এক্সক্লুসিভ

রাতের সিলেটে ‘ভয়ঙ্কর’ ট্রাক

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৫ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ৭:৫১ অপরাহ্ন

রাতের সিলেটে ‘ভয়ঙ্কর’ হয়ে উঠেছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। প্রতিনিয়তই সিলেটে ট্রাক চাপায় মারা যাচ্ছে মানুষ। এই মুহূর্তে বিকল্পও নেই হাতে। বাইপাস সড়ক নেই একটিও। ফলে ট্রাক চলতে হবে নগরের ভেতর দিয়েই। এই অবস্থায় রাতে ট্রাক চলাচল বন্ধে আন্দোলনে নামছে নগরীর ৩টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ট্রাক চলাচল বন্ধে তারা বৃহৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে বুধবার রাতে বৈঠক করেছেন। ধীরে ধীরে মেগাসিটিতে রূপ নিচ্ছে সিলেট শহর। আগের চেয়ে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু পূর্বের ন্যায় পাথর ও বালুবাহী ট্রাক চলছে নগরের ভেতর দিয়ে। আগে সেটি দিনের বেলাও চলতো। পরবর্তীতে যানজট ও দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে চলাচল সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন রাত ৮টার পর থেকে চলাচল করছে ট্রাক। সিলেটের পাথর ভাণ্ডার বলে পরিচিত কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ। সঙ্গে আছে বিছনাকান্দিও। দুটি জায়গা দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করে। ট্রাক যাতায়াতের একমাত্র পথ বিমানবন্দর-আম্বরখানা সড়ক। বিকল্প দুটি বাইপাস সড়কের চিন্তাভাবনা অনেক আগেই ছিল। এ কারণে বিমানবন্দর থেকে তেমুখী ও ধুপাগুল ও হরিপুর পর্যন্ত দুটি বাইপাস নির্মাণের প্রস্তাবনাও ছিল। সর্বশেষ বিমানবন্দর রুটের এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বাদাঘাট বাইপাস সড়কটি চার লেনের করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সিলেট-১ আসনের এমপি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার এই প্রস্তাব নিয়ে ছেলেখেলা করে সড়ক বিভাগ নাকোচও করে দেয়। পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফের ডিও দিলে টনক নড়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের। তারা ইতিমধ্যে সার্ভে করেছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি সড়কটি চার লেন না দুই লেনের হবে। এ নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সিলেটের বাদাঘাট বাইপাস সড়ক হবেই। আর বাইপাস হলে ট্রাক ঢুকবে না নগরে। এই যখন অবস্থা তখন রাতের সিলেটে ট্রাকের বেপরোয়া গতি ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। গত এক সপ্তাহে মালবাহী ট্রাকের চাপায় মারা গেছেন তিন পথচারী। সবশেষ ঘটনা ঘটে নগরীর ফাজিলচিস্তে। সোমবার রাতে ট্রাকের চাপায় মারা গেছেন দুই বন্ধু। এর আগে চৌকিদেখি এলাকায় মারা গেছেন এক বিএনপি নেতা। দুটি দুর্ঘটনার পর সিলেটের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রতিবাদে কফিন মিছিল হয়েছে সিলেটে। ঘটনার পর রাতে পরপর চারটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়েছে। আরো ১২-১৩টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়েছে। এখনো ক্ষোভ কমছে না। বরং রাতে সিলেট নগরে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলেটের বিমানববন্দর সড়কে ট্রাক চাপায় এক বছরে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এক সপ্তাহ আগে রাতের বেলায় একই দিনে ট্রাক চাপায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর জখম হন। তারা এখনো আশঙ্কামুক্ত হতে পারেননি। দিনের বেলা নগরীতে ট্রাক চলাচল বন্ধ। শহরতলীর এয়ারপোর্ট এলাকায় দিনে আসা পাথর ও বালুবাহী ট্রাক আটকে দেয়া হয়। আর সিলেটের বাইরে থেকে আসা খালি ট্রাক তেমুখী, সুরমাগেট ও দক্ষিণ সুরমা বাইপাসে আটকে দেয়া হয়। এ কারণে রাত ৮টা হলেই এক সঙ্গে শত শত ট্রাক প্রবেশ করে সিলেট নগরে। আর সব ট্রাকই যাতায়াত করে আম্বরখানা দিয়েই। ফলে আম্বরখানার যানজট নিত্যসঙ্গী হয়ে পড়েছে। নানা কারণে সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি উপজেলার লাখ লাখ মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার রাস্তা এটি। আইসিটি পার্ক, পর্যটনস্পট সাদাপাথর, বিছনাকান্দি ও রাতারগুল থেকে বের হওয়ার পথও আম্বরখানা পয়েন্ট। এ কারণে এই সড়কের ওপর যাত্রীচাপ সবচেয়ে বেশি। তার ওপর ট্রাকের চলাচলে নাভিশ্বাস নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দীর্ঘদিন থেকে তারা ওই সড়কে ট্রাক চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন। রাতের ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্নের কারণে ঘুম হারাম এলাকাবাসীর। এর সঙ্গে এতে যোগ দিয়েছে দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনার কারণে বহু মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এদিকে বুধবার রাতে সিলেট সিটির ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ  চৌধুরী শামীম, ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ ও মহিলা কাউন্সিলর এডভোকেট কুলসুমা বেগম পপি। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ জানিয়েছেন, নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে আন্দোলন দরকার। নতুবা কারো টনক নড়বে না। তিনি বলেন- নগরীর ভেতর দিয়ে চলাচল বন্ধ করতে হবে। অতীতের মতো এই দাবিতে আবার আন্দোলন করতে হবে। এই তিনটি তাজা প্রাণ ঘাতক ট্রাক হত্যা করেছে। আগামীতে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয় সে জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে হবে। কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম জানিয়েছেন, বার বার আন্দোলন করেছি। জানি না কার ইশারায় আবারো নগরীতে ট্রাক চলে। তিনি বলেন,  দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করা হবে। প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের দাবি লিখিত ভাবে অবগত করা হবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে এমদাদ হোসেন চৌধুরী, হায়দার  মো. ফারুক হোসেন, এমএ মুগনি খোকা, মো. আলম বাদশা, শফিক মিয়া, বাচন মিয়া, স্বপন আহমদ, সুলতান আহমদ, সাহেদ আহমদ চমন প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status