ থাকল, মা-বাবার কেউ একজনের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে নিজেকে পুরো দস্তুর গার্হস্থ্য কর্মে নিয়োজিত করা। আজকালকার টানাটানির দিনে একজনের বেতনে চলাও ত কোন সহজ বিষয় নয়। তাছাড়া, একজন উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবিকে যদি বসে বসে ঘর পাহারা দিতে বলা হয়, এটা কি তার প্রতি সুবিচার হবে? আসলে, আধুনিক সমাজে যে বিষয়টি আমরা প্রায়শ ওভারলুক করে যাচ্ছি তা হল, সন্তান জন্মদান থেকে শুরু করে বাড়ন্ত বয়সে তার দেখ-ভাল করার যে বিশাল ও কঠিন কর্মযজ্ঞ তা কর্মজীবি বাবা-মায়েরা, বিশেষ করে উভয়েই যখন চাকুরি করছেন, কিভাবে ম্যানেজ করবেন। এ বয়সের ছেলে-মেয়েদের জানার আগ্রহ প্রবল, তাদের মধ্যে একরকম জেদি-একরোখা মনোভাব কাজ করে, জীবনের তিক্ত ও কঠিন দিকগুলোর অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে হুজুগ ও আবেগের বশে পদে পদে ভুল পথে পা বাড়ানোর আশংকা থেকে যায়। এসব কারণে ছেলে-মেয়েরা যাতে ভুল পথে পা না বাড়ায়, তজ্জন্য বলা চলে সার্বক্ষণিক পরিচর্যা ও নজরদারির প্রয়োজন। এহেন অবস্থায়, বাবা-মা দু’জনেই যদি চাকুরিতে থাকেন আর একারণে সন্তানের ঠিক মতো খোঁজ-খবর রাখতে ব্যর্থ হন, এক্ষেত্রে যথার্থ পরিচর্যা ও শাসনের অভাবে ছেলে-মেয়ে বেপথু হলে অবাক হওয়ার কিছু আছে কি?

এটা আনন্দর বিষয় যে, আজকের দিনে নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নে সমাজ ও রাষ্ট্র অনেক সোচ্চার। নারী নির্যাতন ও নারী নিগ্রহের বিরুদ্ধেও উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু, এতে করে কর্মজীবি নারীদের সংসার নির্বাহ ও পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, তা নিরসনে আমরা কতটুকু দৃষ্টি দিচ্ছি? আমরা কি রাষ্ট্রীয়/ সামাজিক ব্যবস্থাপনায় তাদের সন্তান-সন্ততিদের দেখভালের একটি ব্যাপকভিত্তিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কি নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে এই ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে কিছু অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে পারে? কর্মজীবি নারীদের এ অসুবিধার কথাটি বিবেচনায় নিয়ে তাদের কর্মঘণ্টা কি কমিয়ে দেয়া যেতে পারে? তাদের অফিসে উপস্থিতির বিষয়ে কি একটু নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে? পারিবারিক প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে অফিসের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি কি সহৃদয়তার সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে? যেখানে প্রযোজ্য, নারীদের জন্য কি ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ‘ওয়ার্কি ফ্রম হোম’ সিস্টেম চালু করা যেতে পারে?

এবার আমি পুরো বিষয়টির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সমাজে উঠতি বয়সের মেয়েদের পদে পদে অনেক বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। এর মধ্যে একটি হল, স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার পথে কিংবা ক্যাম্পাসে কিছু ছেলে তাদের পিছু নেয়। এদের মধ্যে আবার কিছু ছেলে পারিবারিক প্রতিপত্তি কিংবা রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে দুর্বিনীত হয়ে ওঠে এবং স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলে। কোন মেয়েকে পছন্দ হলে তার কাছে প্রেম প্রস্তাব পাঠায় এবং তা গৃহীত না হলে মেয়েটিকে নানাভাবে উত্যক্ত করে তার জীবনকে অসহনীয় করে তুলে। আরেকটি অংশ থাকে যারা আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ গোছের এবং প্রথম গ্রুপটির মতো অতটা আগ্রাসী না হলেও তাদের প্রেম-ভালবাসার চাহিদা মেটাতে সতত মেয়ে খুঁজে বেড়ায়। আসলে, বয়সটাই এমন। এ বয়েসি ছেলে-মেয়েদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রবল আকর্ষণ কাজ করে। কাজেই, আপনি এমন কিছু মেয়েও খুঁজে পাবেন যারা ছেলে পছন্দ হলে সোৎসাহে তার প্রস্তাবে সাড়া দেয়। এদের কেউ কেউ আবার নিজেরাই পছন্দ মতো ছেলের সন্ধানে ব্যস্ত থাকে। নিঃসন্দেহে এটি সহজাত মানবীয় প্রবৃত্তিরই একটি অংশ। কাজেই, আপনি এটাকে কেবল বাঁকা চোখে দেখলে মানব প্রকৃতিকেই অস্বীকার করা হবে। সমস্যা দেখা দেয়, একটি মেয়ে যখন এমন কারও সাথে জড়িয়ে পড়ে যার নীতিবোধ দুর্বল, যার চরিত্রে মিশে আছে প্রতারণা ও লাম্পট্য। সব হারিয়ে একটি মেয়ে যখন বিষয়টি বুঝতে সমর্থ হয়, দেখা যায় অনেক দেরি হয়ে গেছে।

আসুন, বিষয়টি আরও একটু বিস্তৃতভাবে দেখা যাক। এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত, আলোচিত ও দামী শব্দটি মনে হয় ‘ভালবাসা’। যদিও ভালবাসার ব্যাপ্তি অনেক বড়, সাধারণভাবে বয়ঃপ্রাপ্ত নারী-পুরুষের পারষ্পরিক ভালবাসার বিষয়টিই সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ রক্ষণশীল। এ সমাজ ছেলে-মেয়েদের বিবাহ-পূর্ব প্রেম-ভালবাসার সম্পর্কে উৎসাহ যোগায় না। কিন্তু, তাতে কি? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা সমাজের বৃহত্তর পরিসরে ত ছেলে-মেয়েরা অনায়াসে মেলা-মেশার সুযোগ পাচ্ছে। তাছাড়া, এ বয়েসি ছেলে-মেয়েদের গান-বাজনা, সিনেমা-থিয়েটার, গল্প-উপন্যাস ইত্যদির প্রতি বিশেষ আগ্রহ কাজ করে, যাদের বেশিরভাগেরই অন্যতম প্রধাণ উপজীব্য হয়ে থাকে নর-নারীর প্রেম-ভালবাসার রসায়ন। সুতরাং, পরষ্পরের সাথে অবাধ মেলামেশার সুবাদে কিছু ছেলে মেয়ের মধ্যে একটি রিলেশন গড়ে ওঠে। ব্যাপারটা এ পর্যন্ত এসে থামলে হয়তো অনেকেই তেমন কিছু মনে করতেন না। তবে, আপনার মনে রাখা দরকার, এটি ইন্টারনেট ও আকাশ সংস্কৃতির যুগ। সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। বাটনের এক চাপে যেখানে ইচ্ছে ঢুকে পড়া যায়, এমনকি নারী-পুরুষের বেড রুমেও। ফলত: বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রবল সহজাত আকর্ষণ, এন্টারটেইনমেন্ট শিল্পের নিরন্তর ‘ভালবাসা-ভালভাসা’ গুঞ্জরণ এবং ‘অজানাকে জানা,  অদেখাকে দেখার’ প্রচন্ড ঔৎসুক্য এই রিলেশনকে অনেক সময় এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যায় যাকে এ সমাজ কোনভাবেই অনুমোদন দিতে প্রস্তুত নয়। বিপত্তির শুরুটা হয় এখানেই। ছেলে-মেয়ে অভিভাবকদের অগোচরে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা এ সমাজ কেবল বিবাহিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রেই অনুমোদন করে। বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে, সমাজে লুকিয়ে-চুরিয়ে নানাবিধ যৌন উত্তেজক মাদকের প্রাপ্যতা, যা সহজেই তাদেরকে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যেতে সাহায্য করে। অনেক সময় এসব রিলেশন টেকে না। শুরু হয় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, হুমকি-ধামকি, মামলা-মোকাদ্দমা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা এমনকি আত্মহত্যা কিংবা হত্যা পর্যন্তও গড়ায়।

আমার মনে হয়, ওপরের আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সমস্যাটা যতটা না প্রশাসনিক বা বিচারিক, তার চেয়েও বেশি সামাজিক। এখানেই ফের চলে আসে সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্বের প্রশ্ন। ইতিপূর্বে যেমনটি আলোচনা করা হয়েছে, এ সমস্যার এমন অনেকগুলো দিক রয়েছে যেগুলোর সমাধান ব্যক্তি বা পরিবারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। ব্যক্তি/পরিবার বড় জোর গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করতে পারে। সমাধান করতে হলে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সমস্যার প্রতিটি দিক নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তবে, এটাও ঠিক, একটি সমাজে যখন কোন অনাচার বিস্তৃতি লাভ করে, তখন রাষ্ট্রযন্ত্রের একার পক্ষে খুব বেশি কিছু করা সম্ভব হয় না। কাজেই, রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রক ভূমিকার পাশাপাশি ব্যাপক পরিসরে সমাজ ও সাধারণ্যের ইতিবাচক অংশগ্রহণেই কেবল বিদ্যমান সমস্যার নিষ্পত্তি হতে পারে। তবে, নীতিনির্ধারনী পর্যায়ের উদ্যোগ ও সিদ্ধান্তসমূহ রাষ্ট্রের কাছ থেকেই আসতে হবে।
সবাই ভাল থাকুন।
লেখক: অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাবি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status